ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দৃষ্টিনন্দন আল মদিনা জামে মসজিদ

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫১, ১৮ জুন ২০২৫

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দৃষ্টিনন্দন আল মদিনা জামে মসজিদ

ছবি: জনকণ্ঠ

পবিত্রতা, স্থাপত্য ও সৌন্দর্যের অপূর্ব সমন্বয়—মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার হরপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘আল মদিনা জামে মসজিদ’ যেন তাওহিদের সৌন্দর্যে স্থাপত্যের এক ইলহামি নিদর্শন। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি পথচারী ও যাত্রীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় প্রথম দর্শনেই।

২০১৫ সালের ১২ই জুন, এই পবিত্র মসজিদে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম জামাআতের মাধ্যমে শুরু হয় ইবাদতের ধারা। প্রায় ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত এই বিশাল মসজিদটি একসাথে ১৫০০ থেকে ২০০০ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা রেখে তৈরি করা হয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের জায়গা—যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০ জন নারী মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারেন।

এই জামে মসজিদটির সৌন্দর্য মূলত নিহিত এর স্থাপত্যশৈলীতে। মসজিদের ছাদে একটি বৃহৎ গম্বুজ, দুই পাশে সুউচ্চ দুটি মিনার, তার সঙ্গে রয়েছে ছাদের ওপর চারটি ক্ষুদ্র মিনার ও সম্মুখভাগে আরও দুটি মিনার—যা সম্মিলিতভাবে মসজিদের গঠনকে করে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন ও ভারসাম্যপূর্ণ।

প্রবেশপথের কাঠের দরজা দুটি স্থাপত্যরীতির ধারায় তৈরি। ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে দু’পাশে সিঁড়ি যা নারী মুসল্লিদের নির্দিষ্ট স্থানে উঠে যাওয়ার পথ। মূল নামাজের অংশে ঢুকতেই যে জিনিসটি হৃদয় ছুঁয়ে যায় তা হলো মিহরাবের সুসজ্জিত কারুকার্য ও ঝাড়বাতির জৌলুস। মসজিদের গম্বুজের নিচে স্থাপিত হয়েছে ২০টি জানালা, যা মসজিদের ভেতরে আলো-হাওয়ার প্রাকৃতিক প্রবাহ নিশ্চিত করে।

মসজিদটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি মাদ্রাসা, যেখানে অসংখ্য শিশু কুরআন ও প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে এলাকার হতদরিদ্র শিশুদের জন্য এই মাদ্রাসা এক আশীর্বাদস্বরূপ। এখানে বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নূরানী শিক্ষা নিচ্ছে। এই ইলমি কার্যক্রমের সঙ্গে ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেমসহ পাঁচজন ব্যক্তি নিয়মিতভাবে জড়িত রয়েছেন, যারা বিগত ছয় বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াতকারী অসংখ্য মানুষ এই মসজিদের পাশে থেমে নামাজ আদায় করেন। কেউ কেউ মুগ্ধ হয়ে মসজিদের ছবি তুলেন, কেউবা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। মসজিদের পিছন দিক দিয়ে চলে গেছে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের রেললাইন, যা মসজিদের নান্দনিকতাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।

শ্রীনগর ইউনিয়নের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই জামে মসজিদটি কেবল একটি ইবাদতগাহ নয়, বরং এটি স্থানীয় জনমানুষের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। আধুনিক কারুকার্য ও ঐতিহ্যবাহী ইসলামি স্থাপত্যের মিশ্রণে নির্মিত এই মসজিদটি একদিকে যেমন আল্লাহর ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমনি এটি পর্যটকদের চোখে সৌন্দর্যেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সাব্বির

×