
সংগৃহীত
সোনালি প্রাসাদে মোটা কার্পেটে আঁকা ছিল এক বর্ণিল বৃত্ত। চতুর্দিকে বসা সম্রাট আকবর ও তার নবরত্ন। মাঝখানে চলছিল এক খেলা ভাগ্যের, বুদ্ধির আর রাজকীয় আনন্দের খেলা। খেলা ছিল "পিচিচি"। আর সেই খেলা আজ, ১৪০০ বছর পরেও বেঁচে আছে আমাদের ঘরে, হাতে, মোবাইল স্ক্রিনে। নতুন নামে "লুডো"।
কেউ হারতে চায় না। কেউ “কাটছ ক্যান?” বলে অভিমান করে। আবার কেউ এক গুটি ঘরে ঢুকিয়ে বলে, “আজকের খেলাটা আমার!”এই যে এত আনন্দ, অভিমান আর চিৎকার ,সবকিছুর জন্ম কিন্তু এক রাজপ্রাসাদের উঠোনে!
শুরু হয়েছিল ভারতেই , খেলতেন রাজা নিজে খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে ভারতের রাজপরিবারগুলো Pachisi নামে এক খেলার প্রচলন শুরু করে। একে অনেকেই বলেন "লুডোর দাদু"। এটি ছিল বুদ্ধির খেলা, যেখানে ছকে আঁকা এক বোর্ডে গুটি চালিয়ে খেলোয়াড়েরা পৌঁছাত গন্তব্যে।
মজার বিষয় হলো, সম্রাট আকবর Pachisi খেলতেন জীবন্ত মানুষ দিয়ে,যাদের ব্যবহার করা হতো গুটির জায়গায়! প্রাসাদের মেঝেতেই আঁকা হতো খেলার ছক। সেই খেলাই সময়ের সঙ্গে রূপ নেয় "লুডো" নামে।
ব্রিটিশ টাচে জন্ম নেয় 'Ludo' ১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ এক ব্যক্তি "আলফ্রেড কলিয়ার" Pachisi-এর সরল সংস্করণ তৈরি করেন। চার রঙের গুটি, ছক্কা পেলে গুটি ওঠে, চারটি ঘরে ফেরানো মানেই জয়। এবং এর নাম দেওয়া হয়: "Ludo"। ল্যাটিন শব্দ "Ludus" যার মানে খেলা।
দ্রুতই ব্রিটেন, ইউরোপ, পরে পুরো বিশ্বে লুডো ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের প্রাচীন খেলাটি হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক এক আসক্তি!
প্রযুক্তির যুগে দ্বিতীয় জন্ম, লুডো যখন হারিয়ে যেতে বসেছিল পুরোনো বোর্ড আর গুটির ভাঁজে, তখন সে ফিরে এলো ডিজিটাল রূপে। মোবাইল গেম "Ludo King", "Ludo Star"যেন মহামারিকালেও ঘরে ঘরে ফিরিয়ে আনল একত্র হওয়ার পুরোনো আনন্দ। এক সময় যেখানে খেলা হতো পর্দায় আঁকা ঘরে, এখন সেটি হয় স্ক্রিনের বোর্ডে। কিন্তু খেলোয়াড়ের উচ্ছ্বাস একই রকম!
লুডো, কেবল খেলা নয়, সময়ের সেতুবন্ধন। লুডো একদিকে রাজকীয় অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়, আবার অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীর মানুষকে আনে একই টেবিলে।
নানার সঙ্গে নাতি, বাবা-মা ও সন্তান, বন্ধুদের রাত জাগা চিৎকার সবকিছু মিলিয়ে লুডো যেন হয়ে উঠেছে এক সময়-ভ্রমণকারী খেলা।
এক টুকরো বোর্ড আর চারটি রঙিন গুটি কখনও এত আনন্দ, এত ইতিহাস, এত সম্পর্ক তৈরি করতে পারে? লুডো পারে। এটা কেবল একটা খেলা নয়, এটা এক "জীবন্ত ঐতিহ্য", এক চিরন্তন গল্প যা এখনও প্রতিদিন আমাদের হাসায়, লড়ায়, আর একত্র করে।
হ্যাপী