
ছবি: সংগৃহীত
সন্তান লালন-পালনের কোনও নির্দিষ্ট নিয়মপুস্তক নেই। অভিভাবকত্ব একদিকে যেমন আনন্দের, তেমনি শেখারও—আর মাঝেমধ্যে কিছু ‘অজানা ভুল’-এরও। বাবা-মায়েরা অনেক সময়ই বুঝে উঠতে পারেন না যে, কিছু আচরণ বা অভ্যাস সন্তানের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নিচে এমন ৭টি সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো, যেগুলো আমাদের সমাজে প্রায়ই ঘটে, অথচ আমরা তা উপলব্ধিই করি না।
১. অন্যের সঙ্গে তুলনা করা
‘দেখো, ও কেমন শান্ত আর ভালো ছেলে!’—এ ধরনের বাক্য অনেকেই বলেন। কিন্তু এই তুলনাই সন্তানের আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়। নিজের উন্নতির চেয়ে তখন তার মনোযোগ চলে যায় প্রতিযোগিতায়। এমনকি সে যখন চেষ্টা করেও সফল হয় না, তখন মনে করে সে ‘অপর্যাপ্ত’।
২. সন্তানের কথা না শোনা
অনেক বাবা-মা মনে করেন, ‘বড়রা যা বলেন, সেটাই ঠিক। ছোটরা শুধু শুনবে’। কিন্তু শিশুরাও লক্ষ্য করে যখন কেউ সত্যিই তাদের কথা শোনে না। তাদের ছোট ছোট গল্প হয়তো বড়দের কাছে তুচ্ছ, কিন্তু তাদের কাছে তা মহার্ঘ্য। বারবার উপেক্ষা পেলে গড়ে ওঠে এক নীরব দূরত্ব।
৩. সব সমস্যার সমাধান করে ফেলা
প্রতিটা সমস্যায় সন্তানকে রক্ষা করতে ছুটে যাওয়া যেন এক প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি। কিন্তু প্রতিবার যদি বাবা-মা নিজেই সমাধান করে দেন, তাহলে শিশু শেখার সুযোগ পায় না। এতে একটা নীরব বার্তা যায়—‘তুমি পারবে না’।
৪. কড়া ও অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার
চাপ বা রাগের মুহূর্তে অনেক সময়ই বেরিয়ে যায়, ‘তুই তো কিছু শিখবি না’, ‘তুই অকর্মা’—এ রকম কথা। কিন্তু এই কথাগুলো শিশুদের হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে যায়। শাসন শেষ হলেও ওই নেতিবাচক শব্দগুলো থেকে যায় অনেকদিন।
৫. শুধুই পরীক্ষার নম্বরকে গুরুত্ব দেওয়া
অনেক বাবা-মা মনে করেন, ভালো নম্বরই সফলতার একমাত্র মাপকাঠি। কিন্তু সহানুভূতি, কল্পনাশক্তি বা সংকট মোকাবেলার ক্ষমতা তো রিপোর্ট কার্ডে লেখা থাকে না! নম্বরই যদি সব হয়, তাহলে পড়াশোনার আনন্দটাই মুছে যায়।
৬. নিজের ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ না করা
অনেকের ধারণা, সন্তানের কাছে ভুল স্বীকার করলে সম্মান কমে যায়। কিন্তু একটুখানি ‘সরি’ সম্পর্কের ভিত মজবুত করে। এতে শিশু শেখে যে, ভুল স্বীকার করা লজ্জার নয়—বরং তা গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাস গড়ে তোলে।
৭. নিখুঁত হওয়ার চাপ তৈরি করা
অনেক সময়ই না জেনেই বাবা-মা সন্তানদের ‘আইডিয়াল’ (নিখুঁত) বানাতে চান। ফলে শিশুদের ওপর তৈরি হয় নীরব চাপ—ভালো হতে হবে, ঠিকঠাক চলতে হবে, ভুল করা যাবে না। কিন্তু নিখুঁত হওয়া তো আসলে একটা মিথ। শিশুদেরও দরকার শেখার সুযোগ, ভুল করার স্বাধীনতা।
সন্তান মানুষ করার এই যাত্রায় ভুল হতেই পারে। কিন্তু নিজের আচরণ নিয়ে সচেতন থাকা, প্রশ্ন করা, শেখা—এটাই একজন সংবেদনশীল অভিভাবকের পরিচয়। কারণ দিন শেষে শিশুরা যা দেখে, তাই শেখে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব