
ছবি: সংগৃহীত
প্রেমে ক্লান্তি সত্যিই আছে, তবে পুরোনো প্রেমে ফেরা কি ঠিক? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন, ‘Sex and the City’-এর চরিত্র শার্লট ইয়র্কের মতো অনেকেই নিজেকে আবিষ্কার করেন প্রেমের হতাশার জগতে।
মেট্রো শহরে প্রেম-ভালোবাসা কঠিন, সেটা নিউইয়র্ক হোক বা নয়াদিল্লি। তাই যখন একের পর এক ডেট ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন শার্লটের সেই বিখ্যাত উক্তি, “আমি পনেরো বছর বয়স থেকে ডেট করছি। আমি ক্লান্ত। সে কোথায়?”। কথাটি বহু মানুষের মনের কথা হয়ে ওঠে।
বর্তমানে প্রেম খুঁজে পাওয়া সহজ। একটা সোয়াইপেই মিলতে পারে ম্যাচ। কিন্তু বারবার ‘তোমার প্রিয় রঙ কী?’ প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে যখন সত্যিকার সঙ্গী পাওয়া যায় না, তখন ক্লান্তি আসাটাই স্বাভাবিক।
জেনারেশন জেডও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৯% জেন জেড প্রেমিক-প্রেমিকা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারে মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন। তবে প্রশ্ন হলো, এই ক্লান্তির মুহূর্তে কি পুরোনো প্রেমিককে ফোন করা ঠিক? অথবা হঠাৎ করে দেখা করার ইচ্ছেটা ভুল?
অনেকে বলেন, ‘এক্স’ মানেই অতীত। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, মানুষ বদলায়। ২০২৪ সালের সিনেমা ‘Materialists’-এর শেষে যখন লুসি জনকে বেছে নেয়, তখন অনেকেই ভাবেন। “পুরোনো ভালোবাসা কি আবার নতুন করে শুরু করা যায়?”
‘মাইক্রোওয়েভ প্রেম’পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে ফিরে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্মৃতি, অভ্যস্ততা, সান্ত্বনা—এসব মানুষকে টেনে আনে পুরোনো সম্পর্কে। ভারতের ইনদোরের রাধিকা মোহতা, একজন রিলেশনশিপ কোচ, বলেন, “অনেক সময় মানুষ যখন নতুন সম্পর্ক গড়ার চেষ্টায় থাকেন কিন্তু নিজেকে দুর্বল মনে করেন, তখন পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যান।”
বিশেষ করে জেন জেড ও মিলেনিয়ালদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি, যাদের প্রেম ‘মাইক্রোওয়েভ প্রেম’ মানে দ্রুত উত্তপ্ত, দ্রুত শীতল হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে Medical News Today-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০% তরুণ-তরুণী অন্তত একবার ‘অন-অফ’ সম্পর্কে জড়িয়েছেন।
ফেরার সময় কখন?
রাধিকা বলেন, “এক্স মানেই এক্স কারণ রয়েছে।” তবে যদি মানুষটি সত্যি বদলায় এবং যেসব কারণে সম্পর্ক ভেঙেছিল সেগুলো ঠিক করার মতো হয়, তাহলে সুযোগ দেয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সম্পর্ক ভাঙার কারণ যদি সময়ের অভাব বা দূরে সরে যাওয়ার মতো বাস্তব কারণ হয়, আর এখন পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তাহলে একবার সুযোগ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি সম্পর্ক ভাঙার পেছনে থাকে প্রতারণা, মানসিক নির্যাতন, অসম্মান, তাহলে ফিরতে যাওয়াটাই ভুল। এমন ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্লক, ডিলিট, মিউট করে দূরে থাকাই শ্রেয়।
রাধিকা বলেন, “অনেকেই নিজের মনে সময়সীমা তৈরি করেন, যেমন ‘জন্মদিন পর্যন্ত কল না এলে আমি চলে যাব’। কিন্তু সত্যিকারের বিচ্ছেদ মানে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ, নয়তো আবার ঘুরে সেই একই সম্পর্কে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
বন্ধু থাকা যাবে কি? মুম্বাইয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট অ্যাবসি স্যাম বলেন, “বন্ধু থাকা সম্ভব, তবে রোমান্টিক আকর্ষণ, আশা বা আবেগ না থাকলেই কেবল সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, যদি এটা শুধুই অতীত আঁকড়ে ধরার একটি উপায় হয় বা বিচ্ছেদ কাটিয়ে ওঠার পরিবর্তে প্রতারণামূলক বন্ধুত্ব হয়, তাহলে তা ক্ষতিকর হতে পারে।
বন্ধু থাকলে কীভাবে?
- নিজ উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন: সত্যি কি আপনি বন্ধুত্ব চান, নাকি বিচ্ছেদ মানতে পারছেন না?
- সীমারেখা নির্ধারণ করুন: কী করবেন আর কী করবেন না, তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।
- মেনে নিন সব বন্ধুত্ব টিকবে না: কিছু সম্পর্ক অতীতেই থাকাই ভালো।
শহীদ