
ছবি: সংগৃহীত
পঞ্চগড় জেলার সদর, তেতুলিয়া ও বোদা উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে প্রায় ৩৩০ একরেরও বেশি অমীমাংশিত জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে ভারত। ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রকৌশল প্রযুক্তি প্রয়োগ করে নতুন করে নিরপেক্ষভাবে সীমান্ত এলাকায় জমির সুনির্দিষ্ট জরিপ চালানো হলে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান জমি বাংলাদেশের দখলে ফিরে আসতে পারে। এ জমি উদ্ধার করা গেলে অসংখ্য দুস্থ ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করাও সম্ভব হবে।
২০১৫ সালের সিটমহল বিনিময়ের পরও রয়ে গেছে অমীমাংশিত জমি
সূত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি সিটমহল (১৭,১৬০ একর) এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি সিটমহল (৭,১১০ একর) বিনিময় হয়।
তবে সীমান্ত এলাকার লোকজনের অভিযোগ, ভারত ওই বিনিময়ে জমির দিক থেকে লাভবান না হওয়ায়, পরবর্তীতে বিভিন্ন অমীমাংশিত জমি দখল করে নেয়। বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে বিএসএফ ধীরে ধীরে এসব জমি দখলে নেয়, আর ২০১৫ সালে সিটমহল বিনিময়ের সময় ভারতের পক্ষে পিলার স্থাপন ও দখল চূড়ান্ত করা হয়।
কোন কোন এলাকায় জমি দখলে রেখেছে ভারত?
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের তথ্যমতে, তেতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাষা ইউনিয়ন, ও বোদা উপজেলার বড়শী ইউনিয়নে বড় অংশের জমি ভারতের দখলে রয়েছে।
তেতুলিয়া: বাংলাবান্ধা থেকে দর্জিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫০ একর জমি
সদর: সিংপাড়া ও ক্ষুদিপাড়ায় ৪৮৭ একর জমি
বোদা: নাওতারি নবাবগঞ্জ এলাকায় ৯৩ একর জমি
এছাড়াও ভারতের ফুলবাড়ি, গোয়ালগঞ্জ, নয়াবাড়ি, সিমেট্রি, হাফতিয়াগঞ্জ ও সিঙ্গিমারি ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা এসব জমিতে পিলার স্থাপন, কাঁটাতারের বেড়া ও পোস্ট নির্মাণ করেছে বলে জানা গেছে।
নদীভাঙন ও নোম্যানস ল্যান্ডে চাষে বাধা
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী মহানন্দা, করতোয়া ও সুই নদীর তীরবর্তী জমিতে বিএসএফ বাংলাদেশি কৃষকদের চাষ করতে দিচ্ছে না। মাঝে মাঝে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া, মারধর ও গুলি করে হত্যার ঘটনাও ঘটছে।
সীমান্তবর্তী কাসিমগঞ্জ এলাকায় ৩৭০ নম্বর পিলারের পাশে ১৫০ একর জমি দখল নিয়ে উত্তেজনার ঘটনা ঘটে, যা দীর্ঘ ৫৬ বছর পর বিডিআর পুনরুদ্ধার করে।
ভূমি অফিসের অসহায়ত্ব ও জরিপের দাবি
বড়শী ইউনিয়নের ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৯৩ একরের মধ্যে ৭০ একর জমি স্থানীয়দের মালিকানায় থাকলেও, ২০ একর জমির দলিলপত্র অনুপস্থিত। ভারত সেখানে চা বাগান স্থাপন করে দখল নিশ্চিত করেছে।
ভূমি অফিস, বিজিবি, বিএসএফ, যৌথ বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে নতুন জরিপ ও জমির সীমারেখা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সীমান্তবাসীর অভিযোগ, বিগত ১৫ বছর ধরে সরকার ভারতের অনুকূলে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। জমি হারালেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
তারা বলছেন, এখন আর বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চলবে না, ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সরকারের দৃঢ় অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন।
সূত্র: https://youtu.be/swu1bumyVi8?si=tvqfnfpim4_eWPKL
আঁখি