
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিদিন ব্যবহার্য প্লাস্টিকের রাসায়নিক উপাদান আমাদের দেহের স্বাভাবিক ঘুম-জাগরণ চক্র ও সার্কাডিয়ান রিদমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে—একইভাবে যেমন ক্যাফেইন কাজ করে। ফলে ঘুমের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্লাস্টিক-রাসায়নিক গবেষক মার্টিন ওয়াগনারের নেতৃত্বে গবেষকদল এই গবেষণা করেন। গবেষণাটি সম্প্রতি Environmental International জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘরের জিনিসই বিপদের উৎস
গবেষকরা দুটি সাধারণ প্লাস্টিক দ্রব্য—একটি পিভিসি মেডিকেল ফিডিং টিউব এবং একটি পলিইউরেথিন হাইড্রেশন পাউচ (দীর্ঘপথ দৌড়বিদদের ব্যবহৃত)—থেকে রাসায়নিক আলাদা করে পরীক্ষা করেন। উল্লেখ্য, পিভিসি ও পলিইউরেথিন আমাদের চারপাশে খেলনা, খাবারের প্যাকেট, আসবাবপত্র ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, এসব প্লাস্টিক থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ কোষের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি—অর্থাৎ সার্কাডিয়ান রিদমে—ব্যাঘাত ঘটায়, কখনো কখনো ১৭ মিনিট পর্যন্ত দেহের স্বাভাবিক চক্রকে পিছিয়ে দেয়।
সার্কাডিয়ান রিদম মানে কী?
সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ি আমাদের মস্তিষ্কে থাকা একটি জৈব ঘড়ি যা আলো-অন্ধকারের ভিত্তিতে দেহের ঘুম ও সজাগ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। এই রিদমে কোনো পরিবর্তন হলে স্থূলতা, ডিমেনশিয়া, হৃদরোগসহ নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।
ক্যাফেইনের মতোই প্রভাব ফেলে প্লাস্টিকের রাসায়নিক
এই গবেষণায় দেখা গেছে, পিভিসি জাতীয় প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টর নামক কোষ উপাদানে প্রভাব ফেলে—যেটি আমাদের ঘুম-জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যাফেইন যেমন অ্যাডেনোসিন রিসেপ্টরকে বন্ধ করে দেয় এবং ঘুম কমিয়ে দেয়, তেমনি প্লাস্টিকের রাসায়নিকও সেই রিসেপ্টরের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, ঘুমকে বিলম্বিত করে।
গবেষণার সহলেখক ওয়াগনার বলেন, ‘এই অভ্যন্তরীণ ঘড়িটি খুবই সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। ১৫-১৭ মিনিটের সামান্য পরিবর্তনকেও অবহেলা করা উচিত নয়।’
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি ছিল in vitro গবেষণা, অর্থাৎ এটি মানুষের কোষে পরীক্ষাগারে পরিচালিত হয়েছে। এখন জেব্রাফিশ-এর ওপর গবেষণা হবে, যাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম অনেকটা মানুষের মতোই।
এছাড়াও বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন কোন নির্দিষ্ট রাসায়নিকগুলো এই প্রভাব ফেলছে। কারণ পিভিসি ও অন্যান্য প্লাস্টিকে প্রায় ৮,০০০ ধরনের উপাদান থাকতে পারে—অনেক সময় কিছু রাসায়নিক ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, বরং উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবেই যুক্ত হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
রাকিব