
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান আবারও সংবেদনশীল একটি সামাজিক বিষয়ের ওপর কথা বলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সন্তান দত্তক নেওয়া নিয়ে সমাজে প্রচলিত রক্ষণশীল ধারণা ও সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে জয়া বলেন, "সবাইকে বা সবসময় বায়োলজিক্যাল মা হতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। তারপরেও আমাদের সমাজ এখনও এই বিষয়টিকে ততটা উদার চোখে দেখে না। রক্ত, বংশ নিয়ে ভাবে।"
তিনি বলেন, ভালোবাসার গভীরতা কখনো রক্তের সম্পর্ক দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। একজন মানুষ যদি মা হতে চান, তিনি সেটা সন্তান ধারণ করেই করতে পারেন, আবার দত্তকের মাধ্যমেও তার মাতৃত্ববোধ পূর্ণতা পেতে পারে।
ওপার বাংলায় ‘ডিয়ার মা’ সিনেমা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। যেখানে সন্তান দত্তক নেওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
ব্যক্তিজীবনেও সন্তান দত্তক নেওয়া প্রসঙ্গে জয়ার ভাবনা কি? সম্প্রতি আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই প্রশ্নেরই উত্তরেই এই কথা বলেন তিনি।
তিনি জানান, পরিচালক এই ছবির মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন—রক্ত নয়, ভালোবাসা-ই সম্পর্কের মূল ভিত্তি।
পরিচালকের বক্তব্য, ভালোবাসা রক্তের সম্পর্কের থেকেও গাঢ়। কী করে সেটা বলছি, সেটাই দর্শক পর্দায় দেখবেন। আপনিই বলুন না, দত্তক নেওয়া কি এখনকার দিনে কোনও বড় ব্যাপার? যিনি সন্তান ধারণ করতে চান তিনি সেটাই করবেন। তারপরেও যদি কেউ সন্তান চান তিনি দত্তকের মাধ্যমে সেই ইচ্ছাপূরণ করতে পারেন। আজকের দায়িত্বশীল নাগরিকের সেটাই করা উচিত। বহু সন্তান আছে যারা ঘর পায় না, মা-বাবা পায় না। ওদের আপন করে নিলে আমাদের সন্তানের সঙ্গে ওই মানুষগুলো মিলে যাবে। সমাজে সমানাধিকার বাড়বে।
ওই সাক্ষাৎকারে ব্যক্তি সম্পর্কে জটিলতা নিয়েও কথা বলেছেন জয়া। অভিনেত্রী বলেন, ‘এখন তো কেউ রিলেশনশিপেই যায় না! সিচুয়েশনশিপ... আর কী কী যেন আছে? এসব ভাবনায় সব কিছুই আছে শুধু রিলেশনশিপটাই নেই।’
তাহলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটাই কী পুরোনো হয়ে গেল? জবাবে জয়া বলেন, ‘ওগুলো তো ‘ওল্ড স্কুল’। যাইহোক, এই জিনিসগুলো আসবে। আবার ঘুরে আসবে। তবে পৃথিবীতে যতরকম মানুষ ততরকম সম্পর্ক। কোনো সম্পর্কই কোনো সম্পর্কের সঙ্গে মেলে না। আমার প্রত্যেকটি ফেলে আসা সম্পর্কও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেই সম্পর্কগুলো নিয়েই আজকের আমি। সব ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায় না। ভুলটুকুও তো আমার! সেটা মেনে সামনের দিকে চলা।’
জয়া তার মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা বললেও তা প্রকাশে এক ধরনের জড়তা অনুভব করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসারে আমাদের মা সূর্য। মায়ের সংসারে শুধুই যে সন্তানে সীমাবদ্ধ তা নয়। পোষ্যরা আছে, পরিচারিকারা আছেন এরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
জয়ার কথায়, ‘মাকে কখনো বলিনি, আমি তোমাকে ভালবাসি। মাকে ডেকে কখনও আবার দুঃখপ্রকাশও করিনি। কেমন যেন লাগে! অথচ পৃথিবীর সকলের কাছে বলতে পারি ‘সরি’।’
সানজানা