ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

পুরুষদের অস্তিত্ব কি বিলুপ্তির পথে? নতুন গবেষণা যা বলছে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১৮ জুন ২০২৫

পুরুষদের অস্তিত্ব কি বিলুপ্তির পথে? নতুন গবেষণা যা বলছে

ছবি: সংগৃহীত

স্কুলের জীববিজ্ঞান বইয়ে আমরা শিখি—দুইটি X ক্রোমোজম মানে নারী, আর X ও Y থাকলে পুরুষ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষের পরিচয় বহনকারী সেই Y ক্রোমোজম হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, আর এর প্রভাব এখনই পুরুষদের স্বাস্থ্যে পড়ছে।

প্রায় ৩০ কোটি বছর ধরে এই Y ক্রোমোজম পুরুষত্ব গঠনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি তার অনেক জিন হারিয়েছে, এবং গণনার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে, আগামী ১ কোটি ১০ লক্ষ বছরের মধ্যে এটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

Y ক্রোমোজমে মাত্র ৫৫টি জিন থাকে, যেখানে X ক্রোমোজমে প্রায় ৯০০টি। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি মিলিয়ন বছরে Y ক্রোমোজম ৫টি করে জিন হারিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই হার ধরে হিসাব করে বলছেন, Y একসময় পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।

না, এমনটা নয়। গবেষকরা জাপানের স্পাইনি ইঁদুরে (Japanese spiny rat) একটি আকর্ষণীয় জিনগত পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন। এই ইঁদুরের শরীরে Y না থাকলেও পুরুষ বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। কারণ, SOX9 নামক একটি জিনকে সক্রিয় করার জন্য সেখানে বিকল্প একটি জিন রয়েছে, যা পুরুষত্ব নিশ্চিত করে।

এই উদাহরণ প্রমাণ করে, ভবিষ্যতে মানুষের দেহেও যদি Y ক্রোমোজম একদিন হারিয়েও যায়, তাহলে প্রকৃতি হয়তো নিজেই বিকল্প পথ বের করে নেবে।

বয়স ৫০ পেরোতেই পুরুষদের শরীরের কিছু কোষে Y ক্রোমোজম হারাতে থাকে। একে বলে "mosaic loss of Y"। ৮০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে ৪০ শতাংশের রক্তকোষে এই সমস্যা থাকে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সুইডিশ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী ১,১৫৩ জন পুরুষের ওপর গবেষণা চালান। তারা লক্ষ্য করেন—যেসব পুরুষের রক্তকোষ থেকে Y ক্রোমোজম হারিয়ে গেছে (যাকে বলা হয় mosaic loss of Y)—তাদের স্বাস্থ্য অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

যেসব পুরুষের রক্তে Y ক্রোমোজম কম, তারা গড়ে ৫.৫ বছর আগে মারা যান এবং তাদের মধ্যে হার্ট ডিজিজ, ক্যানসার এবং আলঝেইমারের ঝুঁকি অনেক বেশি।

ইঁদুরের ওপর গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, Y ক্রোমোজম ছাড়া রক্তকোষ দিলে হৃদযন্ত্রে ফাইব্রোসিস হয় এবং মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়। এই Y হারানো কোনো সাধারণ ঘটনা নয়; এটি পুরুষ স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।

Y ক্রোমোজমে থাকা UTY নামের একটি জিন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর কাজ করে। এটি না থাকলে শরীরের কিছু প্রতিরক্ষা কোষ দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ক্যানসার সহজে ছড়ায়। তবে আশার কথা, ক্যানসারের কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিতে—যেমন checkpoint inhibitors—Y না থাকলে ওষুধ বেশি কার্যকর হতে পারে।

ধূমপান, দূষিত বাতাস, এবং রাসায়নিক পদার্থ Y ক্রোমোজম ক্ষয়ের গতি বাড়ায়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা, নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেরেনিয়ান ধাঁচের খাবার খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত ঘুম Y সংরক্ষণে সহায়ক হতে পারে।

এখন বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, ইঁদুরের ওপর পরীক্ষিত কিছু অ্যান্টিফাইব্রোটিক ওষুধ মানুষের হৃদযন্ত্র রক্ষা করতে ব্যবহার করা যায় কি না। ভবিষ্যতে হয়তো একজন পুরুষের শারীরিক পরীক্ষায় ‘Y-লস স্কোর’ও দেখা হবে।

যদিও দীর্ঘমেয়াদে Y হারিয়ে যাওয়া মানে পুরুষ প্রজাতির বিবর্তনমূলক পরিবর্তন, কিন্তু বর্তমানে এটি পুরুষদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক সংকেত।

মুমু ২

×