ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

পাতা ফাঁদে ইসরাইল নিজেই পড়েছে, বিপর্যয়ের মুখে দেশটি!

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৮ জুন ২০২৫

পাতা ফাঁদে ইসরাইল নিজেই পড়েছে,  বিপর্যয়ের মুখে দেশটি!

ছবি: সংগৃহিত

বিশ্বখ্যাত চিন্তাবিদ নোম চমস্কি বহু বছর ধরেই রাজনৈতিক যুক্তিবোধহীন ক্ষমতার প্রয়োগ এবং “আত্মরক্ষা” বা “নিরোধক কৌশল”-এর আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী বয়ান সম্পর্কে সতর্ক করে এসেছেন। বাস্তবে, ইসরাইল এখন ঠিক সেই জালে জড়িয়ে পড়েছে।

গত শুক্রবার সকালে ইরানের আকস্মিক পাল্টা আক্রমণের পর যেই বিজয়োল্লাস শুরু হয়েছিল, তা এখন ইসরাইলের জন্য ভয়াবহ মূল্য টানছে।

ওয়াশিংটনের মদদপুষ্ট ইসরাইল ভেবেছিল, ইরানের মতো একটি আঞ্চলিক রাষ্ট্রের ওপর হামলা চালিয়ে তারা নতুন করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল এবং অবাক করা। একের পর এক চমকে দিচ্ছে ইরান, যার জবাব খুঁজে পাচ্ছে না ইসরাইল।

গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন ও ইয়েমেনে ব্যর্থতার পর এখন ইরানের সঙ্গে লড়াই আরও ভয়াবহ ও জটিল হয়ে উঠেছে।
ইসরাইলি এবং প্রো-ইসরায়েল আরব গণমাধ্যমগুলো এই আগ্রাসনকে "অক্টোবর ৭, ২০২৩"-এর অপমানজনক ঘটনার বদলা হিসেবে উপস্থাপন করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কোনও বিজয় নয়—বরং এক গভীর বিপদের দিকে পিছলে যাওয়া।

বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ইরানি কৌশলগত ধৈর্য আর ইসরাইল-আমেরিকার আত্মঅহংকারের মূল পার্থক্য হলো—ইরান পরিণামের কথা ভাবে, আর ইসরাইল ক্ষণিকের গৌরবে মত্ত হয়ে পরে অপমানের ইতিহাসে নাম লেখায়।

ইরানকে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র ভাবা ভুল; বরং এটি এক ঐতিহাসিক সভ্যতা—যার রয়েছে সাংস্কৃতিক, দার্শনিক, সামরিক, আদর্শিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইরানের রয়েছে যুদ্ধের দীর্ঘ স্মৃতি ও প্রস্তুতি।

ইসরাইলে হামলার পর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ঘরোয়া ফ্রন্টে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হারেৎজের গোয়েন্দা বিশ্লেষক ইয়োসি মেলমান জানান, অবকাঠামোগত ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে এখন তেলআবিব চরম মূল্য দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “ভিয়েতনাম, ইউক্রেন, গাজা, লেবাননের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—যেখানে ঐতিহাসিক শিকড়সহ একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র টিকে থাকে, সেখানে ইসরাইলি জনগণের ধৈর্যের ওপর ভরসা করা যায় না।”

তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধেও ইরান আট বছর ধরে ধৈর্যের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, এমনকি সে সময়েই গড়ে তোলে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নীতিমালা।

মেলমান সতর্ক করেন, এই যুদ্ধ হয়তো এক অবসানহীন ক্ষয়যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, যার ফলাফল হতে পারে বৈশ্বিক তেল সংকট—যা চীনসহ বড় শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ টানতে পারে।

তিনি বলেন, “শুক্রবার আমি নিজেই প্রশ্ন করেছি—ইরানের সঙ্গে যুদ্ধটা আদৌ দরকার ছিল কি? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শিয়ারা কষ্ট সহ্য করতে জানে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চাপ দিয়ে এই উন্মাদনা থামাতে হবে। নইলে, শেষমেশ আমাদেরই যুদ্ধবিরতির ভিক্ষা চাইতে হবে—যা ইরান ফিরিয়ে দিতে পারে।”

আরেক বিশ্লেষক, মাইকেল মিলস্টেইন, (ডেয়ান সেন্টার, তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, “পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের মতো আবেগতাড়িত স্লোগান ভবিষ্যৎ বিপদ ডেকে আনতে পারে। ইরান শুধু প্রতিরোধ করেই থামবে না, বরং কার্যকর ভারসাম্য তৈরি করবে।”

অন্যদিকে নাচমান শাই, (হিব্রু ইউনিয়ন কলেজ, জেরুজালেম) বলেন, “ইসরাইলি সমাজের ভাঙন ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। বাহ্যিক সাফল্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ পতন রোধ করা যাবে না।”

সবশেষে, ইসরাইলি বর্ষীয়ান সাংবাদিক নাহুম বারনিয়া ইয়েদিয়োথ আহরোনোথ-এ লেখেন:
“যুদ্ধ শুরু হয় বিজয়ের উল্লাস দিয়ে, কিন্তু সেই উল্লাস দ্রুতই মিলিয়ে যায়। তারপর কেবল যুদ্ধই থেকে যায়।”


ইসরাইল যদি সত্যিই ভেবেছে—শক্তি দিয়ে আঞ্চলিক কাঠামো পুনর্গঠন সম্ভব, তবে তা নিছক মূর্খতা। নোম চমস্কির কথায়: যখন কেউ প্রতিপক্ষের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা উপেক্ষা করে কেবল প্রযুক্তির গর্বে সিদ্ধান্ত নেয়—সে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনে।

সূত্র: তেহরান টাইমস্

শিহাব

×