ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইনেমুরি: জাপানি অদ্ভুত ঘুমের সংস্কৃতি কি কর্মদক্ষতা বাড়ায়?

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৪, ১৮ জুন ২০২৫

ইনেমুরি: জাপানি অদ্ভুত ঘুমের সংস্কৃতি কি কর্মদক্ষতা বাড়ায়?

ছবি: প্রতীকী

কাজের ফাঁকে একটু চোখ লেগে গেলে সেটা কি অলসতার নিদর্শন? নাকি এটা হতে পারে আপনার কর্মদক্ষতা বাড়ানোর চাবিকাঠি? জাপানে এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই ভিন্ন। সেখানে ‘ইনেমুরি’—অর্থাৎ ‘ঘুমিয়ে থেকেও উপস্থিত থাকা’—একটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্কৃতি। অফিস, ট্রেন, এমনকি মিটিং চলাকালেও কেউ যদি চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমিয়ে নেয়, তা সেখানে অলসতা নয়, বরং কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ বলেই বিবেচিত।

এই ইনেমুরি শুধু বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নয়, বরং এটি আজকের আধুনিক, কর্মচাপপূর্ণ জীবনে এক ধরনের কার্যকর ‘প্রোডাক্টিভিটি টুল’। চলুন দেখে নেওয়া যাক—কীভাবে ইনেমুরি আমাদের কর্মদক্ষতা, মানসিক স্বাস্থ‍্য এবং সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

ইনেমুরির ১০টি স্বাস্থ্য ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিকারী উপকারিতা:

১. মনোযোগ ও মানসিক স্বচ্ছতা বাড়ায়

মাত্র ১০–২০ মিনিটের ছোট্ট এক ঘুম মস্তিষ্ককে ‘রিবুট’ করতে সাহায্য করে। এতে মনোযোগ ফিরে আসে, ক্লান্তি কমে, এবং দীর্ঘ সময় কাজের পর তৈরি হওয়া ‘কগনিটিভ ফগ’ দূর হয়।

২. সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানে সহায়ক

মস্তিষ্ক ক্লান্ত হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়। ইনেমুরি প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে (মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্র) বিশ্রাম দেয়, যার ফলে সিদ্ধান্ত হয় আরও চিন্তাপূর্ণ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ।

৩. স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা উন্নত করে

এই ছোট্ট ঘুমটিই নতুন তথ্য গ্রহণের পর তা দীর্ঘমেয়াদে ধারণ করতে সাহায্য করে। ইনেমুরি কার্যত আপনার মস্তিষ্কের ‘সেভ বাটন’ হিসেবে কাজ করে।

৪. স্ট্রেস ও বার্নআউট কমায়

চাপের সময়ে ঘুম স্বাভাবিক উপশম। ইনেমুরি কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে কর্মীরা আরও শান্ত ও স্থিতিশীল হয়ে কাজে ফিরতে পারেন।

৫. আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ঘুমের অভাবে মানুষ সহজেই ক্ষিপ্ত বা বিরক্ত হয়ে পড়ে। ইনেমুরি মস্তিষ্কের সেই অঞ্চলগুলো পুনরুজ্জীবিত করে, যেগুলো সহানুভূতি, ধৈর্য এবং সামাজিক বোঝাপড়ার সঙ্গে যুক্ত।

৬. ওভারটাইম না করেই উৎপাদনশীলতা বাড়ায়

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করার বদলে, ইনেমুরি আপনাকে ‘স্মার্ট ওয়ার্কিং’-এ সহায়তা করে। এতে প্রতিঘণ্টায় কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং কম সময়ে বেশি কাজ সম্পন্ন হয়।

৭. বিশ্রামের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে

‘ঘুম মানেই অলসতা’—এই ধারণা ভাঙে ইনেমুরি। বরং এটি বিশ্রামকে একটি দায়িত্বশীল অভ্যাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

৮. শরীরের একঘেয়েমিতা দূর করে

এটি বুঝতে সাহায্য করে যে, কর্মজীবনের বাস্তবতা হলো—কোনো মানুষই একটানা চাপ নিতে পারে না। তাই নিজেকে একটু বিশ্রাম দেওয়াও দায়িত্বশীলতার অংশ।

৯. ভুল ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমায়

অবসন্নতা অনেক সময় মারাত্মক ভুল বা দুর্ঘটনার কারণ হয়। মাত্র ১৫ মিনিটের ইনেমুরি তা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—বিশেষত চিকিৎসা, পরিবহন কিংবা ডিজাইন সংক্রান্ত কাজে।

১০. সৃজনশীলতা ও নতুন ভাবনার জন্ম দেয়

ঘুম থেকে ওঠার পর সেই আধা-জাগ্রত অবস্থাই অনেক সময় নতুন আইডিয়ার উত্স হয়। অনেকেই ইনেমুরির পর ‘ইউরেকা মোমেন্ট’-এর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এই সংস্কৃতির প্রয়োগ কতটা সম্ভব?

বাংলাদেশের কর্মসংস্কৃতিতে এখনো ‘ঘুম মানেই অলসতা’ ধারণাটি প্রবল। তবে কাজের চাপ, কর্মক্ষয় এবং মানসিক অবসাদ যখন বেড়েই চলেছে, তখন ইনেমুরির মতো বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ও কার্যকর ঘুম-সংস্কৃতি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

সতর্কতা: এই প্রতিবেদনটি সাধারণ তথ্যভিত্তিক। স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×