
ছবি: সংগৃহীত
আমার ছোটবেলা কেটেছে রান্নাঘরের কাউন্টারে একটি ভাতের কুকার এবং রান্নাঘরের প্যান্ট্রিতে আমার সমান বড় একটি চালের বস্তার পাশে। ভাত ছিল আমাদের প্রধান কার্বোহাইড্রেট। যার চারপাশে গোটা খাবার আবর্তিত হতো। ফলে বেঁচে যাওয়া ভাতও হতো প্রায় নিয়মিত ঘটনা।
আমার মা সেই বেঁচে যাওয়া ভাত দিয়েই বানাতেন কিমচি ফ্রাইড রাইস, অথবা একক পরিবেশনের ছোট কন্টেইনারে রেখে দিতেন ফ্রিজে যা পরদিন মাইক্রোওয়েভে গরম করে খাওয়া যেত।
তবে আরও বেশি যেটা করতেন, তা হলো সেই ভাত দিয়েই বানাতেন নূরুঙ্গি এক ধরনের কুড়মুড়ে ভাজা ভাতের চিপস।
মানুষ ভুলে যায় যে ভাত কেবল একটি সাদা ক্যানভাস নয়; এর নিজস্ব স্বাদও আছে। হোক সেটা জ্যাসমিন, বাসমতি, সুসি রাইস অথবা পরিবারের পছন্দের অন্য কোনো ধরণ। আর সেই স্বাদ সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় যদি ভাতটা একটু পোড়ানো বা ঝলসানো হয়।
বিশ্বজুড়ে এই ঝলসানো ভাতের নানা নাম আছে। স্পেনের পায়েল্লার তলায় যেটা তৈরি হয়, তাকে বলে 'সোকারাট', ইরানে বলে 'তাহদিগ'। অনেক সময় কোনো তেল ছাড়াই শুধু পাত্রের তলায় স্বাভাবিকভাবে এই স্তরটি তৈরি হয়, আর সেখানেই ধরা পড়ে চালের প্রাকৃতিক মিষ্টতা।
‘নুনার আইসক্রিম’-এর হান্না বে এই স্বাদ নিয়েই বানিয়েছেন বিশেষ আইসক্রিম। আবার কোরিয়ান রেস্টুরেন্ট চো দাং গোল-এ খেলে আপনি দুইটি উপহার পাবেন। প্রথমত, পারফেক্ট স্টিমড হোয়াইট রাইস; দ্বিতীয়ত, চায়ের ছোঁয়ায় তলায় লেগে থাকা বাদামি নূরুঙ্গি।
বাসায় নূরুঙ্গি তৈরি করাও সহজ। একটি শুকনো ননস্টিক প্যানে আধা ইঞ্চি পুরু করে তাজা বা আগের দিনের রান্না করা ভাত পাতুন। এক টেবিল চামচ পানি ছিটিয়ে দিন ভাতের ওপর। মাঝারি আঁচে ১৫-২০ মিনিট রান্না করুন। যতক্ষণ না নিচের দিকটা বাদামি হয়ে উঠে আসে নিজে থেকেই। তখন পুরোটা প্যানে নাড়ালে এটা প্যানকেকের মতো ঘুরে বেড়াবে, গন্ধ হবে টোস্ট করা চালের মতো। একটা বড় চামচ দিয়ে বা একটু সাহস করে প্যান নেড়ে এটাকে উল্টে দিন। আরও ৫ মিনিট ভাজুন উল্টো পাশে। যত বেশি ভাজবেন, ততই শুকনো হবে ভিতরটা আর বাড়বে কুড়মুড়ে ভাব।
আমার পছন্দ হচ্ছে ভেতরে হালকা নরম রেখে বাইরেরটা কুড়মুড়ে করা। দুই জগতের সেরা অংশ। তবে মা একেবারে শুকিয়ে নিতেন, তারপর একটু চিনি ছিটিয়ে রাত ১২টার টিভি স্ন্যাক বানিয়ে দিতেন।
আমার মতে, নূরুঙ্গির আসল স্বাদ পাওয়া যায় যখন এটি পরিবেশিত হয় প্রিয় কোরিয়ান বানচান (সাইড ডিশ) এর সাথে। একটি বাটিতে নূরুঙ্গি ভেঙে নিয়ে তার ওপর গরম পানি ঢেলে একটু নরম করে নিন। এরপর খেতে থাকুন পাশে রেখে, আর বাকি গরম চা শেষ করুন। এক স্বাদের ওপর আরেক স্বাদের আনন্দ।
শহীদ