ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

জীবন গঠনে পিতার শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে ৯টি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৮ জুন ২০২৫

জীবন গঠনে পিতার শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে ৯টি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত।

শিশুর আবেগীয়, বৌদ্ধিক ও সামাজিক বিকাশে বাবার ভূমিকা অপরিহার্য হলেও তা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। তবে সাম্প্রতিক একাধিক মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবারা শুধু সন্তানদের বড় করে তোলার অংশীদারই নন—তাঁদের উপস্থিতি ও সম্পর্ক সন্তানদের আত্মবিশ্বাস, প্রেম-সম্পর্ক, মানসিক স্বাস্থ্য এমনকি শিক্ষাগত অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। নিচে এমন ৯টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো—

১. বাবারা ছেলেদের রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেন।
‘Evolutionary Psychological Science’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ছেলেরা তাঁদের বাবাকে যদি শৈশবে আবেগপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হিসেবে মনে করেন, তাহলে তারা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কের প্রতি আগ্রহী হন। অর্থাৎ, শুধু বাবার উপস্থিতি নয়, বরং আবেগী সম্পৃক্ততা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২. স্টেপফাদার হলেও কাছাকাছি থাকা আবেগী বন্ধন তৈরি করে।
‘Human Nature’ নামক গবেষণায় দেখা যায়, জেনেটিক সম্পর্ক ছাড়াও যেসব সৎবাবা সন্তানদের সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাস করেন, তারা পরবর্তীতে আবেগিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে বেশি আগ্রহী হন। গবেষণাটি বোঝায়—প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মধ্য দিয়েই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

৩. বাবার ভূমিকার ইচ্ছা পুরুষদের আকর্ষণীয় করে তোলে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষেরা বাবা হতে চান বলে জানান, তাদের দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য নারীরা বেশি পছন্দ করেন। পূর্বের সম্পর্কের অভিজ্ঞতাও পুরুষদের আকর্ষণীয় করে তোলে। এতে বোঝা যায়, বাবা হওয়ার ইচ্ছাও সম্পর্কের সম্ভাবনাকে বাড়ায়।

৪. খারাপ পিতা-পুত্র সম্পর্ক শরীর নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায়।
‘Personality and Individual Differences’ নামক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবার সঙ্গে আবেগী বিচ্ছিন্নতা থাকা ছেলেরা শরীরের গঠন নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ (muscle dysmorphia) ভোগে। আত্মসম্মানবোধ কম থাকায় তারা বাইরের প্রশংসার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

৫. দরিদ্র পরিবারে পিতার উপস্থিতি শিশুর উন্নয়নে সহায়ক।
কেনিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবারা যদি সংসারের সিদ্ধান্তে অংশ নেন ও মাকে মানসিকভাবে সহায়তা দেন, তাহলে শিশুদের বিকাশের ফলাফল ভালো হয়। এটি মা-বাবার সম্মিলিত সহায়তার ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে।

৬. গণিতভীতি কমাতে বাবার আবেগী বন্ধন কার্যকর।
‘Learning and Individual Differences’ গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব শিশু বাবার সঙ্গে আবেগী বন্ধন অনুভব করে, তাদের এক বছর পরে গণিতভীতি কম থাকে। মায়েদের ক্ষেত্রে একই প্রভাব দেখা যায়নি। এতে বোঝা যায়, বাবারা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

৭. বাবা হওয়ার অভিজ্ঞতা মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে।
‘Frontiers in Psychology’ গবেষণায় বলা হয়েছে, সন্তান জন্মের প্রথম বছরে যারা বাবা হিসেবে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ও সন্তানের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, তাদের মধ্যে হতাশার হার কম। বাবার সক্রিয় অংশগ্রহণ মানসিক স্বস্তি আনে।

৮. আবেগ বোঝার অক্ষমতা ও হরমোন রিঅ্যাকশন পিতৃত্বকে প্রভাবিত করে।
‘Hormones and Behavior’ গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাবা আবেগ প্রকাশে দুর্বল এবং স্ট্রেসে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, তারা সন্তানের সঙ্গে মানসম্পন্ন সহ-পিতৃত্বে পিছিয়ে পড়েন। এতে সন্তানের সহানুভূতিশীল আচরণ কমে যায়।

৯. বাবার অনুপস্থিতি ভবিষ্যতের যৌন আচরণে প্রভাব ফেলে।
‘Evolutionary Psychological Science’ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শৈশবে বাবাকে হারিয়েছে, তারা যৌবনে বেশি অনিয়মিত যৌ'ন সম্পর্কে জড়ায়। গবেষকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে সন্তানদের মনে অস্থায়ী সম্পর্কের প্রতি একটি মানসিকতা তৈরি হয়।

এই গবেষণাগুলোর আলোকে বলা যায়, পিতৃত্ব শুধুই একটি সামাজিক পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের মানসিক, সামাজিক ও সম্পর্কের কাঠামো তৈরির একটি মৌলিক উপাদান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারে বাবার কার্যকর উপস্থিতি কেবল সন্তানের নয়, বাবা নিজেও উপকৃত হন।

সূত্র: https://short-link.me/14Wza

মিরাজ খান

×