ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, গত কয়েক মাসে আক্রান্ত ছয় শতাধিক

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙামাটি

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ১৮ জুন ২০২৫

রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, গত কয়েক মাসে আক্রান্ত ছয় শতাধিক

বর্ষা শুরু হওয়ার পর রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনা আতঙ্কে রয়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ।

এক সময় রাঙামাটিতে ভয়াবহ ম্যালেরিয়া দেখা যেত। তবে বিগত কয়েক বছরে তেমনটা দেখা যায়নি। সম্প্রতি সময়ে ফের পার্বত্য এই জেলায় ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক বেড়েছে। দেশের কিছু স্থানে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলেও রাঙামাটিতে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন নেই। কিন্তু চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া।

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে জেলায় ৬৬১ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে জেলার বাইরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত কয়েক বছরে ম্যালেরিয়ায় কারো মৃত্যু হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর একই সময়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৪৫ জন। সে তুলনায় এবার কিছুটা কম হলেও পাহাড়ি এলাকাগুলোতে রোগটি এখনও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে দুর্গম সীমান্ত অঞ্চলের চার উপজেলা—বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল—বাসিন্দাদের জন্য রোগটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এ বছর আক্রান্ত রোগীদের ৮৩ শতাংশ এই চার উপজেলায় বসবাস করেন। গত দুই মাস ধরে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দুর্গম হওয়ায় এই জেলা থেকে ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের যে সরকারি লক্ষ্য রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থাকে। উপজেলাভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা হলো- জুরাছড়ি: ২০৮, বরকল: ৮৪, বাঘাইছড়ি: ৯৯, বিলাইছড়ি: ১৫৬, নানিয়াচর: ৩, লংগদু: ৭, কাউখালী: ১, কাপ্তাই: ২৯, রাজস্থলী: ৬৩, সদর উপজেলা: ১১।

বাঘাইছড়ির সাজেক, জুরাছড়ির দুমদুম্যা ও মৈদং, বিলাইছড়ি এবং বরকল উপজেলায় রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সচেতনতার অভাবই ম্যালেরিয়ার বিস্তারে অন্যতম কারণ। বিশেষ করে জুরাছড়ির মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি তিন বছর পরপর বিনামূল্যে মশারি বিতরণ করে থাকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে জেলায় পাঁচ লাখ ৭৪ হাজারের কিছু বেশি মশারি বিতরণ করা হয়েছিল। এরপর আর বিতরণ হয়নি।

রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা জানান, ‘‘বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই ম্যালেরিয়া রোগী বাড়ে। তবে মৃত্যু ঠেকাতে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এ বিষয়ে নিবিড় দৃষ্টি ও সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জুন ও জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত বাড়বে, ফলে রোগীও বাড়তে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।’’

সজিব

×