
ছবিঃ সংগৃহীত
রাশিয়ার সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান Su-57M1 শিগগিরই তাদের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হতে চলেছে। এটি মূলত Su-57 ফাইটারেরই উন্নত সংস্করণ, কিন্তু এতে এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে যা একে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, আধুনিক ও কার্যকর করে তুলেছে।
অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের মধ্যেই এটি যুদ্ধ প্রস্তুত অবস্থায় থাকবে, এবং রাশিয়ার নতুন ফাইটার জেটগুলোর একটি বড় অংশই হবে এই মডেলের।
চলুন জেনে নিই, Su-57M1–এর পাঁচটি বড় পরিবর্তন, যা একে আগের মডেল থেকে আলাদা এবং আরও শক্তিশালী করেছে।
১. নতুন ইঞ্জিন, আরও গতি ও শক্তি
আগের Su-57-এ যে ইঞ্জিন ব্যবহার করা হতো, সেটি ছিল অনেক পুরনো প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু Su-57M1-এ রয়েছে একেবারে নতুন ডিজাইনের AL-51F-1 ইঞ্জিন, যা গত ৪০ বছরে রাশিয়ার তৈরি প্রথম "নতুন প্রজন্মের" যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন।
এই ইঞ্জিনের সুবিধা:
- আরও বেশি গতি ও শক্তি
- ইঞ্জিন চালু রাখতে কম জ্বালানি খরচ
- বিমানকে অ্যাফটারবার্নার ছাড়াই Mach 2 (ধ্বনির দ্বিগুণ গতিতে) উড়তে সাহায্য করবে
- স্টেলথ বা রাডার এড়িয়ে চলার ক্ষমতাও বাড়বে
২. নতুন ডিজাইনের বডি – আরও স্টেলথি ও সুপারসনিক ফ্লাইটে দক্ষ
Su-57M1-এর গঠন বা বডি ডিজাইন অনেকটা বদলে ফেলা হয়েছে। এটিকে আগের তুলনায় একটু চওড়া করা হয়েছে, যাতে বেশি গতি বা “সুপারসনিক স্পিডে” আরও ভালোভাবে উড়তে পারে।
এছাড়া, বিমানের ভিতরের অস্ত্র রাখার জায়গাও আরও মসৃণ এবং ফ্ল্যাট করা হয়েছে, যাতে রাডারে ধরা পড়ার ঝুঁকি কমে। অর্থাৎ, যুদ্ধক্ষেত্রে Su-57M1 আরও নিঃশব্দ ও অদৃশ্য থেকে কাজ করতে পারবে।
৩. আরও আধুনিক রাডার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সহায়ক
নতুন এই মডেলে রয়েছে আরও উন্নত রাডার, যা লক্ষ্য নির্ধারণে আরও নিখুঁত। রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রাডার ও সেন্সর প্রযুক্তিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
সঙ্গে থাকছে একটি AI সহায়ক ব্যবস্থা, যা বিমানের যাবতীয় সিস্টেম এক বোতামের চাপে চালু করতে পারে। এর ফলে:
- যুদ্ধের আগে প্রস্তুতি দ্রুত শেষ হবে
- পাইলটের উপর চাপ কমবে
- জটিল অপারেশন সহজ হয়ে যাবে
৪. হেলমেটে ভেসে উঠবে সব তথ্য
২০২৪ সালের শেষদিকে রাশিয়া একটি নতুন হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং সিস্টেম উন্মোচন করে, যা পাইলটের চোখের সামনেই বিমানের গতি, লক্ষ্যবস্তু, আশপাশের পরিবেশের তথ্য তুলে ধরে।
এটি অনেকটা আমেরিকার F-35 বা চীনের J-20–এর প্রযুক্তির মতো। যদিও Su-57 এখনো পুরোপুরি "দেখে-ফেলার" প্রযুক্তি (Distributed Aperture System) ব্যবহার করে না, তবে বিমানে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি রাডার অনেকটাই সেই ঘাটতি পূরণ করে।
৫. ছোট কিন্তু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র
Su-57 আগে বিশাল R-37M ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করত, যা অনেক দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারত। তবে সেটা এত বড় ছিল যে বিমানের গতি কমে যেত, আর স্টেলথ ক্ষমতাও কমে যেত।
এই সমস্যার সমাধান হয়েছে Izdeliye 810 নামের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে। এটি আগের ক্ষেপণাস্ত্রের মতোই শক্তিশালী হলেও:
- আকারে ছোট
- বিমানের ভিতরে রাখা যায়, বাইরে ঝুলিয়ে নয়
- স্টেলথ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন থাকে
- এই ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে Su-57M1 শত্রুর রাডার বিমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে দূর থেকে অদৃশ্যভাবে হামলা চালাতে পারবে।
Su-57M1 শুধু একটি উন্নত যুদ্ধবিমান নয়, বরং রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ। এতে আছে:
- নতুন ইঞ্জিন
- উন্নত স্টেলথ ডিজাইন
- AI সহায়তা
- আধুনিক রাডার ও সেন্সর
- দূরপাল্লার স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্র
এটি শুধু রাশিয়ার নিজস্ব বাহিনীকেই নয়, বরং যারা এটি কিনতে আগ্রহী — যেমন আলজেরিয়া, ভারত বা ভিয়েতনাম — তাদের কাছেও এক বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।
মারিয়া