
ছবিঃ সংগৃহীত
আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ রোগ আজকাল সাধারণ হয়ে উঠছে। অথচ স্ট্রোক হবার পর অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তাদের শরীর আগেভাগেই কিছু ইঙ্গিত দিয়েছিল। যদি সেই ইঙ্গিতগুলো ঠিকমতো বোঝা যেত, তাহলে হয়তো বড় বিপদ এড়ানো যেত!
স্ট্রোক হলে কী লক্ষণ দেখা যায় এবং তা থেকে কীভাবে সতর্ক হওয়া উচিত, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন কলকাতার মনিপাল হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ড. জয়ন্ত রায়।
স্ট্রোক কী এবং কেন হয়?
স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি তীব্র রক্ত সঞ্চালন সংক্রান্ত রোগ, যা হঠাৎ করে হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তসরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বা রক্তপাত হলে স্ট্রোক হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায় এবং তার ফলে শরীরের কোনো অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজন বেশি থাকা, ঘুমের অভাব এবং পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস।
স্ট্রোকের ১ মাস আগেও শরীর দেয় ইঙ্গিত!
অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্রোক হওয়ার কয়েকদিন বা এক মাস আগেও শরীর কিছু লক্ষণ দেখায়। যেগুলো মাথায় রাখলে সময়মতো চিকিৎসা করানো যায়।
স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো:
-
হঠাৎ করে ভারসাম্য হারানো (Balance Problem): হাঁটাচলা করতে গিয়ে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো।
-
দৃষ্টির সমস্যা (Eye Vision Problem): এক বা দু'চোখে দেখতে না পাওয়া বা ডবল দেখা।
-
মুখের অংশ ঝুলে পড়া (Facial Drooping): মুখের একপাশ ঝুলে যাওয়া বা হাসতে গিয়ে অসুবিধা।
-
হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া (Arm Weakness): হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা শক্তি হারানো।
-
কথা বলতে অসুবিধা (Speech Difficulty): কথা জড়ানো, কথা বলতে না পারা বা ভুল কথা বলা।
-
সময়ের গুরুত্ব (Time to Call Doctor): এগুলোর কোনোটাই হঠাৎ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
এই লক্ষণগুলো মনে রাখতে বলা হয় “BFAST”:
-
B : Balance (ভারসাম্য)
-
F : Face (মুখ)
-
A : Arm (হাত)
-
S : Speech (কথা)
-
T : Time (সময়)
স্ট্রোকের চিকিৎসা: সময়ের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি
স্ট্রোক হলে প্রতি সেকেন্ডে 32,000 মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। তাই সময়মতো চিকিৎসা না করলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। তাই লক্ষণ দেখা মাত্রই হাসপাতালে যাওয়া দরকার।
চিকিৎসা পদ্ধতি:
-
থ্রম্বোলাইসিস (Clot Busting Medicine) : যেখানে রক্তের থক্কা ভাঙা হয়।
-
থ্রম্বেকটমি (Clot Removal by Catheter) : যেখানে ক্যাথেটার দিয়ে মস্তিষ্কের থক্কা তুলে ফেলা হয়।
-
রিহ্যাবিলিটেশন (Rehabilitation) : স্ট্রোকের পর পুনর্বাসনের মাধ্যমে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়:
-
নিয়মিত ঘুম ও জীবনযাপন: প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমানো ও ঠিক সময়ে ওঠা।
-
নিয়মিত ব্যায়াম: দৈনিক 30-45 মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা।
-
স্বাস্থ্যকর খাবার: তেল-মেদবিহীন, ফলমূল, সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
-
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: নেশা থেকে দূরে থাকা।
-
রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত চেক আপ করা।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ: একসাথে লড়াই করুন স্ট্রোকের বিরুদ্ধে
স্ট্রোক ভয়ঙ্কর হলেও এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু দরকার সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। যদি প্রত্যেকে নিজেকে সুস্থ রাখতে চান, তাহলে এই সব বিষয়গুলো মাথায় রাখুন এবং পরিবারের সবাইকে সতর্ক করুন।
ইমরান