
এই শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি— মনিটাইজেশন। ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক কিংবা ইনস্টাগ্রাম—সবখানে শুধু একটাই স্বপ্ন: 'ভিউ হবে, টাকা আসবে'। আর এই স্বপ্নেই ডুবে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের একটি বিশাল অংশ।
ইন্টারনেটভিত্তিক এই ডিজিটাল স্বপ্নের বাজারে কেউ হচ্ছেন লাখপতি, আবার কেউ দিনের পর দিন ভিডিও বানিয়ে, ছবি পোস্ট করে, স্ট্যাটাস লিখে অপেক্ষায় থাকছেন ‘১ হাজার সাবস্ক্রাইবার’ আর ‘৪ হাজার ওয়াচটাইম’-এর। চাকরি নেই, দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা নেই, শুধু আছে অস্থিরতা আর শূন্য অপেক্ষা।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন তরুণ ইউটিউবারের মধ্যে ৭ জনই নিজের চ্যানেল খুলে বসে আছেন শুধুমাত্র "ইনকামের আশায়"—কোনো নির্দিষ্ট কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি ছাড়াই। ফলে ধীরে ধীরে হতাশা, আত্মসম্মানের ক্ষয়, এমনকি মানসিক অবসাদে ভুগছেন অনেকেই।
স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক বলেন, আগে ছাত্ররা বিসিএস, শিক্ষকতা, ইঞ্জিনিয়ারিং—এগুলো নিয়ে ভাবত। এখন ১৬-১৭ বছর বয়সেই তারা ভাবে—আমি ইউটিউবার হবো, ফেসবুক ইনফ্লুয়েন্সার হবো। বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিল না রেখেই ডিজিটাল দুনিয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেকেই।”
বেকারত্বের চক্রে যখন চাকরি ও স্কিল বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া উচিত, তখন এই মনিটাইজেশন-নির্ভর মানসিকতা তরুণদের ধীরে ধীরে অদক্ষ আর বাজার-অনুপযোগী করে তুলছে। ফলত, ভবিষ্যতের শ্রমবাজারে একটি ‘ডিজিটালি বিভ্রান্ত’ প্রজন্মের মুখোমুখি হতে পারে দেশ।
মনিটাইজেশন নিজে খারাপ নয়। কিন্তু উৎপাদনহীন মনিটাইজেশন-পিপাসা হলে সেটি সমাজে বেকারত্ব, হতাশা এবং সময়ের অপচয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রয়োজন দক্ষতা অর্জন, বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পিত কনটেন্ট তৈরি—যেখানে মনিটাইজেশন হবে ফলাফল, উদ্দেশ্য নয়।
এই সময়টায় তরুণদের উচিত, মনিটাইজেশন নয় -উন্নয়নমুখী চিন্তা, দক্ষতা অর্জন এবং টেকসই ক্যারিয়ারে মনোযোগ দেওয়া। না হলে ডিজিটাল এই দৌড়ে একদিন হারিয়ে যাবে পুরো একটি প্রজন্ম।
এ বিষয়ে এটিবি ইয়ুথ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মাসুম পারভেজ বলেন, আমরা একটি ভয়ংকর সময়ে প্রবেশ করছি, যেখানে তরুণরা কাজ শেখার আগেই টাকা আয় করতে চায়। মনিটাইজেশন কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু সমস্যা তখনই শুরু হয় যখন মানুষ উৎপাদনহীনভাবে শুধুমাত্র ‘ভিউ’ আর ‘লাইক’-এর পেছনে সময় ব্যয় করে। আমরা চাই—তরুণরা যেন আগে দক্ষতা অর্জন করে, নিজের চিন্তা শক্তি দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে, এবং অর্থ উপার্জন করে সম্মানজনকভাবে।"
রাজু