ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে

আমিনূর রশীদ

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ১৮ জুন ২০২৫

ছুটিতে শ্রীমঙ্গলে

শ্রীমঙ্গল হচ্ছে প্রকৃতির লীলাভূমি। প্রকৃতি যেন অকৃপণ হস্তে তার সব রূপ ঐশ্বর্য শ্রীমঙ্গলকে দান করেছে। শ্রীমঙ্গল নামেরও মাহাত্ম্য আছে, যেমন শ্রী+মঙ্গল। অর্থাৎ শ্রী মানে সুন্দর আর মঙ্গল মানে শুভ। নামের মধ্যেই তার মাহাত্ম্য উদ্ভাসিত। অতএব শ্রীমঙ্গল বেড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। যথা সময়ে আমরা তিনজন শ্রীমঙ্গল উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের এখান থেকে শ্রীমঙ্গল বিশ কি.মি. দূরে, ত্রিশ মিনিট সময় লাগে। যথাসময়ে শ্রীমঙ্গল পৌঁছে গেলাম। শ্রীমঙ্গলে কয়েক ডজন দর্শনীয় স্থান আছে যেমন, চা কন্যা ভাস্কর্য, লইরকুল পাখি বাড়ি, সাতগাঁও লেক, চা জাদুঘর, খাসিয়া পুঞ্জি, হরিণ ছড়া, ’৭১-এর বধ্যভূমি ইত্যাদি অনেক। কোন দিকে যাব ভাবছি। সিদ্ধান্ত হলো কালীঘাট চা-বাগানে অবস্থিত শতবর্ষের প্রাচীন ‘কালীঘাট পোস্ট অফিস’ ঘুরে দেখব। কালীঘাট বাজার থেকে গন্তব্যে যাওয়া যায় অটোরিক্সায় অথবা পর্যটক জিপে। অটোতে ভাড়া নেবে ২০ টাকা, সময় লাগবে ৩০ মিনিট। আমরা একটি অটোতে চলে আসলাম সেই প্রাচীন কালীঘাট পোস্ট অফিসে। এই পোস্ট অফিসের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আছে। 
জানা যায় যে ঔপনিবেশিক আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের গোপনীয় ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক চিঠি ও গোপনীয় দলিলপত্র আদান প্রদান করার জন্য ১৯২৩ সালে কালীঘাট চা বাগানে এই পোস্ট অফিস স্থাপন করে। এখন আর কোম্পানি নেই, আছে শুধু তাদের স্থাপিত পোস্ট অফিসটি। বর্তমানে পোস্ট অফিসটি অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। সারা পোস্ট অফিসটি লাল টিনের ছাউনি ও বেড়া। পোস্ট অফিসের সকল দরজা, জানালা বন্ধ আছে। সদর দরজায় তালা দেড়া আছে। সদর দরজার উপরে একটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে। সাইনবোর্ডে ইংরেজিতে লেখা আছে- Kalighat Post office, code no-3212. Established 1923, One of the oldest post office in the sylhet Division. ঘুরে ঘুরে চারদিক দেখলাম। সব দরজা জানালা বন্ধ। পোস্ট অফিসে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া আছে। শতবর্ষের প্রাচীন এই পোস্ট অফিসটি খুবই পরিচ্ছন্ন। মনে হয় রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পোস্ট অফিসটির ব্যাপারে উপস্থিত কয়েক চা শ্রমিককে জিজ্ঞেস করলে তারা কোনো কিছুই বলতে পারে না। পোস্ট অফিস দেখা শেষ। এখন যাব ফিনলে চা বাগান বিমান বন্দর দেখতে। ওখান থেকে অটোতে রওনা দিলাম বিমানবন্দরের দিকে। প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেখলাম বিমানবন্দরের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ। সাইনবোর্ড লেখা আছে প্রবেশ নিষেধ। বিমানবন্দর মানে এয়ার ট্রিপ। দুই হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে আছে। একজন চা শ্রমিককে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আগে ছোট বিমান ওঠা নামা করত, এখন বন্ধ, কখনো হেলিকপ্টার নামে। বিমানবন্দরটি ফিনলে চা বাগানের নিয়ন্ত্রণে আছে। এতক্ষণ ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে কখন জানি সন্ধ্যা হয়ে গেল। এখন আপন ঠিকানায় ফেরার পালা। রাত প্রায় আটটার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরে বাসস্ট্যান্ডে আসি এবং গণপরিবহনে নিজ ঠিকানায় ফিরে আসি।
গির্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে

প্যানেল

×