
‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগতটাকে’- কবির মতো মনের এ ইচ্ছা, কামনা, বাসনা আমাদের প্রত্যেকের মনে উঁকি দেয়। তাইতো পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে পড়ি ভ্রমণে। তা হয় বনভোজন, শিক্ষা সফর বা গ্রামে বেড়াতে যাওয়া। একঘেয়েমি জীবনে বৈচিত্র্য আমার জন্য এ আয়োজন। আর চক্ষু মিলে প্রকৃতিকে দেখা যেমন আনন্দের তেমন সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি দু’নয়ন জুড়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের উছিলায় অনেকের ভ্রমণ হয়ে ওঠে আনন্দময়। নৌকা ভ্রমণ, ট্রেন ভ্রমণ, আকাশ পথে ভ্রমণ এ সবের মধ্যে আনন্দ অফুরন্ত। উচ্চ শিক্ষার জন্য সুযোগ এনে দেয় দূর দেশে যাওয়ার। নববধূদের মধু চন্দ্রিমা একটা ঘর থেকে দূরে যাওয়ার রেওয়াজ আছে। এতে দুই পরিবারের দুজন নিজেদের জানার ও চেনার সুযোগ পায়। ব্যয়বহুল ভ্রমণ এড়াতে আমরা কাছের নিকট আত্মীয়ের বাড়ি যেতে পারি। গ্রামে বেড়ানোর অনেক উপভোগের ধান খেত, পাট খেত, পুকুর, উড়ন্ত বক আমাদের মন কাড়ে। গ্রামে পাট গাছ, পাট কাঠি, গাছের ছায়া বড়ই মনোমুগ্ধকর। শীতে এক রূপ আর বর্ষায় জল থৈ থৈ গ্রাম মনকে সতেজ করে তোলে। মাছ ধরায় মগ্ন থাকে গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ। গ্রামে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পল্লী কবি জসীম উদ্দীন- ‘আমার বাড়ি যাইয়ো ভোমর বসতে দেব পিঁড়ে’। তবে এখন গ্রাম বদলে গেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা পাই আগের মতো। মোবাইলে চার্জ, নেটওয়ার্ক এসবের তেমন অসুবিধা হয় না। আমরা আর এক ভ্রমণ পাই পবিত্র হজ ও ওমরা পালনে। হজ ধনীদের জন্য ফরজ ও বৃহৎ ইবাদত। যারা হজে যান বিভিন্ন স্তরে আনুষ্ঠানিকতা পালনের মাধ্যমে হজ পালন হয় তেমন স্তরে স্তরে জায়গা বদলের মাধ্যমে আমরা ইবাদত করার সুযোগ পাই। যেমন মিনা, আরাফাত, মুজ দালিফা, কাবা শরীফ। মা হাজেরার স্মৃতি জড়িত স্থান দেখে ইতিহাসের ছোওয়া ও পূর্ণ অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ হয়।
মদিনায় নবীজীর রওজা মুবারক আবেগে আপ্লুত করে তোলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের। এ ধর্মীয় সফর জীবনকে সুন্দর করে তুলে। ছাত্র জীবনে স্কাউট একটা বেড়ানো ও জ্ঞান অর্জনের আনন্দময় সময় হয়ে ওঠে। তাঁবু বাস, জাম্বুরী, স্বহস্তে কাজকর্ম করার পরিবেশ ও পরিকল্পনায় ভরপুর সময় পার করা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রছাত্রীরা গ্রাম থেকে জেলায়, জেলা থেকে বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ে যায়। কারও কারও জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার দ্বার উন্মোচন হয়ে যায়। মানুষের ব্যস্তময় জীবনে বেড়ানো একটা হয়ে ওঠে না। ঈদ, পূজা উপলক্ষে এই বেড়ানোটা বেশিরভাগ বাস্তবে পাওয়া যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আনন্দ উৎসবে মিলিত হতে হয়। কখনো খেলার টিম উল্লাস করে ফিরার পথে হয় বেদনাদায়ক ঘটনা। তাই আমাদের বেড়ানো যেন নিরাপদ হয় এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা।
সেতাবগঞ্জ, দিনাজপুর থেকে
প্যানেল