
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন
পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে সরকার এক দিকে ব্যয় করছে শত শত কোটি টাকা, অন্য দিকে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এলাকায় পদ্মা নদীতে বালুমহাল ঘোষণা করে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এতে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভে ফুঁসছে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে সেতু বিভাগের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দেন-নদী থেকে যেন কোনোভাবেই বালু উত্তোলন না করা হয়। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন নদীর গতি ও প্রবাহ বদলে দিয়ে তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, আমরা কোনোভাবে বালুমহাল ঘোষণা করতে স্পষ্ট অনুমতি দেইনি। আমরা বলেছি, হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করতে হবে। না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙন বাড়বে।
পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চে কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাঘাইয়া মৌজায় ১৫ একর এলাকায় বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়দের প্রতিবাদ, মানববন্ধন এবং উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার মুখে তা বাতিল করা হয়। এক বছর পর ফের ওই ইউনিয়নের ৭৭নং কাঁচিকাটা মৌজায় ২২.৬৩ একর নদী এলাকা বালুমহাল ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন গত ২৭ মার্চ বালুমহাল ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। একই দিনে তিনি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদনপত্রও পাঠিয়েছেন।
এ খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাঁচিকাটার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এক দিকে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ নির্মাণ করছে, অন্য দিকে সেই বাঁধের পাশেই বালু কাটার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে-এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা দাদন মিয়া, মাঈনুদ্দিন আহম্মেদ, জান শরিফ, মোকলেছ, মিজান বকাউল, আছিয়া বেগমসহ অনেকে বলেন, ভাঙনের কারণে ৩-৪ বার দোকানপাট সরাতে হয়েছে। এখন বালু কাটতে দিলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। বৈধভাবে ১০টি নৌকা মাটি কাটবে, কিন্তু বাস্তবে ১০০টি আসবে। তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন-এই বালুমহাল প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদী শরীয়তপুর জেলার জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট-এই তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। এসব এলাকায় ভাঙন দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। গত ১০ বছরে ভাঙনে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ভাঙনরোধে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন বলেন, বালুমহাল ঘোষণার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক মতামত পেয়েছি। সেগুলো বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।