ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইছামতীর তীরে শতবর্ষী কোষা নৌকার হাট, নেই আগের মতো ক্রেতার ভিড়

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ১৯ জুন ২০২৫

ইছামতীর তীরে শতবর্ষী কোষা নৌকার হাট, নেই আগের মতো ক্রেতার ভিড়

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামে শতবর্ষের প্রাচীন নৌকার হাট এখনও টিকে আছে ঐতিহ্যের স্বাক্ষর হয়ে। বর্ষা মৌসুম এলেই হাটে বাড়ে কোষা নৌকার কদর। মাছ ধরা, শাপলা তোলা কিংবা নীচু এলাকায় চলাচলের জন্য এই নৌকাই একসময় ছিল ভরসা। আজও এই প্রয়োজন থেকেই টিকে আছে সাপ্তাহিক হাটটি। তবে সময়ের বিবর্তনে ও প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবর্তনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা।

প্রতি শনিবার ইছামতী নদীর তীরে বসে এ হাট। আশপাশের সিরাজদিখান, লৌহজং, এমনকি ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও কারিগর ও ব্যাপারীর এখানে নৌকা নিয়ে আসেন। নৌকার এই সাপ্তাহিক হাটে গড়ে দেড়শো থেকে দুইশো পর্যন্ত কোষা নৌকা বিক্রি হয়। তবে কারিগরদের দাবি, আগের মতো বিক্রি আর নেই।

স্থানীয় নৌকা ব্যবসায়ী হাসমত মিয়া জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্ষায় এই হাটে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আড়িয়াল বিলসহ আশপাশের জলাশয়গুলোতে অবৈধ ভরাটের কারণে পানির পরিমাণ কমে গেছে। ফলে নৌকার ব্যবহারও কমছে।

একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরেক কারিগর চান কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “এ বছর আষাঢ় এলেও বর্ষার পানি এখনো তেমন বাড়েনি। তাই নৌকার বিক্রি তুলনামূলক কম।” তবুও হাটে প্রতি সপ্তাহে কিছু না কিছু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নৌকার ব্যাপারী মানিক মিয়া জানান, তিনি প্রতি হাটে ২০-৩০টি কোষা নৌকা নিয়ে আসেন। আগে সব বিক্রি হলেও এখন ১০-১৫টা বিক্রি হয়। দামও তুলনামূলক কম—প্রকারভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়।

নৌকার হাট ব্যবস্থাপনায় যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, একসময় ইছামতী নদী ও আড়িয়াল বিলকে কেন্দ্র করে বর্ষাকালে কোষা নৌকাই ছিল মানুষের একমাত্র বাহন। তখনকার দিনে হাটে উপচে পড়ত ভিড়। বর্ষায় জমিতে চাষাবাদ না থাকায় তিন-চার মাস ধরে অনেকে নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন সেই চিত্র বদলেছে। নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়া, জলাশয় ভরাট হওয়া ও অবৈধ দখলের ফলে নৌকার ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। ফলে ক্রমেই সংকটে পড়ছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত অর্ধশতাধিক পরিবার।

তবে লাভের মুখ না দেখলেও অনেক কারিগর এখনো এই পেশা ছাড়েননি। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়বোধ থেকেই তারা সপ্তাহের হাটে কোষা নৌকা নিয়ে বসেন।

মিরাজ খান

×