ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতিদিনের ১০টি অভ্যাস, যা নীরবে ধ্বংস করছে আপনার কিডনি

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:২৯, ১৯ জুন ২০২৫

প্রতিদিনের ১০টি অভ্যাস, যা নীরবে ধ্বংস করছে আপনার কিডনি

কিডনি আমাদের শরীরের এমন একটি অঙ্গ, যা নীরবে কাজ করে যায় দেহের বিষাক্ত বর্জ্য ছেঁকে পরিষ্কার করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এমনকি হরমোন উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে। কিন্তু অজান্তেই কিছু সাধারণ অভ্যাস আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো সচেতন না হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ। নিচে এমন ১০টি দৈনন্দিন অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো আপনার অজান্তেই কিডনির ক্ষতি ডেকে আনছে।

১. ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার
প্রচলিত ব্যথানাশক যেমন এনএসএআইডি (NSAIDs) বা নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস মাঝে মাঝে খাওয়া ক্ষতিকর নয়। তবে নিয়মিত এবং মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ কিডনির ওপর চাপ ফেলে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ধরনের ওষুধ আরও বিপজ্জনক। ব্যথানাশক খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

২. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
লবণ মানেই সোডিয়াম, আর অতিরিক্ত সোডিয়াম মানেই উচ্চ রক্তচাপ। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। খাবারে লবণের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন মসলা ও হার্বস ব্যবহার করতে চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে লবণের প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে।

৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া
প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ থাকে অনেক বেশি। কিডনি রোগীদের জন্য উচ্চ মাত্রার ফসফরাস বিপজ্জনক। এমনকি যাদের কিডনির কোনো সমস্যা নেই, তারাও দীর্ঘমেয়াদে এসব উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হতে পারেন। এই সমস্যা এড়াতে খাদ্যাভ্যাসে ‘DASH ডায়েট’ অনুসরণ করা যেতে পারে।

৪. কম পানি পান করা
শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকলে কিডনি সহজে বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম নিষ্কাশন করতে পারে। এছাড়া পানি কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। সাধারণভাবে দিনে ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি পান করা ভালো। তবে কিডনি রোগে আক্রান্তরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি খাবেন।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
ঘুমের সঙ্গে কিডনির স্বাস্থ্যের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ঘুম-বাইোলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী কিডনি ২৪ ঘণ্টায় নিজস্ব কাজ ভাগ করে নেয়। নিয়মিত কম ঘুমালে কিডনির কর্মক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়।

৬. অতিরিক্ত পরিমাণে মাংস খাওয়া
প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খেলে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে, যা কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। ফলে অ্যাসিডোসিস হতে পারে যেখানে কিডনি প্রয়োজনীয় হারে অ্যাসিড নিষ্কাশন করতে পারে না। প্রোটিন দরকার হলেও তা যেন সুষমভাবে ফল ও সবজির সঙ্গে খাওয়া হয়।

৭. বেশি চিনি খাওয়া
চিনি বেশি খেলে ওজন বাড়ে, যা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দেয় এই দুটিই কিডনি রোগের প্রধান কারণ। শুধু মিষ্টান্ন নয়, অনেক ‘মিষ্টি নয়’ এমন খাবারেও লুকানো থাকে চিনি। যেমন: সস, সিরিয়াল, সাদা পাউরুটি ইত্যাদি। কেনার সময় মোড়কে উপাদান খেয়াল করুন।

৮. ধূমপান
ধূমপান শুধু ফুসফুস নয়, কিডনিরও শত্রু। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের মূত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি বেশি থাকে—যা কিডনির ক্ষতির পূর্বসংকেত।

৯. অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
প্রতিদিন চারটির বেশি অ্যালকোহল পান করলে কিডনি রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। যদি কেউ ধূমপানও করেন, তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায় পাঁচগুণ পর্যন্ত। তাই মাত্রা বজায় রাখুন এবং প্রয়োজনে সহায়তা নিন।

১০. দীর্ঘসময় বসে থাকা
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা শুধু হৃদরোগ নয়, কিডনির সমস্যারও কারণ হতে পারে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কীভাবে এই ‘সিডেন্টারি লাইফস্টাইল’ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে এটি নিশ্চিত যে শারীরিক সক্রিয়তা রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।


কিডনি রোগ নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে। কিন্তু যদি সময়মতো অভ্যাস পরিবর্তন করা যায়, তবে তা প্রতিরোধ করাও সম্ভব। শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি সুস্থ রাখতে নিজের জীবনধারায় সচেতন পরিবর্তন আনুন আজই। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সুষম খাবারের পাশাপাশি ঘুম, পানি ও পরিশ্রম এই তিনটি চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে আপনার কিডনি রক্ষার প্রধান অস্ত্র।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/343atu2w

আফরোজা

×