ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ৮টি সহজ ঘরোয়া উপায়

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৯ জুন ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ৮টি সহজ ঘরোয়া উপায়

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে রক্তের চাপ ধমনির প্রাচীরে নিয়মিত অতিরিক্ত মাত্রায় থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণে না রাখা হলে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে। তবে সুখবর হলো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ওষুধের পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই ৮টি ঘরোয়া সমাধান-

১. প্রতিদিন খান কিউই ফল

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে খাবারের আগে দুটি কিউই খেলে সাত সপ্তাহের মধ্যে সিস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় ২.৭ mm Hg পর্যন্ত কমতে পারে। কিউইতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ধমনির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিউই খেতে পারেন সরাসরি, স্মুদি হিসেবে, ওটমিল বাউলে বা সালাদে মিশিয়ে।

২. তরমুজ খান নিয়মিত

তরমুজে থাকে সিট্রুলিন নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরে গিয়ে আরজিনিনে রূপান্তরিত হয়। এই আরজিনিন নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়তা করে, যা রক্তনালিকে প্রশমিত করে এবং রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে বা স্ন্যাকস হিসেবে তরমুজের রস অথবা টাটকা তরমুজ খাওয়া উপকারী।

৩. পাতে রাখুন শাকসবজি

সবুজ পাতাজাতীয় শাকসবজি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকর। এতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ভারসাম্য রাখে এবং রক্তনালিকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। পালংশাকের মতো শাকেও থাকে নাইট্রেট, যা রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে রক্তচাপ কমাতে পারে। শাকসবজি ভাজি, স্যুপ, সালাদ বা তরকারি হিসেবে উপভোগ করুন।

৪. বাদাম ও বীজজাত খাবার খান স্ন্যাকস হিসেবে

পেস্তাবাদাম, আখরোট, ফ্ল্যাকসসিড বা কুমড়ার বীজে রয়েছে ফাইবার ও আরজিনিন, যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করে রক্তনালিকে প্রশস্ত করে। প্রতিদিন এক মুঠো লবণবিহীন বাদাম খাওয়া রক্তচাপ হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। তবে বাদাম ক্যালোরিতে বেশি, তাই পরিমাণে সচেতন থাকতে হবে। এগুলো সালাদ, ওটমিল বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

৫. বিট খেতে ভুলবেন না

বিটে থাকে প্রাকৃতিক নাইট্রেট, যা রক্তনালিকে প্রশস্ত করে এবং রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। বিটের রস পান করতে পারেন, অথবা রান্না করা বিট মেশাতে পারেন সালাদ বা খাবারে। কাঁচা বিট কুঁচি করে খাওয়াও উপকারী। চিনিমুক্ত বিট জুস হতে পারে একটি তাৎক্ষণিক ঘরোয়া সমাধান।

৬. খেতে পারেন ফ্যাটি মাছ

স্যালমন বা ম্যাকারেলের মতো ফ্যাটি মাছে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরে প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ হ্রাসে ভূমিকা রাখে। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন বার ১০০ গ্রাম মাছ খাওয়া হার্টের জন্য উপকারী। মাছ বেক করে বা গ্রিল করে খেতে পারেন অলিভ অয়েল ও হার্বস দিয়ে। নিরামিষভোজীদের জন্য বিকল্প হতে পারে সি-উইড, আখরোট, ফ্ল্যাকসসিড, চিয়া সিড এবং হ্যাম্প সিড।

৭. খেতে হবে সাইট্রাস ফল

লেবু, কমলা ও মাল্টার মতো সাইট্রাস ফলগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা হৃদ্‌স্বাস্থ্যে সহায়ক। প্রতিদিন প্রায় চারটি কমলার সমপরিমাণ সাইট্রাস ফল খাওয়া রক্তচাপ কমাতে পারে। টাটকা ফল খাওয়া, রস করে পান করা কিংবা পানিতে সাইট্রাসের টুকরো মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন। তবে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেলে গ্রেপফ্রুট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

৮. নিয়মিত হাঁটুন বা প্রণায়াম চর্চা করুন

প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা, প্রণায়াম ও ইয়োগা হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়তা করে। এসব অভ্যাস সকালবেলা খালি পেটে করাই সবচেয়ে ভালো। তবে সময় যা-ই হোক না কেন, নিয়মিত চর্চাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি চলতে থাকবে ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হলেও, নিয়মিত যত্ন ও সচেতনতায় তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এসব ফল, সবজি ও স্বাস্থ্যকর উপাদান রাখার পাশাপাশি হাঁটা, শ্বাসব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভ্যাস আপনাকে অনেক দূর পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শও অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যই হোক সবার অগ্রাধিকার।

 

সূত্র:https://tinyurl.com/4yyz9tt9

আফরোজা

×