ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাড়ছে পারমাণবিক দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৩, ১৯ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাড়ছে পারমাণবিক দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা ঘিরে বাড়ছে পারমাণবিক দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা। যদিও এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো দূষণের প্রমাণ মেলেনি, তবে ভবিষ্যতে চিত্র দ্রুত পাল্টে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ইরানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) জানায়, তারা এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলার ফলে কোনো ধরনের তেজস্ক্রিয় রসায়নিক বা বিকিরণজনিত বিপর্যয়ের তথ্য পায়নি।

তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “পরমাণু স্থাপনায় হামলা পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের উপর তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে, শুধু ইরানে নয়, পুরো অঞ্চলে।”

কোন হামলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
পরমাণু স্থাপনায় প্রতিটি হামলার ঝুঁকি এক রকম নয়। যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাগরিক নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান এবং যুদ্ধকালীন পরমাণু ঝুঁকি বিষয়ক গবেষক সাইমন বেনেট বলেন, “ঝুঁকির স্তর বিভিন্ন হতে পারে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হবে যদি কোনো সক্রিয় পরমাণু রিয়্যাক্টরে সফল হামলা হয়, যার ফলে বহু দূর পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

তবে আইএইএ জানায়, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা বাণিজ্যিকভাবে সক্রিয়, সেটি এখনও হামলার শিকার হয়নি।

কোন কোন স্থাপনায় হামলা হয়েছে?
ইসরায়েল ইতোমধ্যে নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোর্ডো—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এসব স্থাপনায় ইউরেনিয়াম গ্যাস সমৃদ্ধকরণের জন্য সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহৃত হয়, যা বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতেও ব্যবহৃত হতে পারে।

নাতাঞ্জে ওপরে থাকা প্লান্ট পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইএইএ প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি জানিয়েছেন, নাতাঞ্জে ‘তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক দূষণ’ ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরেনিয়াম আইসোটোপস ছড়িয়ে পড়ায় এটি নিঃশ্বাস বা খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ক্যান্সার, কিডনি, ফুসফুস ও হাড়ের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়তে পারে।

তবে গ্রোসি বলেন, “যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।” পাশাপাশি তিনি জানান, নাতাঞ্জ এলাকার বাইরের তেজস্ক্রিয়তা এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে।

ইসরায়েল ইসফাহানেও একটি গবেষণা কেন্দ্রে হামলা চালায়, যেখানে একটি ইউরেনিয়াম কনভার্শন প্লান্টসহ চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সেখানে বাড়তি বিকিরণের প্রমাণ মেলেনি।

সামনে কী হতে পারে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট সাইট, যেখানে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হয়। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের গভীরে নির্মিত, যা ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

ফোর্ডোর অবস্থান এতটাই গভীরে যে, এর উপর হামলায় তাত্ক্ষণিক পারিপার্শ্বিক দূষণের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে দীর্ঘমেয়াদে তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটির নিচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষক বেনেট। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আইএইএ-কে তদন্ত ও পুনরুদ্ধারে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে, যেমনটি তারা চেরনোবিলের ক্ষেত্রে করে থাকে।

তবে এখনো নিশ্চিত নয়, ইরান এই সহযোগিতায় রাজি হবে কিনা। কারণ যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

বেনেট বলেন, “এই মুহূর্তে যুদ্ধের কুয়াশার মধ্যে আমরা আছি। ফলে সবকিছুই অনুমান নির্ভর। বাস্তবতা কী, তা সময়ই বলে দেবে।”


যদিও এখন পর্যন্ত পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার ফলে আশেপাশের মানুষের জন্য তাৎক্ষণিক তেজস্ক্রিয় বিপর্যয়ের খবর মেলেনি, কিন্তু ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে পারমাণবিক দূষণের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পুরো অঞ্চলকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। এখন দরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

 

 

সূত্র:Euro news

আফরোজা

×