ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

শুধু গেঁটে বাত নয়, হাত-পায়ে এ লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার ইউরিক এসিড

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১৯ জুন ২০২৫

শুধু গেঁটে বাত নয়, হাত-পায়ে এ লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার ইউরিক এসিড

ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা অনেকেই ইউরিক অ্যাসিড বললেই ভাবি পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা — গেঁটে বাতের সেই পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু জানেন কি? আপনার শরীর অনেক আগেই আপনাকে সতর্ক করে দেয়। শুধু জয়েন্টে তীব্র ব্যথা না, হাত-পায়ে একরকম অদ্ভুত অস্বস্তি বা খুচরো যন্ত্রণাগুলো আসলে হতে পারে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের ফল।

এই উপসর্গগুলো এতটাই সাধারণ যে আমরা প্রায়শই "বয়সের কারণে", "কাজের চাপে", কিংবা "ঘুম কম হয়েছে" বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু আপনার শরীর তখনই কানে কানে বলছে — "শোনো, আমি ঠিক নেই।"

ইউরিক অ্যাসিড কীভাবে সমস্যা করে?
আমরা যখন প্রোটিন বা বিশেষ কিছু খাবার হজম করি (যেমন: লাল মাংস, কলিজা, মদ ইত্যাদি), তখন শরীরে তৈরি হয় পুরিন নামক উপাদান। এটা ভেঙে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। সাধারণ অবস্থায় কিডনি এটা ফিল্টার করে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। কিন্তু যখন ইউরিক অ্যাসিড বেশি হয় বা কিডনি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারে, তখন সেটি রক্তে জমে গিয়ে ছোট ছোট সূচের মতো স্ফটিকে পরিণত হয় এবং জয়েন্ট বা ত্বকের নিচে জমা হতে থাকে।

চলুন জেনে নিই, কোন কোন লক্ষণকে অবহেলা করা উচিত নয়—
১. পায়ের বুড়ো আঙুল বা গোড়ালিতে টানটান ব্যথা
অনেক সময় হঠাৎ এমন তীব্র ব্যথা হয় যে পা মাটিতে রাখা যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কয়েক কদম হাঁটতেই পায়ের গোড়ালি যেন ছুরি মারছে! মনে হতে পারে এটা হয়তো প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়াইটিস। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডও ঠিক এমন ব্যথা তৈরি করে।

২. আঙুলে ফোলা ও জয়েন্টে শক্তভাব
হাতের আঙুলগুলো ফুলে উঠছে, গিঁটগুলো লালচে? সকালে উঠেই মনে হচ্ছে হাতগুলো বেঁধে রাখা? এগুলো ইউরিক অ্যাসিডের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত। বেশিরভাগ সময় আমরা ধরে নিই এটা আর্থ্রাইটিস — কিন্তু বাস্তবে এর পেছনে থাকা কারণটা আলাদা হতে পারে।

৩. হাত-পায়ে ঝিনঝিনে বা অবশ লাগা
হাত পা যেন "ঘুমিয়ে পড়ে" — ঝিনঝিন, পিন চুবোনো মতো অনুভূতি। ইউরিক অ্যাসিড আশেপাশের স্নায়ুতেও চাপ ফেলে, ফলে এরকম অনুভব হয়। এই উপসর্গগুলো বিশেষ করে রাতে বেড়ে যায়।

৪. কবজি বা গোড়ালিতে নড়াচড়া কঠিন হয়ে যাওয়া
ছোট ছোট কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে? হাত ঘোরানো যাচ্ছে না, গোড়ালি মোড়ানোই যাচ্ছে না ঠিকমতো? এটি ইউরিক অ্যাসিড জমার একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণ, যা ধীরে ধীরে জয়েন্টের গতিশীলতা কমিয়ে দেয়।

৫. হাঁটু বা কনুই হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়া
যেমন হঠাৎ হাঁটু ভাঁজ করতে কষ্ট হচ্ছে, কনুই যেন আটকে গেছে — এরকম হলে সতর্ক হোন। এই শক্তভাব যদি নিয়মিত হয়, ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করানো উচিত।

৬. ত্বকের নিচে শক্ত গাঁট বা গুটি
আঙুল, পায়ের পাতায় বা গোড়ালির কাছাকাছি শক্ত পিণ্ডের মতো কিছু কি টের পাচ্ছেন? এগুলো আসলে ‘টফাই’— দীর্ঘদিন ইউরিক অ্যাসিড জমে এমন গুটি তৈরি হয়। অনেক সময় এগুলো ব্যথা দেয় বা ফেটে যায়। অবহেলা করলে এটি বড় সমস্যা হতে পারে।

৭. হাতের তালু বা পায়ের তলায় জ্বালাভাব
হাত বা পায়ের তলায় যেন আগুনের মতো জ্বলছে — এমন অনুভূতি যদি আপনার নিয়মিত হয়, তবে ভাবার সময় এসেছে। অনেক সময় এটা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হলেও, ইউরিক অ্যাসিড থেকেও এমনটা হতে পারে।

শরীরের ক্ষীণ সিগন্যাল শুনুন
আমরা সবাই ব্যস্ত। একটানা কাজ, বাড়ির দায়িত্ব, সামাজিক চাপ—কিন্তু এসবের ফাঁকেই শরীর তার মতো করে জানান দেয় যে, কিছু একটা ঠিক চলছে না।
আপনার আঙুলের ফোলা, গোড়ালির ব্যথা, হাতের জ্বালা — এগুলো শরীরের নীরব আর্তি। অবহেলা না করে আজই একটি রক্ত পরীক্ষা করান।

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর কিছু সহজ উপায়:
এড়িয়ে চলুন:
– লাল মাংস, কলিজা
– বিয়ার, অ্যালকোহল
– মিষ্টি ও ফ্রুকটোজ যুক্ত পানীয়
– সামুদ্রিক মাছ (সারডিন, অ্যাঙ্কোভি)

অভ্যাস গড়ে তুলুন:
– বেশি করে পানি খান
– নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন
– ভাজাভুজি ও প্রসেসড খাবার কমান
– ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, মাছ খান

মনে রাখবেন:
“যে ব্যথা আপনি ছোট করে দেখছেন, সেটাই বড় সমস্যার শুরু হতে পারে।”
একটা বুড়ো আঙুলের ব্যথা কখনো কখনো আপনার কিডনি আর হৃদয়ের বিপদ সংকেত হতে পারে।

সতর্ক থাকুন। সচেতন হোন। নিজের শরীরের কথা শুনুন।

মারিয়া

×