
ছবি: সংগৃহীত
পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার হলো দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ক্যান্সার। প্রতি ৯ জনে ১ জন পুরুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় এই রোগে আক্রান্ত হন। তাই, আপনি যদি বর্তমানে আক্রান্ত না-ও হয়ে থাকেন, তবুও এই রোগ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
নিচে প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কিত ৭টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো, যা অনেকেই জানেন না:
১. প্রোস্টেট ক্যান্সারে বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি
সুখবর হলো—এই ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে সাধারণ হলেও, এর চিকিৎসা এবং নিরীক্ষার ফলে বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি। প্রায় ৯৫% কেসেই ক্যান্সারটি প্রোস্টেটেই সীমাবদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে, যা চিকিৎসার জন্য তুলনামূলক সহজ। এছাড়া, যারা এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তাদের ৯৯% কমপক্ষে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। যদিও এটি ইতিবাচক তথ্য, তবুও প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ। যথাসময়ে ধরা না পড়লে এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২. প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ অনেক সময় অস্পষ্ট হয়
এই ক্যান্সারের লক্ষণ অনেক সময় অন্যান্য রোগের সঙ্গে মিলে যায় বা এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে নজরে আসে না। লক্ষণগুলো হতে পারে:
-
ঘন ঘন প্রস্রাবের তাগিদ
-
প্রস্রাবের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা
-
যৌন সমস্যাবলি (যেমন: বীর্যপাতের সময় ব্যথা, যৌন অক্ষমতা)
-
প্রস্রাব বা বীর্যে রক্ত
যদি আপনি এসব লক্ষণ অনুভব করেন এবং বয়স ৫০ বা তার বেশি হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. সব বয়সের পুরুষই আক্রান্ত হতে পারেন
যদিও ৬০% প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে ৬৫ বছরের পর, তবুও বাকি ৪০% কেসে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যেই রোগটি দেখা যায়। তরুণদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারটি সাধারণত আগ্রাসী ও বিপজ্জনক হয়ে থাকে এবং দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য ৪০ বছর বয়স থেকেই সতর্ক থাকা উচিত এবং অস্বাভাবিক কিছু মনে হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির স্ক্রিনিং নির্দেশনা:
-
৫০ বছর বয়সে শুরু করুন যদি ঝুঁকি সাধারণ হয়
-
৪৫ বছর বয়সে, যদি আপনার কাছের আত্মীয় (৬৫ বছরের আগে) প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন অথবা আপনি আফ্রিকান বংশোদ্ভূত হন
-
৪০ বছর বয়সে, যদি একাধিক কাছের আত্মীয় একই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন
৪. প্রোস্টেট ক্যান্সার বংশগত হতে পারে
বয়স ও জীবনধারা এ রোগের প্রধান কারণ হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি বংশগত হয়ে থাকে। BRCA1 বা BRCA2 জিনে মিউটেশন থাকলে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেটি স্তন ক্যান্সারের সঙ্গেও সম্পর্কিত।
আপনার পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্য যদি প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে জেনেটিক টেস্ট করার কথাও ভাবা যেতে পারে। এজন্য আপনার অনকোলজিস্ট বা জেনেটিক কাউন্সেলরের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৫. প্রোস্টেট ক্যান্সারে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু নাও হতে পারে
সব ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার পরই চিকিৎসা শুরু করা হয় না। অনেক সময় এটি ধীরে ধীরে বাড়ে এবং তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
যদি ক্যান্সার ধীরগতির হয়, তাহলে ‘ওয়াচফুল ওয়েটিং’ অর্থাৎ ক্যান্সারের গতি পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি চিকিৎসা শুরু না করাই ভালো, কারণ তা শারীরিক ও মানসিকভাবে চাপ বাড়ায়। নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করে ক্যান্সারের অগ্রগতি বোঝা হয় এবং তখন চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৬. বর্ণভেদে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি ভিন্ন হতে পারে
আজও অজানা কারণে, আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় প্রায় ৬০% বেশি। অপরদিকে, লাতিনো ও এশিয়ান পুরুষদের মধ্যে এই রোগের হার অনেক কম। তাই, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত পুরুষদের আরও সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত স্ক্রিনিং করানো প্রয়োজন।
৭. জীবনধারা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করে
আপনার খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন অভ্যাস এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে বা কমাতে পারে। যারা শারীরিকভাবে অলস জীবনযাপন করেন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্যদিকে, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে ঝুঁকি কমে।
বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক উন্নতি হয়েছে এবং রোগটি ধরা পড়লে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বেশ ভালো। তবে বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, জীবনধারা ও জাতিগোষ্ঠী—এই সব কিছুই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তাই নির্ধারিত বয়সে পৌঁছালে দেরি না করে স্ক্রিনিং করান, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক সময় ছোট একটি সচেতনতা আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
আবির