ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

রান্নার তেলেই ক্ষতি হচ্ছে লিভার ও কিডনির: গবেষণায় মিলল ভয়াবহ তথ্য

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ১৯ জুন ২০২৫

রান্নার তেলেই ক্ষতি হচ্ছে লিভার ও কিডনির: গবেষণায় মিলল ভয়াবহ তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

আমরা প্রতিদিনই রান্নাঘরে যে তেলই ব্যবহার করি—সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন, ক্যানোলা বা কখনও কখনও ঘি—সবই পরিচিত ও ‘স্মার্ট’ অপশন মনে করে ব্যবহার করি। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এই ‘সাধারণ’ তেলই হতে পারে যকৃত ও কিডনির ক্ষতির অন্যতম কারণ, বিশেষ করে যখন সেগুলো অতিরিক্ত গরম করা হয়, বারবার ব্যবহার করা হয় বা দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করা হয়।

সীড অয়েল: ঘরের নিত্য ব্যবহার্য তেলেই লুকিয়ে বিপদ

সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন, কর্ন বা কটনসিড তেল—এসব বীজজাত তেল বাজারে একসময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল উদ্ভিজ্জ এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত হওয়ার কারণে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, এসব তেলে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ খুব বেশি, যা অতিরিক্ত গ্রহণে শরীরে ইনফ্লামেশন ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়—যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)-এর অন্যতম কারণ।

এরচেয়েও বড় সমস্যা হয় যখন এই তেল অতিরিক্ত উত্তপ্ত বা বারবার গরম করে ব্যবহার করা হয়। তখন এই তেলে তৈরি হয় বিষাক্ত যৌগ, যেমন: অ্যালডিহাইডস, লিপিড পারঅক্সাইড, পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন।

এসব যৌগ যকৃতের কোষে ক্ষয় সৃষ্টি করে, ডিএনএ মেরামত প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

পুরনো তেলে রান্না: নিরব বিষক্রিয়া

একই তেল দিয়ে বারবার রান্না করা এখন অনেকেরই অভ্যাস। কিন্তু ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, তিনবারের বেশি গরম করা তেল খেলে যকৃত, কিডনি, অগ্ন্যাশয় ও অন্ত্রে সরাসরি ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, লিভার এনজাইম বেড়ে যাওয়া, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, ডিএনএ ক্ষয়, সব মিলিয়ে মারাত্মক বিপদ তৈরি হয়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধোঁয়াচ্ছন্ন রান্নাঘরে কাজ করা নারীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ রান্নার তেলের ধোঁয়াও কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

কোন তেল নিরাপদ?

গবেষণা বলছে, সব তেল সমান নয়। কিছু তেল শরীরের জন্য উপকারীও হতে পারে:

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল: মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। ইনসুলিন রেসপন্স উন্নত করে, যকৃতে চর্বি কমায়।

অ্যাভোকাডো অয়েল: উচ্চ স্মোক পয়েন্ট, স্বাস্থ্যকর চর্বি—লিভারের জন্য ভালো।

ঠান্ডা প্রেসড তিল তেল (Sesame oil): অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, লিভার এনজাইমে সহায়ক, কিডনিতেও উপকারী।

ফ্ল্যাক্সসিড ও ওয়ালনাট তেল: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ—ইনফ্লামেশন ও লিভার চর্বি কমায়। তবে কাঁচা ব্যবহারেই ভালো।

ঠান্ডা প্রেসড ক্যানোলা অয়েল: তুলনামূলক নিরাপদ।

ভার্জিন নারকেল তেল: মাঝারি মাত্রায় গ্রহণ করলে মেটাবলিজমে সহায়ক হতে পারে।

রান্নাঘরের সচেতনতা: যকৃতের জন্য সুরক্ষার ৫ পরামর্শ

১. সীড অয়েল কমান: দৈনন্দিন রান্নায় সানফ্লাওয়ার, সয়াবিন বা কর্ন অয়েল বাদ দিন।

২. তেল পুনঃব্যবহার করবেন না: একবার বা বড়জোর দু’বার। তেল ঘোলা বা গন্ধযুক্ত হলে সাথে সাথে ফেলে দিন।

৩. অতিরিক্ত তাপ নয়: ধোঁয়া ওঠার আগেই আগুন কমিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে রান্না নিরাপদ।

৪. প্যাকেটজাত খাবারে সতর্ক থাকুন: 'ভেজিটেবল অয়েল' লেখা মানেই তা পুনঃউত্তপ্ত সীড অয়েল হতে পারে।

৫. ঠান্ডা প্রেসড তেল বেছে নিন: প্রক্রিয়াজাত কম এমন তেল শরীরের পক্ষে তুলনামূলক নিরাপদ।

রান্নার তেল শুধু স্বাদের বিষয় নয়—এটি যকৃত ও কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিনের ভুল বাছাই একসময় ডেকে আনতে পারে ফ্যাটি লিভার, কিডনি স্ট্রেস, এমনকি অঙ্গ বিকল।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×