
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ হলো ব্রেইন স্ট্রোক। গবেষণা বলছে, ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ রোগী সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। কেউ কেউ মারা যান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আবার অনেকে বেঁচে ফিরলেও জীবন কাটে পঙ্গুত্ব, পক্ষাঘাত ও নানা কষ্টের মধ্যে। অথচ, সময়মতো লক্ষণ বুঝতে পারলে এই মারাত্মক অবস্থা এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
ব্রেইন স্ট্রোকের পূর্ববর্তী লক্ষণগুলো কী?
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ আগেই শরীরে কিছু পূর্বাভাস লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন:
-
চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তির হ্রাস
হঠাৎ করে সবকিছু অস্পষ্ট দেখা, জিনিসপত্র দ্বিগুণ দেখা বা অন্ধকার অনুভব করা। -
শরীরে প্রচণ্ড দুর্বলতা ও ক্লান্তি
দৈনন্দিন কাজের প্রতি অনীহা, শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করা এবং সব সময় অলস অনুভব করা। -
অতিরিক্ত ঘুম বা ঘুম ঘুম ভাব
দিনে অস্বাভাবিকভাবে ঘুমিয়ে পড়া, ঘুম নিয়ন্ত্রণে না থাকা। -
হাত-পা অবস হওয়া বা ঝিনঝিন করা
হাত-পা ঝিম ধরে থাকা, সুই ফোটার মতো ব্যথা অনুভব হওয়া। -
অস্বাভাবিক মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা ভারী লাগা যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। -
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া
অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেসার, উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড।
স্ট্রোকের তাৎক্ষণিক লক্ষণ চিনবেন যেভাবে (BE FAST ফর্মুলা)
আপনার চোখের সামনে কেউ হঠাৎ স্ট্রোক করলে এই BE FAST মডেলের মাধ্যমে দ্রুত চিনে ফেলুন:
-
B – Balance: হঠাৎ ভারসাম্য হারানো, টলোমলো হাঁটা।
-
E – Eyes: ঝাপসা দেখা, চোখে অন্ধকার দেখা, দ্বিগুণ দৃষ্টি।
-
F – Face: মুখ একপাশে বেঁকে যাওয়া, হাসতে গেলে ঠোঁট একদিকে ঢলে পড়া।
-
A – Arms: এক হাত তুলতে না পারা বা দুর্বল লাগা।
-
S – Speech: জড়িয়ে যাওয়া কথা, অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলা।
-
T – Time: দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া। সময় নষ্ট করলে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
দ্রুত চিকিৎসা জরুরি
ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নয়, সরাসরি হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক ট্রিটমেন্ট শুরু না হলে রোগীর মৃত্যু অথবা চিরতরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একইসাথে কখন থেকে লক্ষণ শুরু হয়েছে সেই সময়টাও স্মরণে রাখা জরুরি, কারণ চিকিৎসকরা সময়ের ওপর ভিত্তি করে ওষুধ প্রয়োগ করেন।
কী করবেন, কী করবেন না:
✅ করণীয়:
-
নিয়মিত ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন
-
শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা গুরুত্ব দিন
-
ঘন ঘন ঝিম ধরা, চোখে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
বর্জনীয়:
-
স্ট্রোকের লক্ষণ উপেক্ষা করা
-
নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া
-
চিকিৎসা নিতে দেরি করা
সতর্ক হোন, সুস্থ থাকুন। সময়মতো পদক্ষেপই পারে একটি প্রাণ রক্ষা করতে।
ইমরান