ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত, ভোটের প্রচারে যেতে পারবেন না উপদেষ্টারা

সংসদ নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫

সংসদ নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ ॥ ইসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। আর ভোটের প্রচারে যেতে পারবেন না উপদেষ্টারা। বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে আয়োজিত নির্বাচন কমিশনের  বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। 
মো. সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধন করে যে সব বিধানে কমিশন সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার করতে পারবেন না, প্রচারে উপদেষ্টারা যেতে পারবেন না,  বিলবোর্ডে প্রচার করা যাবে, রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রার্থী প্রচার ভোটের প্রচার করতে পারবেন ইত্যাদি।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের কমিশনের সপ্তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় আমাদের আলোচ্যসূচিতে ছিল রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তকরণ এবং আরেকটি বিষয় ছিল জাতীয় সংসদে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আলোচনা। আমরা প্রথম এজেন্ডাটা সম্পন্ন করতে পেরেছি। সময়ের অভাবে এবং আমাদের জিআইএস (জিওগ্রাফিক্যাল  ইনফরমেনশন সিস্টেমের) কিছু উপাত্ত এখনও বাকি আছে বিধায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ক আলোচনাটা আজকে আর আমরা এগিয়ে নেইনি। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ সংসদীয় আসনের বিষয়টা সম্পন্ন হবে। 
মো. সানাউল্লাহ বলেন, গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর ধারা ৯১-তে যেটা আছে প্রার্থিতা বাতিল করার এখতিয়ার, এটা ইতোপূর্বে আচরণবিধিতে ছিল না, এটাকে সন্নিবেশ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে বিলবোর্ডের ব্যবহার অতীতে ছিল না এটা সংযুক্ত করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ করার ব্যাপারে যেটা সংস্কার কমিশনেরও একটা প্রস্তাব ছিল, আমরাও একমত হয়েছি। আমরা পোস্টার ব্যবহার বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। ব্যানার ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইত্যাদিগুলোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যারা বিবেচিত হন সেখানে উপদেষ্টা ম-লির সদস্যদেরকেও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা প্রচারে যেতে পারবেন না। বিভিন্ন সরকারি ফ্যাসিলিটির ব্যবহার যেমন সার্কিট হাউস, ডাকবাংলো, রেস্ট হাউসের উপরে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রচারে পরিবেশ বান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। 
মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিশার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে যে অতীতে বিধিনিষেধ ছিল। এটার ব্যাপারে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। আর্মসের যে সংজ্ঞা ছিল সেই সংজ্ঞার মধ্যে অর্থাৎ অস্ত্র এর সংজ্ঞার মধ্যে দেশীয় অস্ত্র শামিল করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়টি বিশদভাবে যোগ করা হয়েছে। 
মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রচারে শব্দের ব্যবহারে আমরা আগে যেমন শব্দের মাত্রার ওপরে কোনো সীমা ছিল না। সেটাকে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার তিন সপ্তাহই থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সকল প্রার্থী সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদেরকে এই প্রার্থীতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে।  
মো. সানাউল্লাহ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোনো ধরনের ফরেন ইনভেস্টমেন্টর ওপর না করা হয়েছে। কমনভাবে একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে সকল প্রার্থী যাতে ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বা করেন সেটার বিধান করা হয়েছে। ডায়লগে অংশগ্রহণের ব্যাপারে যেটা আছে যে বিভিন্ন টিভি মিডিয়াতে যে ডায়লগের আয়োজন হয়ে থাকে এটাকে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা লঙ্ঘনে যে নরমাল শাস্তি ছিল ছয় মাস কারাদ- এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, সেটাকে ছয় মাস কারাদ- এবং দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 
মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে। দল এবং প্রার্থী উভয় আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলো। তবে মনে রাখতে হবে যে, আচরণ বিধিমালার অনেকগুলো পরিবর্তন বা সংশোধন এটা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিওর) ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং বর্তমানে এটা চূড়ান্ত হলে এটা প্রকাশিত হয়ে যাবে। আমাদের ওয়েবসাইটের ওপরে লেখা থাকবে আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে।
পোস্টার কি একবারে থাকবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, পোস্টার আমরা রাখছি না। প্রার্থীরা পোস্টারে প্রচার চালাইতে পারবেন না। ব্যানার আছে, ফেস্টুন আছে, বিলবোর্ড নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া আছে, লিফলেট-হ্যান্ডবিল আছে; এগুলো সব আছে শুধু পোস্টার নেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, কমন প্লাটফর্ম বলতে আমাদের যে রিটার্নিং অফিসাররা আছেন তারা প্রতিটি নির্বাচনী আসনে সব কজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম থেকে একদিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন। আর আচরণবিধি আমরা সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছি। এটার ওপরে যে আরপিওর সংশোধনের বিষয় আছে, আবার রাজনৈতিক কনসেন্সাসের ভিত্তিতে যদি কিছু পরিবর্তন সংশোধন হয় সেটাও করতে হতে পারে। সুতরাং এটা খসড়া আকারেই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নীতিগত অনুমোদন দিয়ে পোস্ট করে দিব। আর আলোচনা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া।
সংস্কারের আগেই সংশোধনের সিদ্ধান্ত, এটা কি বিষয়টা এরকম কিনা যে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো-এমন প্রশ্নের জবাবে মো. সানাউল্লাহ বলেন, এটা হতেই পারে। কারণ, আমাদের কিছু জিনিস অবহিতকরণ প্রয়োজন কারণ, এটার সঙ্গে আবার মতামতের বিষয় আছে। পক্ষে-বিপক্ষে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। আমরা চাই সে আলোচনাগুলো হোক। 
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী নির্বাচন কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

×