
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের আওতায় তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ একটি স্পষ্ট প্রক্রিয়া হলেও, এর প্রয়োগে নারী-পুরুষের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য দৃশ্যত সমান নয়। একজন মুসলিম পুরুষ শর্তহীনভাবে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখলেও, একজন মুসলিম নারীর সেই অধিকার আইনত এবং সামাজিকভাবে বেশ সীমিত।
স্ত্রীর তালাকের অধিকার কীভাবে কাজ করে
মুসলিম নারীর নিজস্বভাবে তালাক প্রদানের অধিকার নেই, যদি না তার স্বামী তাকে সেই ক্ষমতা অর্পণ করেন। এই ক্ষমতাকে বলা হয় ‘তালাক-ই-তাওফিজ’। এই ক্ষমতা স্ত্রী কেবল তখনই প্রয়োগ করতে পারেন, যদি সেটা কাবিননামায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ, বিয়ের সময় স্বামী কাবিননামার নির্ধারিত অংশে স্ত্রীকে এই ক্ষমতা লিখিতভাবে দিয়ে থাকেন।
অন্যান্য ক্ষেত্রে, স্ত্রী যদি তালাক চায়, তাহলে তাকে স্বামীকে অনুরোধ করতে হবে অথবা পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বিচ্ছেদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত প্রমাণ করতে হবে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে—
- স্বামীর দ্বারা ভরণপোষণ না পাওয়া,
- স্বামীর পুরুষত্বহীনতা,
- স্বামীর দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি।
কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামের বিভ্রান্তি
বর্তমানে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে উল্লেখ থাকে: “স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছেন কি না? করে থাকলে, কি শর্তে?” এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভ্রান্তির জন্ম হয়। অনেকেই মনে করেন, ‘তালাক-ই-তাওফিজ’ মানেই শর্তযুক্ত তালাকের ক্ষমতা। অথচ ইসলামী আইনে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে শর্তহীনভাবেও এই ক্ষমতা দিতে পারেন।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি কাবিননামায় উল্লেখ থাকে— “ভরণপোষণ না পেলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন”, কিন্তু বাস্তবে স্বামী ভরণপোষণ দিলেও স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করেন—তাহলে কি স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন? উত্তর হলো না, কারণ তালাকের ক্ষমতা কেবল নির্দিষ্ট শর্তেই প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে স্ত্রী নিজে থেকে তালাক দিতে পারবেন না।
সময় এসেছে কাবিননামার পরিবর্তনের
বিবাহ চুক্তির সময় অনেক নারী এই অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকায়, পরবর্তীতে তাদের তালাক চাওয়ার পথ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আইনজ্ঞ ও নারী অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে একটি সময়োপযোগী সংশোধন আনা উচিত। যেমন:
“স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছেন কি না?”
“অর্পণ করে থাকলে, তা কি শর্তহীন?”
“শর্তযুক্ত হলে, কী শর্তে?”
এই ধরনের স্পষ্ট ভাষা কেবল আইনি জটিলতা কমাবে না, বরং নারীর অধিকার সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিয়ের সময় কাবিননামা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক কাগজ নয়, বরং ভবিষ্যতের অধিকার ও সুরক্ষার দলিল। তাই প্রতিটি নারীকে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলাম সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং স্বামীর কাছ থেকে তালাকের ক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবেও এই কলামে সময়োপযোগী পরিবর্তন আনার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
আলীম