
সংগৃহীত
বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা স্পষ্ট। সংবিধান অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান এবং লিঙ্গের ভিত্তিতে কারো প্রতি কোনো বৈষম্য চলবে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে,সমানাধিকারের সেই প্রতিশ্রুতি নারীকে সম্পত্তির ক্ষেত্রে এখনো পুরোপুরি রক্ষা করতে পারেনি।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে স্ত্রী, কন্যা, মা ও বোনের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত থাকলেও, তা পুরুষের তুলনায় বরাবরই কম। উদাহরণস্বরূপ, একজন ছেলে যেখানে সম্পত্তির একটি সম্পূর্ণ অংশ পান, সেখানে মেয়ে পান তার অর্ধেক। একইভাবে স্বামী মারা গেলে স্ত্রী সন্তানের উপস্থিতিতে পান ১/৮ এবং সন্তান না থাকলে পান ১/৪। মা পান সন্তান থাকলে ১/৬, না থাকলে ১/৩।
হিন্দু উত্তরাধিকার ব্যবস্থায় নারীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিন্দু নারীরা পৈতৃক সম্পত্তিতে অংশ পান না, বা তাদের অধিকার স্বীকৃত হলেও সামাজিক বাস্তবতায় তা কার্যকর হয় না। অনেক সময়েই তারা ভাইদের কাছে সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো পারিবারিক বা সামাজিক চাপে।
২০১১ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে ছেলে ও মেয়ের সমান সম্পত্তির অধিকার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ধর্মীয় গোষ্ঠীর তীব্র বিরোধিতার মুখে সরকার সেই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসে। পরবর্তীতে গঠিত নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্কার কমিশন ২০২৪ সালে উত্তরাধিকার আইনসহ ৪৪৩টি সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিলেও, উত্তরাধিকারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এখনো কোনও বাস্তব অগ্রগতি দেখা যায়নি।
বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ নারী তাদের প্রাপ্য জমি বা সম্পত্তির মালিকানা পান না। অনেকেই জানেন না তাদের আইনি অধিকার কী, আবার অনেকেই জানলেও সামাজিক চাপের কারণে সেই দাবি তোলেন না।
সরকার খাসজমি বরাদ্দে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নাম অন্তর্ভুক্তির মতো কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো ‘সফট রিফর্ম’ মাত্র। প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে উত্তরাধিকার আইনের কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। এ ক্ষেত্রে আইন, সমাজ এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সমতা অর্জন সম্ভব নয়।
বিশ্বজুড়ে যেখানে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হয়ে উঠছেন, সেখানে বাংলাদেশের নারীরা এখনো সম্পত্তির মালিক হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন। প্রশ্ন উঠছে ,সংবিধান যখন সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, তখন সেই ন্যায্য অধিকার কবে আসবে নারীর হাতের মুঠোয়? শেষ কথায় বলা যায়—অধিকার শুধু কাগজে নয়, বাস্তবেও প্রতিষ্ঠা চাই।
হ্যাপী