ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

১২ বছর ধরে জমি দখলে থাকলেই মালিকানা? জানুন আইনি ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৯ জুন ২০২৫

১২ বছর ধরে জমি দখলে থাকলেই মালিকানা? জানুন আইনি ব্যাখ্যা

ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশে জমির মালিকানা সংক্রান্ত অনেক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এক প্রশ্ন—দলিল না থাকলেও কি জমির দখল থাকলে মালিক হওয়া যায়? বিশেষ করে, কেউ যদি টানা ১২ বছর কোনো জমি দখলে রাখেন, তবে কি তিনি সেই জমির মালিক হতে পারেন? অনেকেই মনে করেন, ১২ বছর দখল থাকলেই মালিকানা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু আসলেই কি তাই?

এই বিষয়ে আইন পরিষ্কার। ১৯০৮ সালের ‘তামাদি আইন’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো জমি নিরবিচারে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং টানা ১২ বছর ধরে দখলে রাখেন, এবং প্রকৃত মালিক সেই সময়ের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেন, তাহলে দখলকারী ব্যক্তি সেই জমির মালিকানা দাবি করতে পারেন।

দলিল না থাকলেও মালিকানা সম্ভব চারটি শর্তে:

আইনজীবীরা জানান, ১২ বছর ধরে জমি দখলে রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকানা আসে না। এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো—

১. নিরবিচার ও শান্তিপূর্ণ দখল: জমির উপর দখল নিরবিচারে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং একটানা থাকতে হবে। মাঝখানে কোনো বিরতি বা সংঘাত থাকা চলবে না।

২. কোনো চুক্তি ছাড়া দখল: দখলদার ব্যক্তিকে যদি কোনো চুক্তির ভিত্তিতে (যেমন ভাড়াটে বা কেয়ারটেকার) জমি দেওয়া হয়, তাহলে এটি মালিকানা দাবির সুযোগ দেয় না।

৩. প্রকৃত মালিকের কোনো বাধা না দেওয়া: ১২ বছরের মধ্যে জমির আসল মালিক যদি কোনো উচ্ছেদের চেষ্টা না করেন বা মামলা না করেন, তবে দখলদার আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

৪. আইনগত চ্যালেঞ্জের অনুপস্থিতি: ১২ বছর পূর্ণ হবার আগেই জমির আসল মালিক যদি কোনো প্রকার মামলা বা প্রশাসনিক অভিযোগ করেন, তাহলে দখলদার মালিকানা দাবি করতে পারবেন না।

ঘটনাবলির উদাহরণ:

সম্প্রতি ফরিদপুর জেলার একজন বাসিন্দা জানান, তার পরিবারের নামে নামজারি ও দলিলপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের জমিতে অন্য ব্যক্তি ৭০ বছর ধরে বসবাস করছেন। প্রশ্ন উঠেছে—এই অবস্থায় তারা কি আসল মালিক নাকি সেই দখলদার? এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা না নিলে মালিকানার প্রশ্নে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

সতর্কতা ও পরামর্শ:

আইন বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যদি কেউ দীর্ঘ সময় ধরে অন্যের জমি দখল করে থাকেন এবং মালিকানা দাবি করেন, তাহলে তাকে অবশ্যই ‘তামাদি আইন’-এর শর্তাবলি পূরণ করতে হবে। অপরদিকে, যারা তাদের জমি অন্যকে ভাড়া দেন বা কেয়ারটেকারের মাধ্যমে পরিচালনা করেন, তাদের উচিত চুক্তিপত্র সম্পাদন করা এবং প্রয়োজন হলে সময়মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

জমি একটি মূল্যবান সম্পদ। দখল ও মালিকানার ব্যাপারে অসচেতনতা থেকে অনেকেই ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়েন। তাই জমি নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×