নিশাঙ্কাকে ফিরিয়েও অস্বস্তি টাইগারদের

তৃতীয় দিনের তপ্ত রোদে টাইগারদের ভয়ের কারণ ছিল ক্রিজে থিতু হয়ে থাকা পাতুম নিশাঙ্কাকে নিয়ে। শেষ বিকেলে ব্যক্তিগত ১৮৭ রানে নিশাঙ্কাকে হাসান মাহমুদ ক্লিন বোল্ড করে সাজঘরে ফেরালেও অস্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কারণ টাইগাররা পাহাড়সম ৪৯৫ রান করলেও কঠিন জবাব দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। সাবলীল ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখছেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। দিনশেষে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। সফরকারীরা এগিয়ে রয়েছে ১২৭ রানে।
১৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ২২ গজ ছেড়েছেন নিশাঙ্কা। এটি করতে পারলে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেতেন তিনি। ইনিংসের ৮৫.৩ ওভারে ফুল লেন্থের দারুণ ইনসুইং পেসার হাসান মাহমুদের, নিশাঙ্কা স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে চাইলেন। কিন্তু বলের মুভমেন্ট বুঝতেই পারেননি লঙ্কান ওপেনার। ব্যাট-প্যাডের মাঝ দিয়ে লালবাতি জ্বালিয়ে দিল মিডল স্টাম্পের। কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭ ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৭ রানে অপরাজিত থেকে আজ আবার ব্যাটিংয়ে নামবেন। এই দুই ব্যাটার ইতোমধ্যে পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েছেন।
বৃহস্পতিবার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ  স্কোর বোর্ডে যোগ করতে পারে আর ১১ রান। শেষ ব্যাটসম্যান নাহিদ রানাকে ফিরিয়ে আসিথা ফার্নান্দো দেখা পান চতুর্থ শিকারের। সব মিলিয়ে ৪৯৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে দুর্দান্ত খেলছে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় দিন ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৩.৯৫ হারে। ওপেনিংয়ে নেমে পাতুম নিশাঙ্কা ধীরেসুস্থে এগোতে থাকলেও সফরকারীদের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন আরেক ওপেনার লাহিরু উদারা। ৭৫ বলে ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়তে অবদান রাখেন নিশাঙ্কা ও উদারা। ১৩ তম ওভারের প্রথম বলে উদারাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন তাইজুল।

অভিষেকে দারুণ করা ব্যাটসম্যান ৩৪ বলে ৬ চারে ২৯ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। সেই ধাক্কাকে পাত্তা না দিয়ে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যায় দারুণভাবে। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা দিনেশ চান্দিমাল ও নিশাঙ্কা জুটি নিশ্চিন্তে প্রথম সেশন পার করে দেন। লাঞ্চের বিরতির পর ১৩৬ বলে নিশাঙ্কা তুলে নেন ক্যারিয়ারের সপ্তদশ টেস্টে তৃতীয় শতক। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ১২৭। এরপর ফিফটি পেয়েছেন চান্দিমাল।

টেস্টে এটা চান্দিমালের ৩৩ তম ফিফটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটা পঞ্চম। দ্বিতীয় উইকেটে ২৩৮ বলে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন দুই ব্যাটার। ৫২তম ওভারের পঞ্চম বলে চান্দিমালকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। লেগ স্লিপে সাদমান ইসলাম ক্যাচ ধরে উল্লাস শুরু করলে উইকেটে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন চান্দিমাল। টিভি আম্পায়ার যাচাই-বাছাই করে লঙ্কান ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করেন।
ফেরার আগে ১১৯ বল খরচায় ৪ চারে ৫৪ রান করেছেন চান্দিমাল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে এখন তার সেঞ্চুরি ও ফিফটি সমান ৫টি করে। ৩৫ বছর বয়সী এই ব্যাটার ফেরার পর ব্যাটিংয়ে নামেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। ডাগআউট থেকে উইকেটে পৌঁছানোর সেই সময় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন ম্যাথুসকে। নিশাঙ্কার সঙ্গে ৮৯ রানের জুটি হয় তার। কিন্তু বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৯ রানে ফিরতে হয় এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে। থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। খ কালীন বোলার মুমিনুলের শিকার হয়েছেন ম্যাথুস।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মোটামুটি বলও করতেন মুমিনুল হক। এখন বল হাতে কমই দেখা যায় তাকে। এদিন নিজের তৃতীয় ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে ম্যাথুসকে ফিরিয়ে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন। ১৯ মাস পর টেস্টে উইকেট পেয়েছেন মুমিনুল। সবশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
চালিয়ে খেলে ২০১ বলে দেড়শ’ করা নিশাঙ্কা হাঁটছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির পথে। তবে ২৫৬ বলে ১৮৭ রানে হাসান মাহমুদের নতুন বলে শিকার হয়েছেন তিনি। ২১ চার ও ১টি ছক্কার মারে ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি। দিনের বাকি সময়টায় ভালো ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে আরও এগিয়ে নেন কামিন্দু মেন্ডিস ও অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেছেন তাইজুল ইসলাম, মুমিনুল হক, হাসান মাহমুদ ও নাঈম হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯৫/১০।
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯৩ ওভারে ৩৬৮/৪ (নিশাঙ্কা ১৮৭, উদারা ২৯, চান্দিমাল ৫৪, ম্যাথুস ৩৯, কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭*, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১৭*; হাসান ১২-২-৪৯-১, নাহিদ রানা ১৬-০-৮০-০, তাইজুল ৩৪-৩-১২৬-১, নাঈম ২৫-০-৮৬-১, মুমিনুল ৬-০-২৪-১)।