
ছবি: সংগৃহীত
মানব পাইলটের বিরুদ্ধে বাস্তব যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিমান। সুইডেনের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান সাব (Saab) ঘোষণা দিয়েছে, তাদের তৈরি Gripen E ফাইটার জেট সফলভাবে তিনটি পরীক্ষামূলক যুদ্ধ মিশনে অংশ নিয়েছে, যার নিয়ন্ত্রণে ছিল AI সফটওয়্যার ‘Centaur’।
সুইডেনের বেসামরিক আকাশসীমার মধ্যেই এই পরীক্ষা চালানো হয় মে ২৮ থেকে জুন ৩ পর্যন্ত। প্রতিটি যুদ্ধই সংঘটিত হয় দৃষ্টিসীমার বাইরে (beyond visual range)। এই উদ্যোগ ছিল সুইডিশ প্রতিরক্ষা সংস্থার ‘ফিউচার ফাইটার কনসেপ্ট’ প্রকল্পের অংশ।
বাস্তব যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মুখোমুখি: AI বনাম মানুষ
Gripen E-তে জার্মান কোম্পানি Helsing-এর তৈরি ‘Centaur AI’ ইন্টিগ্রেট করে পরিচালনা করা হয় এই পরীক্ষা। তৃতীয় ফ্লাইটে, AI-চালিত Gripen E-এর বিপক্ষে ছিল মানব পাইলট দ্বারা চালিত Gripen D।
প্রথম দুই ফ্লাইটে AI বিমানের চালনায় অংশ নিলেও মূলত গুলি চালানোর সংকেত দিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় পরীক্ষায় সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা বিশ্লেষণ, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েছিল Centaur নিজেই। বিভিন্ন গতি, দূরত্ব ও কোণ থেকে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা হয় AI-এর স্থিতিশীলতা এবং রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা।
Centaur AI নিজে থেকেই সেন্সর ব্যবহার করে শত্রু লক্ষ্য সনাক্ত করে, যথাযথ কৌশলগত পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয় এবং গুলি চালনার সময়সীমাও ঠিক করে।
৫০ বছরের পাইলট অভিজ্ঞতা কয়েক ঘণ্টায়
Helsing-এর সহসভাপতি আন্তোয়ান বোর্দেস বলেন, Centaur কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রশিক্ষণের সময় ৫ লাখ ঘণ্টারও বেশি সিমুলেটেড ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। এই সময়ের মধ্যে AI বিভিন্ন যুদ্ধ কৌশল রপ্ত করে এবং অপ্রচলিত আকাশযুদ্ধ কৌশল শনাক্ত করে। তার প্রশিক্ষণ ছিল আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—বিশেষত লক্ষ্য নির্ধারণ, দ্রুত অভিযোজন এবং নির্ভুল ম্যানুভারের উপর জোর দেওয়া হয়।
AI সরাসরি অ্যাভিওনিক্স সিস্টেমে, আলাদা প্রসেসরের দরকার হয়নি
সাব-এর এডভান্সড প্রোগ্রামের প্রধান পিটার নিলসন বলেন, ‘Centaur AI-কে বিমানের মূল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আলাদা প্রসেসরের প্রয়োজন হয়নি।’
এর ফলে দ্রুত সফটওয়্যার আপডেট দেওয়া, পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন, এবং পরবর্তী সংশোধন সম্ভব হয়েছে। পুরো প্রযুক্তি বিমানের ক্রিটিকাল সার্টিফিকেশনেও কোনো প্রভাব ফেলেনি।
AI-এর কৌশলে মানুষের ছায়া
সাব-এর চিফ ইনোভেশন অফিসার মারকাস ওয়ানডট নিজেই একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘Centaur AI সবসময় নিয়ম মেনে উড়েছে, কোনো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়নি, এবং মানুষের মতো কৌশলগত প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন এমন কৌশল ব্যবহার করছে যা অনেক ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ পাইলটদের কাছেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রূপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ব্যবধান আরও কমে আসবে।’
ভবিষ্যতের যুদ্ধপটের দ্বার খুলে গেল?
সাব এবং হেলসিং যৌথভাবে জানায়, ফ্লাইট ডেটা বিশ্লেষণ চলছে এবং ২০২৫ জুড়েই আরও পরীক্ষামূলক মিশন চালানো হবে। তবে কবে নাগাদ এই প্রযুক্তি পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা এখনো জানানো হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফলতা প্রমাণ করল যে AI শুধু তথ্য বিশ্লেষক নয়, বাস্তব যুদ্ধের প্লেয়ার হিসেবেও জায়গা করে নিচ্ছে। Gripen E-এর মতো বিদ্যমান জেটেই AI ইন্টিগ্রেশন সম্ভব হওয়ায় আগামী দিনে বহু যুদ্ধবিমানেই এমন প্রযুক্তি যোগ করা যেতে পারে, যা বদলে দিতে পারে আকাশযুদ্ধের চেহারা।
সূত্র: https://itc.ua/en/news/world-s-first-gripen-e-fighter-jet-under-ai-control-tested-in-combat-against-a-live-pilot/
রাকিব