
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, বিরোধী দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ প্রদান, নারী প্রতিনিধিত্ব এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিদ্যমান পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে প্রাথমিক ঐকমত্য হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আলোচনায় দেশের ২৯টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের একমত হওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। আমাদের বিভাজিত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাজনৈতিক দলগুলো খুব কম বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের সক্রিয় প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। সরকারি হিসাব, অনুমিত হিসাব, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষ অধিকার-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি- এই চারটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে নেওয়া হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যগণ পূর্ণ স্বাধীন থাকবেন।
বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবে প্রথম পর্বের আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ২ জুন দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ জুন দ্বিতীয় পর্বের বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়। সেদিন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঈদ-পরবর্তী বৈঠকে আগের তিনটির সঙ্গে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ১০০টি করে সরাসরি ভোটের বিধান করার প্রস্তাবে গতকালও ঐকমত্য হয়নি। এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে।
ভুলে গেলে চলবে না, নারীরা আমাদের মা, বোন, কন্যা ও স্ত্রী। তাদের অবদান আমাদের জীবনে কোনো অংশেই কম নয়। এমনকি ইসলাম ধর্মও নারীকে উচ্চ সম্মান দিয়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। সুতরাং তাদের পেছনে ফেলে কল্যাণকর, অগ্রগামী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রত্যাশা করা যায় না। নারী পারবে না, এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আলোচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে এক ধরনের ঐকমত্য হলেও কোনো কোনো দল নীতিগতভাবে দ্বিমত পোষণ করেছে। তবে এখনো ঐকমত্য হয়নি উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা নিয়ে। বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। এই বিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা পাবেন। এতে দলকানা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে একটি উদার, সহনশীল ও সাহসী রাজনৈতিক মনোভাবে তৈরি হবে সংসদ সদস্যদের মাঝে।
প্যানেল