ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে বাংলাদেশি নাগরিক

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৯ জুন ২০২৫

ইরানে বাংলাদেশি নাগরিক

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় পড়াশোনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ নানা কারণে বহু বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন ইরানে। সরকারি হিসাবে বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ২ হাজার বাংলাদেশির মধ্যে ৪০০ জনের মতো রয়েছেন তেহরানে। ইসরাইলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। তাই জরুরি প্রয়োজনে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যেন যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ‘হটলাইন’ চালু করেছে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস। সেই সঙ্গে ঢাকায়ও আরেকটি ‘হটলাইন’ চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ জন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে যোগাযোগ করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে দূতাবাসের ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আশার কথা এই যে, ইতোমধ্যে তেহরানে থাকা বাংলাদেশিদের রাজধানীর বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হলে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে যদি একদিনের জন্যও যুদ্ধবিরতি হয়, তখনই সবাইকে ইরানের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। তবে কখন সেই সুযোগ সৃষ্টি হবে তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। 
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির উত্তাল পরিস্থিতি একাধিকভাবে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। একদিকে ইরান-ইসরাইল সংঘাতের উত্তেজনার পারিপার্শ্বিকতায় মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তা ও বাণিজ্য প্রবাহেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই দুই বিষয়েই এখন জরুরি ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় কূটনীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ নাগরিকদের জীবন হুমকিতে পড়বে নিঃসন্দেহে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের দূতাবাস ও কনস্যুলেট পর্যায়ে জরুরি তথ্য সংগ্রহ করে ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নাম, ঠিকানা ও কর্মস্থলের তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে গেলে বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করাও জরুরি। 
শক্তিধর রাষ্ট্রের যে কোনো সংঘাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চেইন, বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় গভীর প্রভাব পড়ে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তেলের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ও মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে। এজন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দেশের প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। বিকল্প আমদানি উৎস খুঁজে বের করার পাশাপাশি বাণিজ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় নতুন বাজার খুঁজতে হবে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে হলে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কার্যকর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

প্যানেল

×