ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

সেলফি ক্যামেরাই জানাবে মুডের পূর্বাভাস, বলবে আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না!

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫২, ১৯ জুন ২০২৫

সেলফি ক্যামেরাই জানাবে মুডের পূর্বাভাস, বলবে আপনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন কি না!

ছবি: প্রতীকী

আপনার ফোনের সামনের ক্যামেরা (সেলফি ক্যামেরা) এখন শুধু সেলফি তুলবে না—বলবে আপনি বিষণ্ণ কি না, চিকিৎসা কাজ করছে কি না। এমনকি মুড কবে খারাপ হতে পারে তার পূর্বাভাসও দেবে!

ভবিষ্যতের এই প্রযুক্তি বাস্তবে রূপ পেয়েছে একটি অ্যাপের মাধ্যমে, যার নাম ‘এমোবট (Emobot)’। বর্তমানে শত শত রোগী এটি ব্যবহার করছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে। দিনের বিভিন্ন সময়ে মুখের অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করে এই অ্যাপ একটি বিশ্লেষণমূলক রিপোর্ট তৈরি করে, যা স্টেপ কাউন্ট বা হার্টবিট গ্রাফের মতোই দেখতে।

ফরাসি উদ্ভাবক স্যামুয়েল লারম্যানের নেতৃত্বে তৈরি এই সফটওয়্যারটিকে ফ্রান্সে একটি মেডিকেল ডিভাইস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এটি ইতোমধ্যেই মনোরোগ চিকিৎসকদের সহায়তায় নির্ধারিত রোগীদের ব্যবহারের জন্য প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে।

কীভাবে কাজ করে এই সফটওয়্যার?

লারম্যান বলেন, ‘অ্যাপটি চালু থাকলে ক্যামেরাটি সবসময়ই খোলা থাকে। শুরুতে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। ভেবেছিলাম, মানুষ এটাকে হয়তো অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখবে।’ তবে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া ছিল মোটামুটি ইতিবাচক।

অ্যাপটি আপনার ফোনেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে, কোনো ছবি বা ভিডিও সার্ভারে পাঠায় না, এমনকি সংরক্ষণও করে না।

পরবর্তী সংস্করণে অ্যাপটি ফোনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে আপনার কথার সুর ও টোন বিশ্লেষণ করবে—আপনার দৈনন্দিন স্বরভঙ্গি থেকেই বোঝা যাবে আপনি কি উদ্বিগ্ন, ক্লান্ত না কি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

সুখী না বিরক্ত—মুখই বলবে সব

এই প্রযুক্তির একটি নমুনা প্রদর্শিত হয় প্যারিসে অনুষ্ঠিত ভিভাটেক ২০২৫ সম্মেলনে। সেখানে ব্রিটিশ সাংবাদিক জেন মিলসের মুখ স্ক্যান করে অ্যাপ দেখায় যে তিনি একসঙ্গে ‘খুশি’ এবং ‘বিরক্ত’—অবশ্যই তার মুখের ভঙ্গির বিচারে।

লারম্যান বলেন, ‘এই অ্যাপ শুধু রোগীর মানসিক অবস্থার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে না, হঠাৎ মুড খারাপ হওয়া বা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ছে কি না—সেটাও সনাক্ত করতে পারে। চিকিৎসকরা সহজেই বুঝতে পারেন কোন থেরাপি কতটা কাজ করছে।’

মানসিক স্বাস্থ্যই এখন অগ্রাধিকার

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সম্মেলনগুলোর একটি VivaTech 2025-এ এবার স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৫০টির বেশি দেশের ১৪,০০০ স্টার্টআপ অংশ নেয় এ আয়োজনে।

যদিও পুরো আয়োজনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, অনেকেই মনোযোগ দিয়েছেন AI-এর মানবিক ব্যবহারে—বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে শুধু মানসিক রোগ শনাক্তেই নয়, কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি বা একাগ্রতা হারানোর সময়ও জানাতে সক্ষম হবে। অফিস কর্মীদের স্ক্রিনের সামনে থাকা-না-থাকার বাস্তবতা যাচাইয়ে এরইমধ্যে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

গোপনীয়তা বনাম প্রযুক্তি

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—আপনার ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন সারাক্ষণ সচল থাকবে, এটা কি প্রাইভেসির জন্য হুমকি নয়?

এ প্রসঙ্গে লারম্যান আশ্বস্ত করেছেন, ‘সব প্রক্রিয়া ব্যবহারকারীর ফোনেই হয়, কোনো ডেটা বাইরে পাঠানো হয় না।’ তবুও প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন অ্যাপ ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা এবং সম্মতির বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×