ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কঠোর অবস্থানে মাইক্রোসফট

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪৪, ১৯ জুন ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কঠোর অবস্থানে মাইক্রোসফট

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

টেক জগতে এক নাটকীয় অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাইক্রোসফট ও ওপেনএআইয়ের মধ্যে চলমান উচ্চমূল্যের আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। সূত্রগুলো জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া টেনশনের মধ্যে মাইক্রোসফট আলোচনা টেবিল থেকে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এই সম্ভাব্য বিচ্ছেদ টেক ইন্ডাস্ট্রিতে সৃষ্টি করতে পারে ভূমিকম্পের মতো প্রভাব।

মাইক্রোসফটের সিইও স্যাটিয়া নাদেলা ও ওপেনএআইয়ের প্রধান সাম আল্টম্যানের মধ্যে চলমান এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চ্যাটজিপিটি ও ডিপমাইন্ডের মতো এআই টুলসের নিয়ন্ত্রণ। গত বছর মাইক্রোসফট ওপেনএআইতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলেও, এখন সংস্থাটি এআই গবেষণায় আরও স্বাধীনতা চাইছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ের এক্সক্লুসিভ লাইসেন্সিং চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে, যা বর্তমানে ওপেনএআইয়ের প্রযুক্তি অন্য কাউকে লাইসেন্স দিতে বাধা দেয়।

এই সংকটের পটভূমি তৈরি হয়েছে গত নভেম্বরে, যখন ওপেনএআই বোর্ড সাম আল্টম্যানকে অপসারণ করেছিল, মাত্র কয়েক দিন পর মাইক্রোসফটের চাপে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ের গভর্ন্যান্স কাঠামো পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, নাদেলা ওপেনএআইয়ের বোর্ডে মাইক্রোসফটের জন্য প্রতিনিধিত্ব চান, যা বর্তমানে একটি অলাভজনক সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

এই টানাপোড়েনের মধ্যেও বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। নাসডাকে মাইক্রোসফটের শেয়ার মূল্য গত ২৪ ঘণ্টায় ১.২% কমেছে, অন্যদিকে ওপেনএআইয়ের কিছু কর্মী প্রকাশ্যে তাদের অসন্তোষ জানিয়েছেন। এআই গবেষক ইলিয়া সুৎস্কেভার টুইটে লেখা, "এআই বিকাশে স্বাধীন গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ, কর্পোরেট প্রভাব নয়," এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফট যদি সত্যিই ওপেনএআই থেকে সরে আসে, তাহলে তারা হয়তো নিজস্ব এআই গবেষণা ত্বরান্বিত করবে। গত মাসেই সংস্থাটি ৩.২ বিলিয়ন ডলারে এআই স্টার্টআপ ইনফ্লেকশন একোয়ার করেছে। অন্যদিকে, ওপেনএআইয়ের জন্য মাইক্রোসফটের সমর্থন ছাড়া চলা চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ তাদের ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বড় অংশই অ্যাজুরের উপর নির্ভরশীল।

এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট - এআই খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই আলোচনা একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। টেক জায়ান্টদের এই লড়াই শুধু দুটি সংস্থারই নয়, বরং পুরো মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কে নিয়ন্ত্রণ করবে সেই প্রযুক্তি যা আগামী দিনের সমাজ গঠন করবে।

সাব্বির

×