ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

দীর্ঘমেয়াদে মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত করে তুলছে দৃশ্যদূষণ

মাহফুজুর রহমান

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৮, ১৯ জুন ২০২৫

দীর্ঘমেয়াদে মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত করে তুলছে দৃশ্যদূষণ

কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে ‘দৃশ্যদূষণ’ নিয়ে বলতে গিয়ে দেখি অনেকেই এই টার্মটির সাথে পরিচিত নয়। তখনই ভেবেছিলাম এই বিষয়ে লেখালেখি, আলোচনা হওয়া উচিত।

স্বাভাবিক দেখাকে বিঘ্নিত করাই হলো ‘দৃশ্যদূষণ’। ধরুন, আমি একটি সুন্দর বিল্ডিং তৈরি করলাম আর আপনি এসে চারপাশে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে গেলেন, তারের জঞ্জাল দিয়ে ঢেকে দিলেন; অথবা পাবলিক প্লেসে কিছু সুন্দর গাছ আছে তার উপরে কেউ ফেস্টুন ঝুলিয়ে দিল, সেটাই ‘দৃশ্যদূষণ’। এই জিনিসগুলোকে যতটা হালকাভাবে নেওয়া হয়, জিনিসটা আসলে ততটা হালকা নয়। দৃশ্যদূষণের সবচেয়ে ছোট ক্ষতি হলো চোখের স্ট্রেস। এছাড়া এটি মনোযোগে ডিস্ট্রাকশন এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিকভাবে বিক্ষিপ্ত করে তোলে। এসব ক্ষতির কথা বাদ দিন! সুন্দর, সাজানো-গোছানো জিনিস দেখতে কার না ভালো লাগে? নতুন বাংলাদেশ গড়ার এই সময়ে আমাদের দৃশ্যদূষণের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।

এর সমাধান খুব বেশি কঠিন নয়। উদাহরণ হিসেবে আমাদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই বলি। ক্যাম্পাসে কোনো পোস্টার লাগাতে অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই আইন দিয়েও কাজ হতো না, যদি পোস্টার টানানোর যথেষ্ট নির্ধারিত স্থান না থাকত। যদিও অনেক সময় বিভিন্ন ক্লাবগুলোকে কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এবং নির্ধারিত জায়গার বাইরে ব্যানার-পোস্টার লাগাতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সামনের দেয়ালগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা, যা নিজে থেকেই নান্দনিক এবং যেখানে চাইলেও অযাচিত জিনিসপত্র লাগানো যাবে না।

লার্জ স্কেলে চট্টগ্রাম শহরের ফ্লাইওভার উদাহরণ হতে পারে। ওখানে ফ্লাইওভারের পিলারগুলো কার্পেটিং করে সাথে একটা করে বিজ্ঞাপনের বোর্ড, যেটি সিটি করপোরেশন একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। কার্পেটের পরিবর্তে ন্যাচারাল গ্রিন করতে পারলে আরও ভালো হতো। তবে ঢাকা সিটি করপোরেশন দৃশ্যদূষণ রোধে যেটি করেছে, সেটি আমার মতে আয়োজন করে দৃশ্যদূষণ করা। পিলারগুলোতে যেভাবে রঙ-বেরঙের আঁকাআঁকি করেছে, তা চোখকে আরও বিক্ষিপ্ত করে। ক্যাবল ম্যানেজমেন্টের উদাহরণ হিসেবে সিলেট আছে। রাজশাহী শহরও বেশ সাজানো-গোছানো।

দৃশ্যদূষণ কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন কিছুটা হলেও মোকাবিলা করা যায়। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে একটার ওপর আরেকটা, একটার জায়গায় দশটা পোস্টার লাগানো হয়। পরিকল্পিতভাবে করলে সেখানে একটা পোস্টারই আমার বার্তাটি পৌঁছাতে পারবে। তাহলে আমার ৯টা পোস্টারের কাগজ বাঁচবে, ক্ষতিকর কালি কম ব্যবহার হবে, কার্বন এমিশনও কম হবে। আর পিভিসি ব্যানারের কথা কী বলব! অনেকে দেখি ‘ট্রি প্লান্টেশন’ কর্মসূচিতেও পিভিসি ব্যানার প্রিন্ট করে। এমনকি পরিবেশ সচেতনতার সভা-সমাবেশ-মানববন্ধনের জন্যও পিভিসি ব্যানার প্রিন্ট করতে দেখা যায়।

আমি বিজ্ঞাপন বা প্রচারণার বিরুদ্ধেই নই। তবে জিনিসটা বিদঘুটে না করে অনেক নান্দনিকভাবেও করা যায়, যেটি মানুষকে বিক্ষিপ্ত না করে কাছে টানবে।

এগুলো ছাড়াও অনেকভাবে দৃশ্যদূষণ হয়; যেমন: গাছের মগডালে ঝুলে থাকা পলিথিনের ব্যাগ, ফুটপাতজুড়ে সারি সারি অস্থায়ী দোকান, নর্দমাগুলো থেকে উথলে পড়া নোংরা পানি ও ময়লা, নির্মাণাধীন রাস্তা ও ভবনগুলোর ছড়ানো-ছিটানো ম্যাটেরিয়াল, সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই ইচ্ছেমতো ডিজাইনে বানানো রঙবেরঙের ভবন, সুন্দর সুন্দর ভবনের গায়ে ঝোলানো অসংখ্য এসির বাক্স, অ্যান্টেনা, যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ি। এসব দৃশ্যদূষণ আমাদের মানসিক চাপ তৈরি করে, চোখকে ক্লান্ত ও ভিজ্যুয়াল সেন্সরকে বিক্ষিপ্ত করে।

 

লেখা: মাহফুজুর রহমান , চতুর্থ বর্ষ, স্থাপত্য ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সানজানা

×