ছবি: সংগৃহীত
বিদেশ থেকে ফেরার সময় যাত্রীরা সাধারণত নিজের স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনের জন্য নানা ধরনের উপহারসামগ্রী এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে আসেন। এসব সামগ্রী আনার জন্য সরকার বিশেষ একটি সুবিধা দিয়ে থাকে, যার নাম ‘ব্যাগেজ রুল’। এ নিয়মের আওতায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিনা শুল্কে এবং কিছু নির্দিষ্ট শুল্ক-কর পরিশোধ করে আনা যায়। এসব পণ্য আনার জন্য কোনো ঋণপত্র (এলসি) খোলার প্রয়োজন হয় না। সরকার দু-এক বছর পর পর ব্যাগেজ রুলে কিছু পরিবর্তন আনে। এবারের (২০২৪-২৫ অর্থবছরের) বাজেটেও ব্যাগেজ রুলে কিছু উল্লেখযোগ্য সংশোধন করা হয়েছে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ১২ বছর বা এর বেশি বয়সী একজন যাত্রী ৬৫ কেজি ওজন পর্যন্ত ব্যাগেজ শুল্ক ও কর ছাড়াই খালাস করতে পারবেন। ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীদের জন্য এ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ কেজি। ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী, মোট ১৯ ধরনের পণ্য বিনা শুল্কে আনা যাবে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, একটি নতুন মোবাইল, ১৫ বর্গমিটার আয়তনের কার্পেট, ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত টেলিভিশন, ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, কম্পিউটার স্ক্যানার, প্রিন্টার, ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল বা স্টিল ক্যামেরা, ওভেন, মাইক্রোওয়েভ, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, গ্যাস ওভেন, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, জুসার, কফি মেকার, সেলাই মেশিন, টেবিল ফ্যান, ব্যক্তিগত খেলার সামগ্রী, ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার গয়না, এক কার্টন সিগারেট এবং সিডি ও স্পিকারসহ মিউজিক সিস্টেম।
অন্যদিকে, ১১ ধরনের পণ্য রয়েছে যেগুলো শুল্ক ও কর পরিশোধ করে আনা যাবে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ১১৭ গ্রাম ওজনের সোনার বার, যার জন্য ৪০ হাজার টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া রয়েছে ২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা রৌপ্যবার, ৩০ ইঞ্চির বেশি টেলিভিশন, হোম থিয়েটার, রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার, ডিশ অ্যান্টেনা, এইচডি ক্যামেরা, ঝাড়বাতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আনা এয়ারগান এবং ডিশওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন বা ক্লথ ড্রায়ার। এসব পণ্যে শুল্ক-কর দিতে হয় ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এবারের বাজেটে ব্যাগেজ রুলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, এখন থেকে বিদেশফেরত একজন যাত্রী বছরে একবার সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি সোনার বার আনতে পারবেন, যার জন্য প্রতি ভরিতে (১১.664 গ্রাম) ৫ হাজার টাকা হারে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে একজন যাত্রী যতবার খুশি ততবার ১০০ গ্রাম পর্যন্ত সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনতে পারতেন। এখন থেকে বছরে একবারই সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম সোনার গয়না বিনা শুল্কে আনার সুযোগ থাকবে। একইভাবে, প্রতিবছর একজন যাত্রী দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং একটি নতুন মোবাইল ফোন আনতে পারবেন কোনো শুল্ক-কর ছাড়া।
এইসব পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার ব্যাগেজ রুলকে আরও সুশৃঙ্খল ও বাস্তবমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে যাত্রীরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বৈধভাবে আনতে পারেন, আবার শুল্ক ফাঁকিও রোধ করা যায়।
ছামিয়া
