ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

হারবাল সাপ্লিমেন্টে যকৃৎ ও কিডনির ভয়াবহ ক্ষতি, বলছেন চিকিৎসকেরা

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ১৯ জুন ২০২৫

হারবাল সাপ্লিমেন্টে যকৃৎ ও কিডনির ভয়াবহ ক্ষতি, বলছেন চিকিৎসকেরা

ছবি: সংগৃহীত

গ্রিন টি, অশ্বগন্ধা, কাঁচা হলুদ বা অ্যালোভেরা—এই নামগুলো শুনলেই আমাদের মাথায় আসে প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর এক বিকল্পের ছবি। হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা ভেষজ খাবার-ঔষধ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিয়মিত গ্রহণ করছেন, বিশেষ করে প্রাকৃতিক চিকিৎসায় আস্থা রাখা জনগোষ্ঠী। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা ও চিকিৎসা পর্যালোচনায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র—হারবাল সাপ্লিমেন্টই নীরবে মারাত্মক ক্ষতি করছে যকৃত (লিভার) ও কিডনির, যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান বলছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ৮০ শতাংশ নাগরিক কোনও না কোনওভাবে হারবাল চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। অথচ এসব সাপ্লিমেন্ট অনেক ক্ষেত্রেই থাকে অপরীক্ষিত, ভেজালযুক্ত বা বিপজ্জনক রাসায়নিকে পরিপূর্ণ।

হারবাল সাপ্লিমেন্ট কী?

পাতা, মূল, বীজ বা ফুল থেকে তৈরি হয় এই ধরনের প্রাকৃতিক সাপ্লিমেন্ট। এগুলো পাউডার, ক্যাপসুল, চা বা এক্সট্রাক্ট হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। মানসিক চাপ কমানো, শক্তি বাড়ানো, ওজন কমানো—বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্রি হয় এরা। ‘প্রাকৃতিক’ বলেই অনেকে ধরে নেন এটি নিরাপদ। কিন্তু সব প্রাকৃতিক জিনিস নিরাপদ নয়—এ কথা বহু প্রমাণেই উঠে এসেছে।

যকৃৎ (লিভার)-এর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব

লিভার আমাদের শরীরের প্রধান ডিটক্স অঙ্গ। আর সেখানেই প্রথম হানা দেয় এসব সাপ্লিমেন্ট:

গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট (GTE): ওজন কমানোর নামে জনপ্রিয় হলেও এটি ৬০টির বেশি লিভার ইনজুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রায় (৬৫৬ মিগ্রা দিনে দু’বার) খেলে লিভার এনজাইম বেড়ে যায় ৭ গুণ!

অশ্বগন্ধা: আয়ুর্বেদে যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, পাঁচজন রোগীর উপর করা ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়—জন্ডিস, চুলকানি ও লিভার এনজাইম বেড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেছে।

আরিস্টোলোকিক অ্যাসিড (Aristolochic acid): চীনা হারবাল ঔষধে ব্যবহৃত এই উপাদানটি ক্যান্সারসৃষ্টিকারী ও লিভার-কিডনি উভয়ের জন্য বিষাক্ত। ১৯৯০-এর দশকে বেলজিয়ামে শতাধিক রোগী কিডনি ফেইলিওর-এ আক্রান্ত হয় এই কারণে।

ভেজাল ও ভারী ধাতু: অনেক ভেষজ সাপ্লিমেন্টে ক্যাডমিয়াম বা অ্যাফ্লাটক্সিন পাওয়া গেছে যা লিভার ও কিডনি দুটোতেই বিষক্রিয়া ঘটায়।

কিডনির বিপদও কম নয়

আকস্মিক কিডনি বিকল: ২০২০ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিভিন্ন ভেষজ চা ও ডেকোকশন খেয়ে অনেক রোগীর হঠাৎ কিডনি ফেইলিওর হয়েছে।

সেনা চা: ল্যাক্সেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত এই চা দীর্ঘদিন খেলে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কিডনিতে চাপ পড়ে, ফলে ধীরে ধীরে কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে।

লিকোরিস রুট: এটি পটাশিয়াম কমিয়ে, রক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনির ক্ষতি করে।

ঝুঁকিপূর্ণ হারবাল সাপ্লিমেন্টগুলোর তালিকা

যকৃতের জন্য বিপজ্জনক:

  • গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট (৮০০ মিগ্রা/দিনের বেশি)
  • অশ্বগন্ধা (২–১২ সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতি শুরু)
  • হলুদ/কারকিউমিন (অটোইমিউন হেপাটাইটিস হতে পারে)
  • গার্সিনিয়া কাম্বোজিয়া
  • কাভা
  • ব্ল্যাক কোহোশ
  • কমফ্রে (FDA ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে)

কিডনির জন্য বিপজ্জনক:

  • আরিস্টোলোকিয়া
  • হেনা
  • সেনা চা
  • লিকোরিস রুট
  • অ্যালোভেরা (মুখে খাওয়া)

নিজে নিজে খেলে বিপদ বাড়ে

‘নেচারাল’ মানেই নিরাপদ—এমন ভাবনা বিপজ্জনক। ডোজের মান নির্ধারণ ছাড়াই যেভাবে এসব সাপ্লিমেন্ট বাজারে পাওয়া যায়, তাতে স্ব-চিকিৎসা মারাত্মক হতে পারে। একাধিক সাপ্লিমেন্ট একসাথে খাওয়া, ওষুধের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া—এসবই অজান্তে শরীরের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

হারবাল সাপ্লিমেন্ট উপকার করতে পারে ঠিকই, তবে যেকোনো হারবাল পণ্য গ্রহণের আগে জেনে নিন তার উপাদান, ইতিহাস, ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জন্ডিস, গা ফ্যাকাশে হওয়া, প্রসাব গাঢ় হওয়া, পেট ব্যথা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি—এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিন।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

রাকিব

আরো পড়ুন  

×