ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার, আত্মহত্যার হুমকি ব্যবসায়ীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১৯ জুন ২০২৫

বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার, আত্মহত্যার হুমকি ব্যবসায়ীর

ছবি: জনকণ্ঠ

বরিশালের বাকেরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোট ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বরিশাল জেলা আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী লোকমান সিকদার, উপজেলার বোয়ালিয়া বাজারে দেশ টেলিকম নামে একটি বিকাশ ব্যবসা পরিচালনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিজস্ব ভবনে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বুথে জমা দিয়ে আসছিলেন।

লোকমান জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪০ লাখ ৩১৯ টাকা ওই ব্যাংক বুথে জমা দিয়েছেন এবং প্রতিবার রশিদ গ্রহণ করেছেন। বুথটির দায়িত্বে ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।

তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, পূর্বে বিল পরিশোধ করা সত্ত্বেও পুনরায় সেই বকেয়া বিল আসছে কেন। বিষয়টি জানতে লোকমান ব্যাংক বুথে গেলে জানতে পারেন, ৪০ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ২৮ লাখ টাকা জমা হয়েছে, বাকিটা অনুপস্থিত। সাজ্জাদ বিষয়টি আঁচ করে চুপিসারে চট্টগ্রামে অন্য একটি শাখায় বদলি হয়ে যান।

লোকমান পরবর্তীতে বিষয়টি তৎকালীন ডিজিএম গোবিন্দ চন্দ্র দাসকে জানান। তিনি প্রাথমিকভাবে অফিসে জমা থাকা বিলের পুরোনো কাগজপত্র দেখতে দেন এবং অমিল দেখতে পেয়ে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। অভিযোগ করার পর কিছুদিনের মধ্যে ডিজিএম জানান, "এটা ব্যাংকের বিষয়, আপনি ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে আবেদন করুন।"

পরবর্তীতে লোকমান ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে আবেদন করলে ঈদের আগের একদিন সাজ্জাদ ও লোকমানের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠকের দিন নির্ধারণ হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে ব্যাংক ম্যানেজার বিষয়টি এড়িয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক ম্যানেজার, সাজ্জাদ ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং উল্টো লোকমানকে অবশিষ্ট টাকা দ্রুত পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

চরম আর্থিক চাপে পড়ে লোকমান জমি-জমা বিক্রি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। অবশিষ্ট সামান্য টাকা পরিশোধে সময় চেয়ে অনুরোধ জানালেও ডিজিএম বদলি হয়ে যান এবং ওই ব্যাংক বুথটি বন্ধ হয়ে যায়।

অবশেষে গত ২১ মে ২০২৫ ইং তারিখে লোকমান সিকদার বরিশালের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার নম্বর: ২০২৫/বাকেরগঞ্জ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নিজস্ব ভবনে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি বুথ চালু করা হয়, কিন্তু সাইনবোর্ডে শুধুমাত্র “বিদ্যুৎ বিল কালেকশন বুথ” লেখা ছিল। অধিকাংশ গ্রাহক জানতেন এটি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসেরই অংশ। ফলে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাজ্জাদ হোসেন নামের কর্মকর্তা চার মাসের বিল নিয়ে গ্রাহকের রশিদে “Paid” লিখে দিলেও জমা দিতেন অর্ধেক টাকা, বাকি টাকা আত্মসাৎ করতেন।

পরবর্তীতে গ্রাহকরা অফিসে গিয়ে বকেয়া বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীদের দ্বারা নাজেহাল হতে হতো এবং পুরোনো বিল আবারও পরিশোধ করতে বাধ্য হতেন।

গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মহিলা কর্মকর্তারা অভিযোগ জানাতে গেলে দুর্ব্যবহার করেন, কখনো কখনো শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয়। এছাড়াও লাইনম্যান ও অপারেটরদের ব্যবহার ‘সন্ত্রাসীদের’ মতো বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

এছাড়াও একাধিক অভিযোগ রয়েছে, কিছুদিন আগে অফিসের সাব-স্টেশনের কর্মীরা এক প্রতিবন্ধীকে গাছের ঢাল কাটাকে কেন্দ্র করে মারধর করে তার মুখের নিচের দাঁত ভেঙে দেন। গ্রাহক হয়রানি ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ বিদ্যুৎ অফিসকে ঘিরে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

এসব বিষয়ে বর্তমান ডিজিএম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে আমি অবগত নই।” এছাড়া আর কিছু বলতে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

প্রতারণার শিকার লোকমান সিকদার জানান, “আমি অফিসের চাপে জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেছি, অল্প কিছু টাকা এখনো বকেয়া আছে এজন্য ডিজিএম স্যারকে কয়েকদিন সময় চেয়ে গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার অনুরোধ করেছি। তিনি এসব কোনো অনুরোধ রাখতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। যদি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া পথ নেই। বিষয়টি আদালতের নির্দেশে তদন্তাধীন। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

শহীদ

×