
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) নাগরিক সেবা যেভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, তাতে এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে একটু সমস্যা চলছে। আমরা এ বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে নাগরিক সেবা যেভাবে বিঘিœত হচ্ছে, এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পুরাতন সভাকক্ষে ‘উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন পাবলিক লাইব্রেরি উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ডিএসসিসির মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন তার অনুসারীরা। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে, এখন সেই সুযোগ নেই। তারপরও চলছে আন্দোলন। ইশরাক হোসেন এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলছেন, আন্দোলন চলবে, তবে তাদের তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালু থাকবে।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার কনসার্ন আছে। এটি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। এই সরকার গুড কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। একই সঙ্গে আমরা যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলি, সেটা রক্ষা করতে গেলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। সেখানে স্বাভাবিক কার্যক্রম স্বভাবতই ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, যতটা সম্ভব বাইরে থেকে হলেও নাগরিক সেবা কন্টিনিউ রাখা এবং সেটা কাভার করা।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করার চেষ্টা করছি। তবে যেভাবে নাগরিক সেবা ডেডলকের (অচলাবস্থা) দিকে যাচ্ছে, আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। সরকারের উচ্চপর্যায় এটা নিয়ে কনসার্ন আছে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে যেটা সিদ্ধান্ত আসে, আমি সেটাই বাস্তবায়ন করব।
কতদিনে সিদ্ধান্ত হবে হবে- জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, কতদিন এভাবে চলবে- দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়টি নিয়ে আমরা কনসার্ন আছি উচ্চপর্যায়ে থেকে। এটা নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব একাধিক মিটিং করেছেন। সিটি করপোরেশনগুলো কনসার্ন আছে। সিটি করপোরেশনগুলোর কার্যক্রম সারফেসে আপনারা হয়তো দেখছেন না।
এটা নিয়ে ডেডিকেটেডলি আমরা আপনাদের ব্রিফ করব। কী কী উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি, কী কী উদ্যোগ আমরা নেব। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। এ নিয়ে আমরা খুব দ্রুত বিস্তারিত আলোচনা করব।
এ সময় কিছু এলাকার প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সেসব এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার উত্তরবঙ্গের দিকে কিছুটা বেশি। তাদের প্রতি আমাদের কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব এলাকায় গুদাম না থাকায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না ফসলের। ফলে আমরা সেসব এলাকায় গুদাম স্থাপন এবং প্রক্রিয়াকরণ জোনের জন্য উদ্যোগ নেব। তিস্তা নদীর ভাঙনের ফলে যারা গৃহহীন হয়েছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রিভিলেজের কারণে কোনো এলাকায় বেশি উন্নয়ন আর কোনো এলাকায় কম উন্নয়ন যাতে না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এমনটা যাতে আর না হয়। আমরা দেখেছি গোপালগঞ্জের একটি উপজেলায় গেলে দেখা যাচ্ছে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে আর রংপুরের আরেকটি জেলায় কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার খুব অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে। সুতরাং এই অল্প সময়ে লাইব্রেরি স্থাপনের মতো এ রকম উদ্যোগ নেওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং। আমরা মাত্র ২৩ কোটি টাকায় সারাদেশে ১১টি জেলার ৪৪টি পাবলিক লাইব্রেরি করছি। আমরা খুব দ্রুত দেশের সকল উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি করার প্রকল্প হাতে নেব। আমরা এমন একটা লাইব্রেরি করতে চাই যেখানে সবাই আসতে আগ্রহ করবে। অন্য সরকারি ভবনের মতো পড়ে থাকবে না।