ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

আ. লীগের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় জামায়াত সমর্থকসহ নির্দলীয়রা আসামি

তাসনিম আলম, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ১৬:২৯, ১৯ জুন ২০২৫

আ. লীগের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় জামায়াত সমর্থকসহ নির্দলীয়রা আসামি

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় জামায়াতের সমর্থক ও নির্দলীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৫ জুন পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইসলামবাগ এলাকার মো. জুয়েল রানা দেবীগঞ্জ থানায় ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৭২ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ৩০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। 

অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠক, সহিংসতা ছড়ানো, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং ইসলামী ব্যাংক ও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িতে হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তবে মামলার তালিকায় থাকা কয়েকজনের রাজনৈতিক পরিচয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার ৪০ নাম্বর আসামি মোকছেদুল ইসলাম এবং ৪১ নাম্বর আসামি বেলাল হোসেন টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পেছনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জামায়াতের সমর্থক মোকছেদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে গাজকাটী বাজারের পাশে আমি একটি জমি কিনেছিলাম এবং সেখানে বাড়িও নির্মাণ করেছি। জমিটি নিয়ে কিছুটা বিরোধ ছিল। মূলত ওই বিরোধকে কেন্দ্র করেই আমার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা এসে আমাকে বলেন, তুমি জমি কিনেছো, বাড়ি করেছো, এখন আমাদের সভাপতির সঙ্গে দেখা করো। তাহলে এক রাতেই মামলায় থেকে তোমার নাম কেটে যাবে। আমি তখন তাদের বলি- আমি তো জামায়াত করি, তাহলে আমার নামে কেন আওয়ামী লীগের মামলায় নাম আসবে? তারা তখন হুমকির সুরে বলে-যদি সভাপতির সঙ্গে দেখা না করো, তাহলে মামলাটা চালু থাকবে এবং যেকোনো সময় তোমাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

মামলার ৪১ নাম্বর আসামি বেলাল হোসেন বলেন, আমি ২০০৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী করি, নিয়মিত এয়ানত দেই। আমার আওয়ামী লীগের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তবুও আমার নামে আওয়ামী লীগের মামলা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে মামলার তালিকাভুক্ত ৩২ নাম্বর আসামি আব্দুল হাকিম বাক্কি এবং ২৮ নাম্বর আসামি হেলাল শেখ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন বলে জানা গেছে।

আব্দুল হাকিম বাক্কি একজন পেশাদার দলিল লেখক। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও একটি সালিসকে কেন্দ্র করে মামলায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার ছেলে মাজেদুল ইসলাম ইমু সরকার। 

মাজেদুল ইসলাম ইমু সরকার বলেন, আমার বাবা একজন দলিল লেখক। তার পেশার কারণেই সব দলের লোকজনের সাথে ওঠাবসা। তিনি ২০১২ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন কমিটির সদস্য পর্যন্ত ছিলেন না। সম্প্রতি দন্ডপাল ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত একটি শালিসে বিএনপি নেতাদের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়ায় তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ আমার বাবা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নন।

মামলার ২৮ নাম্বর আসামি হেলাল শেখ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেবীগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নৈশপ্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি ব্যবসার কাজে দেবীগঞ্জ ছাড়েন। অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দপুর উপজেলা যুবলীগের কমিটির কাগজ ফটোশপ দিয়ে ইডিট করে ১৩ নাম্বর সদস্যের জায়গায় হেলাল শেখের নাম সংযোজন করে সেই কমিটির কাগজ দিয়ে মামলায় যুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানে ফটোশপে যুবলীগের কমিটির কাগজ ইডিট করার প্রমাণ মিলেছে।

এ বিষয়ে হেলাল শেখ বলেন, আমি ২০২৩ সাল থেকে নিজস্ব ব্যবসার কাজে দেবীগঞ্জের বাহিরে থাকি। সৈয়দপুরে যুবলীগের যে কমিটিতে আমার নাম দেখানো হয়েছে সেটা কম্পিউটারে ইডিট করে আমার নাম বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। গাজকাটীতে আমার একটা জমি নিয়ে ঝামেলা ছিলো, ঐখানকার একটা কুচক্রী মহল আমার নাম মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় জামায়াত কর্মীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, দেবীগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় জামায়াতের সমর্থক মো. মোকছেদুল ইসলাম ও মো. বেলাল হোসেনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ৪০ ও ৪১ নাম্বর আসামি করা হয়েছে। তারা নিরপরাধ। বাদীর বাড়ি দেবীগঞ্জের বাইরে হওয়ায় স্থানীয় কিছু ব্যক্তির পূর্বশত্রুতার জেরে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং রাজনৈতিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির স্বার্থে তাদের নাম এজহার থেকে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. জুয়েল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি এবং আমি যতটা জেনে মামলাটি করেছি এই ৭২ জন আসামি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলো এবং আওয়ামী লীগের দোসর ছিলো। হতে পারে ৫ আগস্টের পরে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে এই মানুষগুলো হয়তো জামায়াতে গেছে কিংবা অন্য কোন সংগঠনে গেছে। ৫ আগস্টের পরে অনেক লোকেই তো অনেক সংগঠন পরিবর্তন করে পট পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় জাহির করতেছে।

জামায়াত সমর্থক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে সন্ত্রাস বিরোধী মামলায় কেন আসামি করার হয়েছে এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোয়েল রানার সরকারি মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

আবির

×