ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইহর রোমানেনকো

’রাশিয়ার এই বিশাল ভূখণ্ডই এখন হামলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র’

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ১৯ জুন ২০২৫

’রাশিয়ার এই বিশাল ভূখণ্ডই এখন হামলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র’

মস্কো থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দর ভ্লাদিভোস্টকের বিমানযাত্রা প্রায় নয় ঘণ্টা—দেশের ভেতরের এই একটি ফ্লাইটই রাশিয়ার ব্যাল্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃতির দুই-তৃতীয়াংশ অতিক্রম করে।

পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাশিয়ার দূরত্ব প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার (৬,২০০ মাইল)। দেশটির মোট আয়তন ১ কোটি ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার (৬৬ লাখ বর্গমাইল), যা পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১১ শতাংশ—চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং সৌদি আরবের সম্মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি।
যদিও এর দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল স্থায়ীভাবে জমাটবাঁধা মাটিতে (পারমাফ্রস্ট) ঢাকা, তবু এই বিশালতা একসময় রাশিয়াকে বাঁচিয়েছিল নানা বিদেশি আক্রমণ থেকে—হোক সেটা ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের গ্র্যান্ড আর্মি কিংবা ১৯৪১ সালে নাৎসি জার্মানি ও তার মিত্রদের ৩৮ লাখ সৈন্য।

কিন্তু সাবেক প্রদেশ ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ চতুর্থ বছরে গড়ালে এই বিশাল ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইহর রোমানেনকো  ব্যঙ্গ করে বলছিলেন “রাশিয়ার এই বিশাল ভূখণ্ডই এখন হামলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র” ।

সামরিক শীর্ষপদ থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত—নিজের বাড়ির গ্যারেজে বসে ড্রোন বানানো মানুষজন—সবাই মিলে ইউক্রেন যুদ্ধের নিয়ম-কানুন নতুনভাবে লিখছে, বাতিল করে দিচ্ছে রাশিয়ার পুরনো যুদ্ধকৌশল। এখন প্রমাণিত, ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার (১,২৩০ মাইল) সীমানা দুই দিক থেকেই অনায়াসে ভেদ্য।

অন্যদিকে, মস্কোর সোভিয়েত আমলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেগুলো মূলত ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে ডিজাইন করা—পশ্চিম রাশিয়ায় এত বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে যে সেগুলো ক্রমেই ইউক্রেনের জটিল ড্রোন আক্রমণের বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

এখন ইউক্রেনের ড্রোন হামলা মস্কো ও এর আশপাশের এলাকাগুলো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে—যেখানে রাশিয়ার বহু সামরিক কারখানা ও ঘাঁটি অবস্থিত।

সামরিক লক্ষ্যবস্তুর পাশাপাশি ইউক্রেন রাশিয়ার অর্থনীতির মূল স্তম্ভকেও টার্গেট করছে।

তেল শোধনাগার ও পাইপলাইনে ডজন ডজন হামলায় রাশিয়ার মোট রিফাইনিং ক্ষমতার প্রায় ১৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা।

এই হামলা ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় চালানো হয়। এতে রাশিয়ায় ছয় মাসের পেট্রোল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হয়, দেশে পেট্রোলের দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং প্রতিবেশী বেলারুস থেকে আমদানি শুরু করতে হয়।

এই ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই গুরুতর ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে সতর্ক করে—তেলমূল্য বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে চাপ সৃষ্টি না করার জন্য।

ইউক্রেন রাশিয়ার দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও কাজে লাগাচ্ছে—বিশাল দেশটি পাথুরে রাস্তায় পরিপূর্ণ এবং রেললাইনেই দেশজুড়ে রসদ সরবরাহের মূল ভরসা।

 

লেখা - মানসুর মিরোভালেভ

সূত্র - https://www.aljazeera.com/news/2025/6/19/in-its-war-on-ukraine-is-russias-vast-size-becoming-a-liability

 

সানজানা

×