
ছবি সংগ্রহীত
(পূর্ব প্রকাশের পর)
‘বেশ বলুন তাহলে, আমি শুনছি।’ আবার চোখ বন্ধ করলো হোমস।
‘এই হলো ঘটনা : পাঁচ বছর আগে, দীর্ঘ সময়ের জন্য ওয়ারশ গিয়েছিলাম আমি। সেখানে ইরিন এডলারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন তার সম্পর্কে?’
‘ডাক্তার, প্লিজ আমার ইনডেক্স
‘বেশ বলুন তাহলে, আমি শুনছি।’ আবার চোখ বন্ধ করলো হোমস।
‘এই হলো ঘটনা : পাঁচ বছর আগে, দীর্ঘ সময়ের জন্য ওয়ারশ গিয়েছিলাম আমি। সেখানে ইরিন এডলারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন তার সম্পর্কে?’
‘ডাক্তার, প্লিজ আমার ইনডেক্স কার্ডে একটু দেখো তো নামটা।’ চোখ না খুলেই মৃদুকণ্ঠে বললো হোমস। বহু বছর ধরে সে ইনডেক্স কার্ড তৈরি করছে- বিভিন্ন বস্তু, বিষয় ও মানুষের নামের প্রথম অক্ষর ধরে ধরে। বিস্তারিত বিবরণসহ তা বর্ণমালা অনুযায়ী সাজানো আছে, আমি জানি। ইরিন এডলারের নাম লেখা কার্ডটা বের করলাম।
‘দেখি তো।’ হোমস বললো। ‘হ্যাঁ, এই যে। জন্ম নিউ জার্সিতে, ১৮৫৮ সালে। ওয়ারশ অপেরার প্রধান গায়িকা...হুম! এখন লন্ডনে বসবাস করছে। বুঝতে পেরেছি, ইয়োর ম্যাজেস্টি। এই যুবতীর সঙ্গে আপনি জড়িয়ে গেছেন, চিঠি লিখেছেন যাতে কিছু ইন্টিমেট কথা আছে, এখন চিঠিগুলো আপনি ফেরত চান, এই তো?’
‘হ্যাঁ ঠিক, একদম। কিন্তু কীভাবে যে-’
‘বিয়ে-টিয়ে কী হয়েছিল?’
‘না।’
‘তার মানে কোনো আইনগত দলিল নেই?’
‘না নেই।’
‘তাহলে এত চিন্তার কী আছে বুঝতে পারছি না ইয়োর ম্যাজেস্টি। এই যুবতি যদি ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, কীভাবে সে প্রমাণ করবে তার দাবির সত্যতা?’
‘আমার চিঠিগুলো আছে তার কাছে।’
‘ফুহ! আমরা বলবো জাল চিঠি।’
‘কিন্তু...ব্যক্তিগত প্যাডে লেখা যে।’
‘চুরি করা প্যাড বলবো।’
‘আমার সিল-ছাপ্পর আছে প্যাডে।’
‘নকল সিল।’
‘আমার ছবিও আছে।’
‘বাজার থেকে কেনা ছবি।’
‘কিন্তু দুজনে আছি ছবিটাতে, একসঙ্গে-’
‘ওহ মাই গড! ইয়োর ম্যাজেস্টি এটা একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে।’
‘কী করবো- পাগল হয়ে গিয়েছিলাম যে।’
‘ঘটনা জটিল হয়ে গেল।’
‘উচ্ছৃঙ্খল প্রিন্স ছিলাম তখন। বয়স কম ছিল। এখন আমার বয়স তিরিশ বছর।’
‘চিঠিগুলো ফেরত পেতেই হবে।’ হোমস বললো।
‘চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’ হতাশ গলায় বললো বোহেমিয়ার রাজা।
‘টাকা দিয়ে কিনে নিন ইয়োর ম্যাজেস্টি।’
‘বিক্রি করছে না।’
‘তাহলে চুরি করতে হবে।’
‘পাঁচবার চেষ্টা করেছি। পেশাদার চোর দিয়ে দুবার তার বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। একবার ভ্রমণের সময় তার লাগেজ সরালাম। আরেকবার তাকে থামিয়ে চেক করা হলো। সব বৃথা।’
‘ছবিটা পাওয়া যায়নি?’
‘না।’
হেসে উঠলো হোমস। ‘এ দেখি এক মজার রহস্য।’ বললো সে।
‘হ্যাঁ, কিন্তু আমার জীবন-মরণ সমস্যা।’ একটু ক্ষুণ্ন রাজার গলা।
‘অবশ্যই...অবশ্যই। ছবি দিয়ে কী করতে চায় ইরিন?’
‘আমাকে ধ্বংস করতে চায়।’
‘কীভাবে?’
‘আমার বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক-’
‘হ্যাঁ শুনেছি।’
‘স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে। তার পরিবার খুব রক্ষণশীল। এখন যদি এমন একটা স্ক্যান্ডাল প্রকাশ পায়, তাহলে বিয়েটা বরবাদ হয়ে যাবে।’
‘ইরিন ঠিক কী করতে চায়?’ প্রশ্ন করলো হোমস।
‘কনের কাছে ছবি পাঠানোর হুমকি দিয়েছে সে।’ জবাব দিল রাজা। ‘ইরিন কাজটা ঠিকই করবে। আপনি তো তাকে চেনেন না- পাথর দিয়ে তৈরি তার মন। অপরূপ সুন্দরী নারী ইরিন, কিন্তু তার হৃদয় ইস্পাতের চেয়েও কঠিন। এ বিয়ে ভাঙবার জন্য সবকিছু করবে সে।’
‘ছবি এর মধ্যেই পাঠিয়ে দেয়নি তো?’
‘না দেয়নি।’
‘কেন দেয়নি?’
‘বলেছে এনগেজমেন্ট যেদিন হবে, সেদিন পাঠাবে। আগামী সোমবার এনগেজমেন্ট।’
‘বেশ, তাহলে তিনদিন সময় আছে হাতে।’ হাই তুলতে তুলতে বললো হোমস। ‘এটা ভালো খবর। দু’একটা জরুরি কাজ সারতে হবে আমাকে। ইয়োর ম্যাজেস্টি এখন লন্ডনেই থাকবেন তো?’
‘হ্যাঁ, ল্যাংহাম হোটেলে আছি আমি। কাউন্ট ভন ক্রাম নামে।’
‘চিরকুট লিখে আপনাকে অগ্রগতির খবর জানাবো।’
‘প্লিজ তাই করুন। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি আমি।’
‘তাহলে, টাকা-পয়সার ব্যাপারটা?’
‘ব্ল্যাঙ্ক চেক দিচ্ছি আপনাকে।’
‘ব্ল্যাঙ্ক চেক?’
‘মিস্টার হোমস, ছবিটার বিনিময়ে আমার রাজ্যের একটা প্রভিন্স দিয়ে দিতে রাজি আছি আমি ।’
‘বেশ। কিন্তু এই মুহূর্তের খরচ?’
আলখাল্লার ভেতর থেকে ছোট একটা চামড়ার থলি বের করলো রাজা। টেবিলের উপর রাখলো। ‘এখানে তিনশ’ পাউন্ডের মোহর আছে, আর আছে সাতশ’ পাউন্ডের নোট।’ বললো সে।
হোমস তার নোট বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে রসিদ লিখে রাজার হাতে দিল।
‘মাদমোঁয়াজেলের ঠিকানা?’ জিজ্ঞেস করলো হোমস।
‘ব্রায়োনি লজ। সারপেন্টাইন এভিনিউ। সেন্ট জনস উড।’
ঠিকানা লিখে নিল হোমস। ‘শেষ প্রশ্ন।’ বললো সে। ‘ছবিটা কি কেবিনেট সাইজের?’
‘হ্যাঁ।’ (চলবে...)
প্যানেল