ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

“মানুষ যদি শিখেও না”—পারমাণবিক অস্ত্র এবং এক মিনিটের অনন্ত মৃত্যু

মো:হুমায়ুন ফরিদ ,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ২১:৩০, ১৯ জুন ২০২৫

“মানুষ যদি শিখেও না”—পারমাণবিক অস্ত্র এবং এক মিনিটের অনন্ত মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী যেখানে দাঁড়িয়ে

একটা বোতাম, একটা কমান্ড, আর কয়েক সেকেন্ড।
মানবসভ্যতা তার অস্তিত্বকে এমন অনিশ্চয়তার ওপর টেনে এনেছে, যার পরিণতি জানলেও আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি।
পারমাণবিক অস্ত্র—এমন একটি আবিষ্কার, যা প্রথমে এসেছিল প্রতিরক্ষার নামে।
কিন্তু এখন? এটি প্রতিরক্ষা নয়, এটি পুরো মানবজাতির আত্মহত্যার সম্ভাব্য রূপরেখা।

প্রশ্ন হচ্ছে, “কেন এখনো পৃথিবীতে পারমাণবিক বোমা টিকে আছে?”

যখন আকাশ গিলে ফেলে পৃথিবী

একটি পারমাণবিক বোমা পড়ার অর্থ শুধুই ধ্বংস নয়।
এটি সময়ের ক্যানভাসে রং ছড়ায় না, বরং সব রং কেড়ে নেয়।
যেখানে বিস্ফোরণ ঘটবে, সেখানে রাত-দিন নেই—আলো থাকবে, কিন্তু তা অন্ধকারের জন্ম দেবে।
এক মিনিটের সময়রেখা: মানুষের তৈরি নরক
একটি বিশাল বিস্ফোরণ, এত তীব্র যে তার আলো ঘরের ভেতর ঢুকে চোখের রেটিনায় আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।

ধাতব শরীর গলে যায়। মাটির উপর কিছু থাকলে তা ছাই হয়ে আকাশে উড়ে যায়।

শব্দ হয় না—হয়তো হয়, কিন্তু শোনা যায় না, কারণ আলো আর তাপ তার আগেই সবকিছু দখল করে নেয়।

বাতাস পুড়ে যায়, শব্দের আগে চলে আসে আগুন।

২ কিলোমিটারের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের শরীর পোড়ে এমনভাবে, যেন পোড়ার চিহ্নও থাকে না। থাকে কেবল ছায়া—দেয়ালে।

গাড়ি গলে পড়ে, গাছ জ্বলে ওঠে। শিশুদের খেলনা আর বৃদ্ধের লাঠি একসাথে গলে যায়।

বিস্ফোরণের চাপ (blast pressure) বিল্ডিংকে ছিঁড়ে ফেলে।

দেয়াল ছিটকে ১০০ মিটার দূর গিয়ে লাগে অন্য দেয়ালে।

মানুষ উড়ে পড়ে ছাদের ওপরে, গাছের ডালে, কিংবা রাস্তায় মৃতপ্রায় পাথরের নিচে।

এক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, যার নাম আমরা অনেকেই জানি না, বুঝিও না—কিন্তু সে নিঃশব্দে ক্যানসার দিয়ে যায়।

রক্ত বমি হয়, শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, শরীর গলে যায়।

আর তারপর নামে এক বিষাক্ত বৃষ্টি—বিষ, ছাই আর তেজস্ক্রিয়তার মিশ্রণে বানানো 'ব্ল্যাক রেইন'।

কিন্তু মৃত্যু এখানেই শেষ নয়

তুমি যদি বিস্ফোরণ থেকে বেঁচেও যাও, তুমি মরে যাও অন্যভাবে—ধীরে, চুপচাপ।
তোমার হাড়ে জন্মায় ব্যথা, তোমার শিশুর শরীরে জন্ম হয় বিকৃতি।
তোমার মাটিতে আর ফসল জন্মায় না, পানিতে থাকে বিষ, আর বাতাসে ঘুরে বেড়ায় অদৃশ্য ঘাতক কণা।

এখনো সময় আছে—মানবতা জাগুক

এই পৃথিবী আমাদের, শুধু দেশের সীমানা নয়।
পারমাণবিক অস্ত্র জাতির নিরাপত্তা নয়, এটি নিছক একটি প্রতিহিংসার মোড়কে লুকানো আত্মবিধ্বংসী অস্ত্র।
এই মুহূর্তে বিশ্বকে দরকার রাজনৈতিক সাহস, নৈতিক উচ্চতা, আর মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি।

আমরা চাই, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রকে চিরতরে পরিত্যাগ করুক।
আমরা চাই, ভবিষ্যতের শিশু যেন আকাশে শুধু তারা দেখে, আগুন নয়।

আমরা চাই, এক মিনিটের নরক নয়—চিরস্থায়ী শান্তির পৃথিবী।

Mily

×