
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা প্রায়ই ভাবি, “আমার তো ব্লাড প্রেসার ঠিক আছে, কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে”—তাহলে হার্ট অ্যাটাকের ভয় কিসের? কিন্তু বাস্তবতা হলো, হার্টের সমস্যাগুলো সবসময় জোরে চিৎকার করে আসে না। কখনও কখনও এগুলো নিঃশব্দে শরীরের ভেতরে গেঁথে বসে।
এই নিঃশব্দ শত্রুর আগাম বার্তা দিতে পারে দুটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা—
- হোমোসিস্টেইন (Homocysteine) এবং
- সি-রিয়্যাকটিভ প্রোটিন (C-Reactive Protein বা CRP)।
এই পরীক্ষাগুলো অনেক সময় সাধারণ মেডিকেল চেকআপে হয় না, অথচ সময়মতো এগুলো করালে ভবিষ্যতের বড় বিপদ এড়ানো যায়।
১. হোমোসিস্টেইন: এক নিরব বিপদের নাম
হোমোসিস্টেইন শুনতে জটিল লাগলেও, এটা আসলে আমাদের শরীরে প্রোটিন ভাঙার সময় তৈরি হওয়া এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড।
যদি শরীরে ভিটামিন বি৬, বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি থাকে, তাহলে এই হোমোসিস্টেইন ঠিকমতো ভাঙতে পারে না। তখন সেটি জমে গিয়ে রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- এর ফলে রক্তনালির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্লাক জমে, এবং বাড়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা।
- গবেষণা বলছে, যাদের হোমোসিস্টেইনের মাত্রা বেশি, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ৭০% বেশি!
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই পরীক্ষাটি বেশিরভাগ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় থাকে না। অথচ, সময়মতো জানা গেলে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করলেই অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হয়।
২. CRP: শরীরের ভেতরের অদৃশ্য জ্বালার দিশা
CRP বা C-Reactive Protein এক ধরনের প্রোটিন, যেটা শরীরে কোথাও প্রদাহ হলে লিভার তৈরি করে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই প্রদাহ অনেক সময় আমাদের চোখে দেখা যায় না—ওটা হয় হৃদয়ের ভেতরের রক্তনালিতে।
বিশেষ করে hs-CRP (High Sensitivity CRP) নামের পরীক্ষাটি ছোটখাটো প্রদাহও ধরে ফেলে, যা সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ hs-CRP মানে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের দ্বিগুণ ঝুঁকি—এমনকি যদি কোলেস্টেরল একদম স্বাভাবিকও থাকে।
এই পরীক্ষা আপনাকে কী জানায়?
আপনার হার্টে কোনো নিঃশব্দ প্রদাহ চলছে কি না, যা হয়তো এখনই বড় কিছু করছে না— কিন্তু ভবিষ্যতে মারাত্মক হতে পারে।
কেন এই দুটি পরীক্ষা এখনই করা জরুরি?
আমরা অনেকেই ব্যস্ত জীবনে হার্টের যত্ন নিতে ভুলে যাই। যখন বুঝি, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
কিন্তু যদি এখনই হোমোসিস্টেইন ও CRP-এর মতো পরীক্ষাগুলো করে নিই, তাহলে অনেক আগে থেকেই বোঝা যাবে, শরীরের ভেতরে কী চলছে।
যদি আপনার পরিবারে কারও হার্টের সমস্যা থাকে, অথবা হঠাৎ ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি অনুভব করেন—তাহলে এই দুটি রক্ত পরীক্ষা আপনার জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
হৃদরোগ সবসময় সরাসরি আসে না। অনেক সময় নিঃশব্দে শরীরের ভিতরে তৈরি হয় একেকটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি।
আর এই দুইটি রক্ত পরীক্ষা—হোমোসিস্টেইন এবং hs-CRP—হলো সেই নিঃশব্দ বিপদের আগাম বার্তাবাহক।
বাঁচার জন্য আগে জানুন।
জানতে হলে পরীক্ষা করুন।
পরীক্ষা করলে প্রতিরোধ সম্ভব।
তবে মনে রাখবেন, এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মারিয়া