ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

তামার পাত্রে খাবার: প্রাচীন ঐতিহ্য না আধুনিক স্বাস্থ্যঝুঁকি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২০ জুন ২০২৫

তামার পাত্রে খাবার: প্রাচীন ঐতিহ্য না আধুনিক স্বাস্থ্যঝুঁকি?

ছবি: সংগৃহীত

এক সময় বাঙালির বাড়িতে পানির কলসি মানেই ছিল তামার। ঠাকুরমা-দিদিমারা সকালে ঘুম থেকে উঠে তামার পাত্রের পানি খেতেন, বলতেন “ওষুধ খেতে হবে না, এই জলেই শরীর ভালো থাকবে!” কিন্তু সময় বদলে গেছে। আধুনিকতা এসেছে প্লাস্টিক আর স্টিলের বোতলে। তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—তামার পাত্র কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? নাকি এটি এখন কেবল একটি নস্টালজিয়া?


তামার গুণগান—আয়ুর্বেদ বলছে যা

আয়ুর্বেদ মতে, তামার পাত্রে সংরক্ষিত পানি তৃষা, অম্লতা, বাত, ও হজমের সমস্যা দূর করে। তামা শরীরের ত্রিদোষ—বায়ু, পিত্ত ও কফ—সমন্বয় করতে সাহায্য করে। এমনকি বলা হয়, তামার আয়ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

এক গবেষণা (২০১২, ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি) বলছে, তামা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল। E.coli, Salmonella, এমনকি MRSA ধরনের ব্যাকটেরিয়াও এটি ধ্বংস করতে সক্ষম।


বিজ্ঞানের চোখে তামা—উপকারের খোলসের নিচে বিপদের বীজ?

যেখানে একদিকে তামা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেস মিনারেল, অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত তামা গ্রহণ করলে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া—

1.বমি ও পেটব্যথা
2.লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত
3.এমনকি কিছু ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক সমস্যাও

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মিলিগ্রামের বেশি কপার দৈনিক গ্রহণ দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।


কোন খাবার তামার পাত্রে নয়?

তামার সঙ্গে অম্ল (acidic) জাতীয় পদার্থ বিক্রিয়ায় ক্ষতিকর কপার সল্ট তৈরি হয়। তাই এইসব খাবার তামার পাত্রে রাখা বিপজ্জনক—

1.লেবু পানি বা টক দই
2.টমেটো ভিত্তিক তরকারি
3.ঝাল-লবণাক্ত বা ভিনেগার মেশানো খাবার
4.দুধ বা দুধজাত দ্রব্য

 

তাহলে উপকার পেতে কীভাবে ব্যবহার করবেন?

1. প্রতিদিন ভোরে খালি পেটে ৮–১০ ঘণ্টা তামার পাত্রে রাখা পানি পান করুন
2. পিতলের মতো চকচকে না করে সহজে পরিষ্কার করুন—লবণ-লেবু বা ভিনেগারে
3. খাবার নয়, শুধু পানি রাখুন
4. যারা Wilson’s disease বা কপার মেটাবলিজম সমস্যায় ভুগছেন, তারা এড়িয়ে চলুন

 

পুরোনো পথেই আধুনিক সমাধান?

তামার পাত্র কেবল আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ নয়, স্বাস্থ্যচর্চারও একটি কার্যকর মাধ্যম—যদি ব্যবহার হয় সঠিকভাবে। মনে রাখতে হবে, যা উপকার করে, তারই অপব্যবহার হতে পারে বিষ। তাই ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই চাই বিজ্ঞানের সুশৃঙ্খল অনুসরণ।

Mily

×