
ছবি:সংগৃহীত
শসা — একটি এমন সবজি যা গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখে, আবার স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। এটি শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়াবেটিসে নয়, বরং আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যায় সহায়ক হতে পারে। এখানে আমরা তুলে ধরছি প্রতিদিন শসা খাওয়ার ৯টি বড় কারণ।
১. শরীরকে রাখে হাইড্রেটেড
শসার প্রায় ৯৫% জলে ভরপুর। তাই গরমে বা শরীরচর্চার পর শরীরের জলের ঘাটতি পূরণে এটি অত্যন্ত কার্যকর। হজম, রক্ত চলাচল ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পর্যাপ্ত জল, যা শসা অনায়াসে দেয়।
২. হাড়ের স্বাস্থ্যে সহায়ক
শসা থেকে আপনি ভিটামিন K পেতে পারেন, যা শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়ক এবং হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এক কাপ শসা আপনার দৈনিক ভিটামিন K প্রয়োজনের প্রায় ২০% মেটায়।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
শসাতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিন ও কোয়ারসেটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষকে মুক্ত র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি বার্ধক্য ও বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪. হজমে উন্নতি আনে
শসার ত্বকে থাকা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং উচ্চ জলীয় অংশ বর্জ্য পদার্থ নরম করে সহজে নির্গত করতে সাহায্য করে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
এক কাপ শসায় কেবলমাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে। তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে উপযোগী।
৬. হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষা দেয়
শসার পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। এতে থাকা আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কমাতে ও প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৭. ত্বকের জন্য ভালো
শসার জলীয় উপাদান ত্বককে ভিতর থেকে আর্দ্র রাখে, আর এতে থাকা সিলিকা কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বককে মসৃণ ও দৃঢ় রাখে। এটি ত্বকের বয়সজনিত ক্ষতিও কমায়।
৮. রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
শসা কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে নিম্ন — ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। এতে থাকা কুকুরবিটাসিনস নামক যৌগ ইনসুলিন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে পারে।
৯. প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নানা রোগের কারণ। শসা নিয়মিত খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ হ্রাস করতে সহায়ক হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পাশাপাশি আরও একটি উপকারী ফল — আনার বা ডালিম
প্রতিদিন একটি করে ডালিম খাওয়ার অভ্যাসে আপনার শরীরে আশ্চর্যজনক উপকার হতে পারে। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ, ও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। নিচে রইল এর কিছু উপকারিতা:
১. হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখে
২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিমের রস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ধমনীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়।
২. ত্বক রক্ষা ও বয়স কমিয়ে তোলে
ডালিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, কোলাজেন তৈরি বাড়ায় এবং বয়সজনিত দাগ কমায়।
৩. স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ডালিম খেলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে, ফলে স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ে।
৪. হজম শক্তি বাড়ায়
ডালিমে থাকা আঁশ ও প্রিবায়োটিক যৌগ হজমে সহায়ক। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় জানা গেছে, এটি আইবিডি রোগীদের জন্যও উপকারী।
৫. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডালিমে থাকা পলিফেনল প্রোস্টেট ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে পারে। অন্যান্য ক্যানসার থেকেও এটি সুরক্ষা দিতে পারে।
৬. সম্পূর্ণ ফল খান, রস নয়
ডালিমের সম্পূর্ণ বীজ ও আঁশ খাওয়া রসের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী।
শসা আর ডালিম — এই দুটি সহজলভ্য ফল আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে থাকলে শরীর ও মন দুইই থাকবে সুস্থ ও সতেজ। পরিমিত ও নিয়মিত খাওয়াটাই এখানে মূল চাবিকাঠি।
মারিয়া