নামের সঙ্গে জীবনের একটা যোগাযোগ আছে। এই যোগাযোগের ব্যাপারটা বাবা জানলে আমার নাম কি নির্জন রাখতেন? নামটা কেন রেখেছিল বাবা প্রশ্নটার উত্তর আমি পাইনি। নামে কিছু এসে যায় না যদিও এমনটাই জানতাম কিন্তু এই নামের কারণেই সম্ভবত অকারণ এই গভীর অরণ্যে বসে আছি, যেখানে কেউ কোনোদিন আসেনি এবং কেউ কোনোদিন আসবেও না।
আমি যেখানে বসে আছি সেখানে কি এখন রাত নাকি দিন বোঝার উপায় নেই। এত গভীর আর ঘন সব গাছ, যাদের নাম শহরে বড় হওয়া আমার জানার কোনো সুযোগ নেই সেখানে শিকড়ের কাছে বসে সূর্যের সন্ধান করা যায় না।
সূর্যের সন্ধান করতে আমি চাচ্ছিও না। এই গভীরভাবে বসে থাকা আমাকে এতটাই ক্লান্ত করে তুলেছে যে এক পা হেঁটে কোথাও যেতে মন চাইছে না।
মানুষ কেন খারাপ থাকে? মানুষের ঐ খারাপ থাকার পেছনের যত কারণ তার সবগুলো কারণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে আজকের এখানে এসে বসেছি, থেমেছি। আমার ভালো লাগার কথা। ধ্যানে বসে নতুন কিছুর সন্ধান পাওয়ার কথা। তারপরও আমার ভালো লাগছে না।
গাছের ঘনত্বের চাপে যেখানে হাত ঠিকভাবে নাড়ানোই দায় সেখানে বসে বসে ডায়েরি লিখছি। লেখার কারণ সময় কাটানো, লেখার কারণ আমি ধ্যানে বসতে পারছি না, লেখার কারণ এই ডায়েরিটা যদি আমার মতো কারও হাতে কখনো যায়, সে যেন একলা বোধ না করে।
আমি যে এখানে এলাম, এখানেই আসতে চেয়েছি সারাজীবন, এটা এমন একটা জায়গা যার কথা কেউ জানে না, হয়তো কল্পনা করে, হয়তো স্বপ্ন দেখে কিংবা দেখে না, না দেখে, না জেনে তাদের জীবন পার করে ফেলে, আমি সেই জায়গায় বসে আছি, যদিও আমি এর বাস্তব অস্তিত্ব স¤পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না।
আমার মনে হতো কিংবা আমি চাইতাম আমি এমন কোনো জায়গায় চলে যাবে যেখানে আশপাশে কোনো প্রাণের চিহ্ন থাকবে না, নাম না জানা অনেক অনেক বড় গাছ থাকবে, তার মাঝ দিয়ে হাঁটাচলার বুনো পথ। একটা ছোট্ট ঘরের কথাও ভাবতাম, বনের মাঝে হঠাৎ ফাঁকা জায়গা কিন্তু আকাশ দেখা যায় না, পাতা ছড়িয়ে আলোর পথ বন্ধ করে রাখবে এমন। আমি ঠিক তাই পেয়েছি।
আমি চাইতাম আমার ক্ষুধা লাগবে না, আমার চুমুর প্রতি তৃষ্ণা থাকবে না, শরীরের প্রতি আকর্ষণ থাকবে না, আমি তাই পেয়েছি। কেন চেয়েছি? কারণ সুখকে স্থায়ী করতে চেয়েছিলাম। আমরা জানি, চাহিদাই তৈরি করে কষ্ট। যদি চাহিদা না থাকে, যদি এই মেকানিক্যাল পৃথিবীতে ছুটে চলা না থাকে, তবে ঐ সুখকে আজীবনের মতো নিজের করে নিতে আর ঠেকাবে কে?
আমি কি এখন সুখী?
সম্ভবত না। সুখের সঙ্গে ভালো লাগার স¤পর্ক আছে। আমার এখন ভালো লাগছে না। আমার মনে হচ্ছে আমার নাম নির্জন কেন রাখা হলো? বন্ধুরা অবশ্য আমাকে এড়িয়েই চলত। পাগলও বলত। এ কথা সত্যি আমি পাগল না হলেও বোকা ছিলাম। না হলে এসব ফ্যান্টাসির কথা কি মানুষকে বলে বেড়াতাম?
ভার্সিটিতে আমার নামও ছিল একটা। দ্য সেক্সলেস ম্যান। আমি যৌনতা থেকে মুক্তি চাইতাম কিন্তু যৌনতা আমার প্রিয় ছিল। পাতার সঙ্গে স¤পর্কের পর সেক্স আরও প্রিয় হয়ে ওঠে। অথচ তারপরও বন্ধুদের কাছে আমি ছিলাম সেক্সলেস ম্যান। ওরা আমাকে কত ভুলটাই না জানত!