ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

সাহিত্য

সাহিত্য বিভাগের সব খবর

আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্মবার্ষিকী

আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্মবার্ষিকী

’ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের ¯্রষ্টা তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আজ (বুধবার) ৬৮তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। চলতি বছর তিনি একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন। দিনটির স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ, মিঠেখালি আজ কবির গ্রামের বাড়ি মোংলার মিঠেখালিতে সকালে কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল, দোয়া এবং রুদ্র স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্মরণসভা শেষে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য দিনব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালিত হবে।  উল্লেখ্য, অকালপ্রয়াত এই কবি নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে। সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বোধে উজ্জ্বল তার কবিতা। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’Ñ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্নÑ ‘দিন আসবেইÑ দিন সমতার’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্র প্রতীক’-এ। একইসঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তরজুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির  জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পর পর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কান্নার রং ছিল লাল

কান্নার রং ছিল লাল

এস্রজের সুরের মতো জলপতনের শব্দ শিবানির কানে আসে। যদিও এ শব্দের সঙ্গে তার পরিচয় নতুন নয়। কারণ তার স্বামী শিবু প্রতিদিন অন্তত একবার মানচিত্রের বুকে প্র¯্রাব করতে আসে। শিবানি রুটির বাঁটি হাতে নিয়ে নিষ্পন্দের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বিস্ময় চোখে স্বামীর এই জঘন্ন কা-ের সাক্ষী হতে হয়। তবুও স্বামীকে ঘৃণা করতে পারে না। ‘খাবারটা খেয়ে আমাকে মুক্তি দিয়ে যাও।’ শিবানি বিরক্তি কণ্ঠে স্বামীকে ডাকে। শিবু উ™£ান্তের মতো মধুমতী নদীর দিকে ছুটে যায়। তখনো মানচিত্রের বুকে প্র¯্রাবের বুদবুদানি। পাশের ভাঁগাড়ে চিত হয়ে পড়ে থাকা মরা বিড়ালটার সঙ্গে শিবানি নিজের জীবনের কোনো তফাত খুঁজে পায় না। শিবু দাস ওরফে শিবু মুচির যে স্বাভাবিক স্মৃতিশক্তি নেই এটা সত্য, তবে যেখানেই যাক প্রতিদিন একবার সে বাড়ি আসে। লুঙ্গিটা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মানচিত্রের কবরে তার প্রস্রাব ঢালা চাই। কাজটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শিবু থাকে অশান্ত। চোখ দুটো হয়ে থাকে রক্ত জবার মতো লাল। হাতের কাছে যা পায় ভাঙচুর করে। শিবানিকেও লাথি-গুঁতো খেতে হয়। তার স্থায়ী ঠিকানা বলতে মধুমতীর ঘাট। দিনরাত নদীতে দলছুট কচুরিপানা, টাবুরে নৌকা ভেসে যাওয়া দেখে। শিবুর ধারণা তার মেয়ে বকুল একদিন এই নদীর পাড় দিয়ে দৌড়ে আসবে। বাবা বলে জড়িয়ে ধরবে।

চিত্রকল্পের কবি

চিত্রকল্পের কবি

কবি জীবনানন্দ দাশের মতে, কবির মধ্যে বিরাজ করে কল্পনাপ্রতিভা। এই কল্পনাপ্রতিভার গুণেই কবির মধ্যে চিত্রকল্প বাসা বাঁধে। টুকরো টুকরো ছবি কবির কল্পনার রং-রেখায় একটা অর্থ দাঁড় করায়। মানে কবিতা হয়ে ওঠে চিত্রকল্পময় ও অর্থময়। এখানেই কবিতা কথা কয়। বাক্সময় হয়ে ওঠে।  কবি হাসান হাফিজ এই বাংলাদেশের মেঘনাপাড়ের কবি এবং চিত্রকল্পের কবি। কবি জীবনকে উপলব্ধি করেন, বুঝতে চান, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে চান, স্পন্দনে অনুভব করেন, কারুময় করে তোলেন এই চিত্রকল্পের মারফতে। এদিক থেকে কবি শিল্পীর ভূমিকায় স্বচ্ছন্দ। শিল্পীর মতো অক্ষরের রং-রেখায় নিমগ্ন। বিশাল সংগ্রহের চিত্রকল্পের উপাদান কবি খুঁজে পেয়েছেন বাঙলার প্রকৃতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থেকে। কবি নগরে বসবাস করেন, নগরযন্ত্রণায় ছটফট করেন, নাগরিক ক্লেদের আঁধারে ডুবে ডুবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন; কিন্তু চিত্রকল্প তুলে আনেন গ্রামবাংলার বিশাল উঠোন থেকে; আবাদ-বিবাদ থেকে, মেঠোপথ থেকে, ডোবানালা-নদনদী-বিলঝিল থেকে। কবির মৌলচেতনার মাঝে যেন গ্রামবাংলার শেকড় ও আবহ বিরাজমান। প্রেম-কাম, প্রতিবাদ-দ্রোহ, স্মৃতি-নস্টালজিয়া, অবক্ষয়-ক্ষরণ, প্রকৃতি-নন্দন, আনন্দ-ব্যথা, নাগরিক সঙ্গ-নিঃসঙ্গতা, আত্মদ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা-ক্লেদের বিষ পান করে কবি নীলকণ্ঠ হয়ে গেছেন। কখনো সুন্দরের ঘুড়ি ধরার জন্য কৈশোরের চাঞ্চল্য নিয়ে দিয়েছেন ছুট, কখনো মঙ্গলবোধে উজ্জীবিত হয়ে অসুন্দর-অকল্যাণের উচ্ছেদ চেয়েছেন। তবে কবি প্রধানত নারী ও প্রকৃতিপ্রেম, সমাজ ও স্বদেশবোধ, মানবিকতা ও নির্মমতাকে চিত্রকল্প-উপমা-উৎপ্রেক্ষা-প্রতীক-রূপকে ধারণ করেছেন।  কবি হাসান হাফিজ সত্তর দশকের কবি। সময়টা ক্রান্তিকালীন। জীবন ও সমাজ অসুস্থতায় ক্লান্ত-বিষাদগ্রস্ত-টালমাটাল। কবির প্রধান অবলম্বন চিত্রকল্প, সত্তরের জায়মান অন্ধকার ও সমূহ মানববিরোধী তৎপরতাকে কবি চিত্রকল্পে জীবন্ত রূপ দিয়েছেন। বিপুল প্রত্যাশা ও প্রায় শূন্য প্রাপ্তির হতাশায় কবির মন বিদ্রƒপে ভরে ওঠে:   তোমার টাঙ্গাইল শাড়ির পাড়ে  ফুলের মতো ফুটে আছে না পাওয়ারা  এবড়ো খেবড়ো কঙ্কালসার পদ্মার অহং মিছিলের ক্রুদ্ধ ধ্বনিমালা  সবকিছু কেমন জ্বলছে  সবকিছু কেমন টলছে  সবকিছুই কী যেন বলতে চাইছে। [টালমাটাল মানচিত্র/ এখন যৌবন যার] ‘ঘুণ’, ‘মৃত্যু, নীলটিপ এবং কোকিল’, ‘২৪ ঘণ্টার বিরহ’, ‘জীবনে জীবনে’, ‘বিপক্ষে’, ‘যেয়ো না সুন্দর’ ইত্যাদি কবিতায় কবি আসলে একই সময়ের চালচিত্র ও মনের অসন্তোষ জানিয়েছেন বিচিত্র চিত্রকল্পে। জানিয়ে ক্ষান্ত বা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকেননি। ব্যঙ্গ ও বিদ্রƒপ করেছেন, কখনো দ্রোহও করেছেন। এই তামসিক সময়ে কবি আশ্রয় খুঁজেছেন প্রিয়তমা নারীর আঁচলে। নারীকে পেতে চেয়েছেন যে কোনো মূল্যে। বিরাজমান হতাশায় হদিস করেছেন নারীতে মুক্তি ও শুশ্রƒষা। সত্তর দশকের কবিতার সাধারণ বৈশিষ্ট্য এরকমÑ যার চিত্রকল্প অমসৃণ, কর্কশ ও দহনস্পর্শী।    আমি বারবার এরকমই ফিরে আসছি, মরছি, জš§াচ্ছি ফের তোমার আয়ত চোখ থেকে  ফেরাব না চোখ, যতো প্টতি হোক। [রাখী তোমার মুখোমুখি/ এখন যৌবন যার] কবি বৈরী আবহাওয়ায় নারীপ্রেমে প্রেমে ডুবতে ডুবতে এক সময় ডুবসাঁতার দিতে শুরু করেন। ভালোবাসার গভীরতা ও ব্যাপ্তি আরও বাড়তে থাকে ক্রমাগত। ফলে ‘এখন যৌবন যার’ থেকে কবি প্রস্থান করেন ‘ভালোবাসা, তার ভাষা’ গ্রন্থে। সেজন্য অনেকটা উš§াতাল ও উš§ত্ত আবেগের দিগন্তে অনুরাগের আবীর ছড়িয়েছেন শিল্পীর চড়া রঙে। তবে নারীর ভালোবাসার অমৃত শুধু পেয়েছেন তা নয়, সঙ্গে সঙ্গে কষ্টের বিষও পান করেছেন। এই অনুভবের নির্যাস ধরতে কবিকে মর্মস্পর্শী কিছু চিত্রকল্প আঁকতে হয়েছে।  ভালোবাসা অন্ধ এবং বধির বোবা   পদবিক্ষেপ টলোমলো শুধুই আঁধার  ছিন্ন রুমাল একলা চিঠি অনিদ্র রাত  ভালোবাসা তোমার তূণে বিদ্ধ হতেই  আমার জš§, টুকরো-টাকরা জীবনযাপন। [ভালোবাসা, তার ভাষা/ ভালোবাসা, তার ভাষা] ‘ভালোবাসা, তার ভাষা’ হাসান হাফিজের শ্রেষ্ঠ প্রেমের সংকলন। সম্ভবত সমগ্র কাব্যের মধ্যেও সেরা বই। এই বইয়েই কবির মৌলিক কণ্ঠস্বর ও কাব্যভাষার একটা আদল গড়ে ওঠে। কবিতার গড়নে ও স্পন্দনে আপন চিত্রকল্পের মেজাজ, সুর ও রূপে কবির কবিত্ব প্রকাশ পায়। কবিত্বের প্রশ্নে হাসান হাফিজ প্রথম কাব্যেই স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে কবির বিকাশের পথ ও পাথেয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। কোনো এক রাস্তায় ও নদীতে কবি বেশি দিন হাঁটেননি ও সাঁতার কাটেননি। জীবনকে কবি বড় ক্যানভাসে ধরেছেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট রঙে-রূপে বা রেখায় তাকে বিচার করা যায় না। কারণ কবি একই সঙ্গে জীবনের অমিয়-গরল পান করতে অভ্যস্ত।      ভালোবাসা, এবার তোমার সঙ্গে বোঝাপড়া      অবসান থরোথরো দুঃখ যন্ত্রণার      ভালোবাসা, এবার তোমার সঙ্গে অভিমান     পুরুষ্টু ধানের শীষে বৃষ্টির বিরহ ... ভালোবাসা, এবার তোমার সঙ্গে লেনদেন  চেখে দেখা জীবনের রক্তমাংস, অমিয়-গরল। [জীবনের অমিয়-গরল/ ভালোবাসা, তার ভাষা] ‘অমিয়-গরল’ ভরা বাস্তবের একটা বড় জায়গা তাঁর কবিতা জুড়ে আছে। কবি নানা পথে যেমন হেঁটেছেন, তেমনি নানা সুর ও জগতের চিত্রকল্প এঁকেছেন অক্ষরের বিচিত্র রঙে। সমাজ-রাজনীতির ভাঙচুর, পালাবদল, বিবর্তন ও রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে চলেছে তাঁর কবিতার রূপান্তর। এক্ষেত্রে কবি মানবিকতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, বিপ্লবের ব্যর্থতা ও দীর্ঘশ্বাস ঝেড়ে ফেলে নতুন নির্মাণের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। ‘অবাধ্য অর্জুন’ কাব্যগ্রন্থটি এদিক থেকে তাঁর সমাজ-রাজনীতির বোধ ও চেতনাকে স্পষ্ট করে।

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

পূর্ব প্রকাশের পর স্প্যানিয়ার্ড, হল্যান্ডার এবং ফ্রেঞ্চম্যান। সবাই বলছে দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরের লোকটা যে ভাষায় কথা বলেছেÑ সেই ভাষাটা তাদের অচেনা, অজানা।  এইখানেই আসল মজা। ফ্রেঞ্চম্যান বলছে ভাষাটা স্প্যানিশ। অথচ স্প্যানিশ যার মাতৃভাষা, সে বলছে ভাষাটা ইংলিশÑ যদিও ইংরেজি সে জানে না। আবার ইংলিশম্যানের মতে ভাষাটা জার্মানÑ অথচ সে জার্মান ভাষা বলতে পারে নাÑ উচ্চারণ শুনে তার এ রকম মনে হয়েছে। ওদিকে আবার ইতালিয়ান ভদ্রলোক কী বলছে? তার মতে ভাষাটা রাশিয়ানÑ সে কিন্তু কোনো রাশিয়ানের সঙ্গে কোনোদিন কথা বলেনি। সব শেষে দ্বিতীয় একজন ফ্রেঞ্চম্যান বলছেÑ তার মতে ভাষাটা ইতালিয়ান।  এটা সত্যি বিস্ময়কর যে পাঁচ ভাষার পাঁচজন মানুষ শুনেও বলতে পারছে না দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরের ভাষাটা কোন্ ভাষা। একটা শব্দও তারা বুঝতে পারেনি। এদের মধ্যে একজন ইন্টারেস্টিং একটা পয়েন্ট উল্লেখ করেছেÑ তার মনে হয়েছে কণ্ঠস্বরটা তীক্ষè নয়, কর্কশ। এসব থেকে আমি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। সেই সিদ্ধান্তের বিষয়ে এই মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তার চেয়ে চলো কল্পনায় আমরা আবার একবার ঘটনাস্থলটা ঘুরে আসি।  কী খুঁজবো সেখানে আমরা? খুঁজবো খুনিদের পালানোর পথ। কোন্ পথ দিয়ে পালালো খুনিরা? চিমনি দিয়ে একটা বিড়ালও যেতে পারবে না, কাজেই চিমনি বাদ। ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তাছাড়া ছাদের দরজাও বন্ধ দেখেছি আমরাÑ কাজেই চিলেকোঠা দিয়ে ছাদ হয়ে পালাবেÑ সে সম্ভাবনা বাদ হয়ে গেল। এবার আসি যে ঘরে মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেই ঘর এবং পাশের বড় ঘরটার কথায়। খুনিরা এই দুটো ঘরে ঢুকেছে নিশ্চিত।  বড় ঘরটায় দুটো জানালা আছে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো। এই জানালা দুটোই আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। একটা জানালা ফার্নিচার দিয়ে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে গেছে। অন্য জানালা বরাবার খাটটা রাখা। খাটের মাথা জানালায় প্রায় ঠেকে আছে, মাঝখানে একটুখানি ফাঁক। সেইখানে জানালার ছিটকিনি। ছিটকিনিটা আমি খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করেছি। এখানেই পলায়ন পথের রহস্য লুকিয়ে আছে। ছিটকিনিটা অটোলক পদ্ধতিতে কাজ করে, একটা স্প্রিংয়ের সাহায্যে। ধরা যাক জানালা দিয়ে কেউ বাইরে চলে গেল, তারপর ওপাশ থেকে পাল্লাটা ধাক্কা দিলÑ তাহলে ছিটকিনি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক এটাই ঘটেছে।  এই অনুমান সত্য কিনা জানার জন্য আমরা এরপর উঠোনে গেলাম। সেখানে কী দেখলাম? বজ্র-বিদ্যুৎ থেকে রক্ষা করার জন্য সব বাড়ির ছাদে লাইটনিং রড থাকেÑ এই বাড়িতেও আছে। মোটা একটা লাইটনিং রড নেমে এসেছে এই বাড়ির ছাদ থেকে মাটিতে। রডটা গেছে জানালা থেকে বেশ খানিকটা দূর দিয়ে। খোলা জানালা থেকে সরাসরি কেউ রডটার নাগাল পাবে না। কিন্তু যদি কেউ জানালার পাল্লা পুরো খুলে দেয়, তাহলে রড থেকে জানালার দূরত্ব কমে যাবে। সেক্ষেত্রে নাগাল পাওয়া সম্ভব। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো জানালার পাল্লায় খড়খড়ি দেওয়া আছে। খড়খড়ি ধরে ঝুলে, পাল্লায় দোল খেয়ে একটু কসরত করলেই রডের নাগাল পাওয়া সম্ভব। তবে, এ কাজের জন্য খুব সাহসী মানুষ দরকার। অথবা যদি...  আচ্ছা, এখন তোমাকে আবার গুরুত্বপূর্ণ দুটো পয়েন্ট মনে করিয়ে দিইÑ সবাই বলেছে দ্বিতীয় কণ্ঠস্বরটি ছিল তীক্ষè, একজনের মতে তা ছিল কর্কশ এবং তার ভাষা কেউই বুঝতে পারেনি। ঠিক তো?’  আমার বন্ধু দুপঁ কিছু একটা ইঙ্গিত করছে বুঝতে পারছিÑ কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না, কী বোঝাতে চাইছে সে? দুপঁর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলতে থাকলো। ‘একটা জিনিস লক্ষ্য করো বন্ধুÑ’ দুপঁ বলছে, ‘আমি কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে খুঁজতে ফ্ল্যাটে প্রবেশের পথও পেয়ে গেছি। এখন চলো আমরা আবার কল্পনায় ফ্ল্যাটের ভেতরে যাই। কী দেখবো সেখানে? সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ব্যাংকার মিগনড তার জবানবন্দিতে বলেছে মা-মেয়ে খুন হওয়ার তিনদিন আগে মাদাম এসপানায়া চার হাজার ফ্রাঁ ব্যাংক থেকে তুলেছেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা প্রাসঙ্গিক ও স্মরণীয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সব্যসাচী লেখক। গদ্য, গল্প, উপন্যাস ও কবিতার অসাধারণ সৃষ্টি তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। পূর্ব-পশ্চিম উপন্যাসে ইতিহাসের ধারাবাহিক ঘটনাবর্তকে তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে উপস্থাপিত করেছেন। বাঙালীর সংগ্রাম, শৌর্য, বীর্য, আত্মত্যাগ, দিনযাপন, প্রেম, বিরহ সমাজ রূপান্তরের বাস্তব কাহিনী বিস্তৃতভাবে বিবৃত হয়েছে তাঁর গল্প উপন্যাসে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।  সুনীল ছন্দ ও ছন্দহীন কবিতার রচয়িতা হিসেবে সমানভাবে জনপ্রিয়। ভ্রমণ বিলাসী কবি স্বদেশ থেকে বিশ্ব ব্রক্ষ্মা- পর্যন্ত সঙ্গী থেকেছেন স্বপ্ন, দুরন্ত প্রেমময় স্বাধীনসত্তার সঙ্গে। ‘একা ও কয়েকজন’ প্রথম কাব্যগ্রন্থে তাঁর একাকিত্বের যন্ত্রণা, অভিমান, অতলস্পর্শী আকাক্সক্ষার কাছে সমর্পিত হয়েছিলো। স্বপ্নতাড়িত সুনীল প্রকৃতি, নারী ও বেদনা বিধুর সত্তায় গ্রথিত হয়ে যে কবিতা রচনা করেছেন, তা পাঠকের চেতনাকে ক্রমশ সম্মোহিত করে।

আহমদ ছফার কালজয়ী সৃষ্টি

আহমদ ছফার কালজয়ী সৃষ্টি

মৃত্যুর দোরগোড়া অবধি না গিয়েও একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের মনের অনুভূতি এত সাবলীল ও সূক্ষ্ম করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তোলা, নিজ মানস দিয়ে অপরের জীবন এত গভীরভাবে উপলব্ধি করা শুধু আহমদ ছফার দ্বারাই হয়তো সম্ভব। ‘মরণ বিলাস’ আহমদ ছফার একটি রাজনৈতিক উপন্যাস বলা যায়। এই উপন্যাসটিতে যেভাবে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুশয্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা বেশ সূক্ষ্ম; এবং তাতে বিসভিন্ন মতবাদ, ঘটনা এবং মনস্তত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। এবং সেই চিত্রপটে মূল ভূমিকায় আছেন ক্যান্সার আক্রান্ত মৃত্যুমুখী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফজলে ইলাহি। আর, তাঁর শেষ শয্যায় বসে অথবা কখনো দাঁড়ায়ে আছে একজন পাতিনেতা ও রাষ্ট্রপতির সুদৃষ্টিতে আসতে ব্যাকুল মওলা বক্স। ‘মরণ বিলাস’ উপন্যাসটি পুরটাই মূলত মন্ত্রী ফজলে ইলাহী ও মওলা বক্সের মধ্যে কথোপকথন। শয্যাশায়ী মন্ত্রী চায় তার জীবনের যত গোপন অপকর্ম আছে তা অন্তত পৃথিবীর একজন মানুষকে বলে যেতে পারলে তার আর নিজের জীবনকে বৃথা মনে হবে না।

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

(পূর্ব প্রকাশের পর) দলটা যখন ওপরে ওঠে, তখন তাদের পাশ দিয়ে কেউ নেমে যাবেÑ সেটাও কোনোমতে সম্ভব নয়।  ডাক্তার পল দুমা জানিয়েছেন, খুব ভোরে তিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করতে যান। তখন দুটো মৃতদেহ বিছানার উপরে শোয়ানো ছিল। দুটো দেহই ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত দেখেছেন তিনি। মেয়ের গলায় আঙুলের ছাপ দেখেছেন। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের ডান হাত আর ডান পায়ের হাড়গোড় ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। বাঁ পজরের হাড়ও ভাঙা। শরীরের সর্বত্র আঘাতের চিহ্ন। আঘাত দেখে মনে হয় খুব শক্তিশালী কেউ ভারি কাঠ, চেয়ার কিংবা ভোঁতা কোনো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে বারবার। মাথাটা আলাদা হয়ে গেছে। সেখানেও আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন। ধারালো ছুরি কিংবা ধাতব কোনো অস্ত্র দিয়ে মহিলার গলা কাটা হয়েছে।  পত্রিকা বলছে এ রকম ভয়ঙ্কর জোড়া খুনের ঘটনা প্যারিসে আর ঘটেনি। প্যারিসের পথে, ঘাটে, রেস্তোরাঁয় সর্বত্র এখন এই আলোচনা। তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ব্যাংকের কেরানি এডলফ বোঁ-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গ্রেপ্তারের সংবাদটা পড়ার পর দুপঁ আমাকে জিজ্ঞেস করলোÑ এই হত্যাকা- সম্পর্কে আমার কী ধারণা? প্যারিসের আর সব বাসিন্দার মতো আমারও মনে হচ্ছিলÑ এটা এমন এক রহস্য, যার কুলকিনারা করা বোধহয় সম্ভব না।  দুপঁ বললো, ‘চলো আমরা নিজেরা সরেজমিনে দেখে আসি জায়গাটা। যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই কেরানি এডলফ বোঁ আমাকে একবার সাহায্য করেছিলÑ লোকটার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। পুলিশ প্রধান আমার পরিচিত, অনুমতি পেতে সমস্যা হবে না।’  অনুমতি পাওয়া গেল, আমরা দেরি না করে মর্গ স্টিটে চলে গেলাম। বাড়িটা খুঁজে পেতে কোনো অসুবিধা হলো না। অনুমতির চিঠি দেখাতেই পাহারায় নিযুক্ত গার্ড আমাদের উপরে নিয়ে গেল। সেখানে পাশাপাশি শুয়ে আছে দুটো মৃতদেহ। পত্রিকায় যেমন পড়েছি, তেমনই এলোমেলো দেখলাম সারা ঘর। নতুন কিছুই আমার চোখে পড়লো না। দুপঁ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু দেখলো। মৃতদেহ দুটোও পরীক্ষা করলো মনোযোগ দিয়ে।  সব ঘর চেক করলো সে। বিশেষ করে বড় ঘরের জানালা দুটো অনেকক্ষণ ধরে পরীক্ষা করলো। শেষে আমরা গেলাম বাড়ির পেছনের উঠোনে। উঠোন থেকে জানালা দুটো দেখা যায়। অনেক সময় নিয়ে জানালা এবং জানালার কিছুটা দূর দিয়ে নেমে যাওয়া পাইপ গভীর মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলো দুপঁÑ কী যেন একটা কুড়িয়ে পকেটে পুরলো। এসব করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমরা বাড়ি ফিরলাম। ফেরার পথে একটা দৈনিক পত্রিকা অফিসে ঢুকলো সে দুচার মিনিটের জন্য।  সেদিন এই মার্ডার কেস নিয়ে আর একটা কথাও বললো না দুপঁ। ওর এ রকম মুড দেখে অভ্যস্ত আমিÑ এই নীরবতার অর্থ সে তথ্যগুলো নিয়ে মনের ভেতরে নাড়াচাড়া করছে, ভাবছে। পরদিন দুপুরে হঠাৎ দুপঁ আমাকে প্রশ্ন করলো, গতকাল অস্বাভাবিক কিছু আমার চোখে পড়েছে কিনা?  আমি বললাম ‘পত্রিকা থেকে যা জেনেছি, তার বাইরে তেমন কিছু আমার চোখে পড়েনি।’  ‘পত্রিকার কথা বাদ দাও।’ দুপঁ বললো। ‘ঘটনার ভিতরে যে অস্বাভাবিকতা আছে, তা ওরা ধরতে পারেনি। পুলিশও ঘটনার নৃশংসতা দেখছে, নিষ্ঠুরতা দেখছেÑ কিন্তু এসবের ভেতরে ব্যতিল্ডমী যে ব্যাপারগুলো আছে, তা পুলিশের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছেÑ অথবা সেটাকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখানে দেখতে হবেÑ অস্বাভাবিক কী ঘটেছে, যা অন্য কোনো খুনের ঘটনায় দেখা যায় না। তাহলেই রহস্যের সমাধান পেয়ে যাবো আমরা।’ আমি আরও কিছু শোনার আশায় বন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।  ‘একজনের অপেক্ষা করছি আমরা।’ দরজার দিকে দেখিয়ে বললো দুপঁ। ‘খুব সম্ভব লোকটা নির্দোষ। তবে ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সে জড়িত। আশা করি আমার অনুমান ঠিকÑ এই অনুমানের উপরেই নির্ভর করছে সবকিছু। লোকটা আসতে পারে, আবার নাও আসতে পারে। যদি আসে, তাহলে তাকে আটকাতে হবে। এই নাও পিস্তল, সঙ্গে রাখো।’  হাত বাড়িয়ে পিস্তলটা নিলাম। যদিও দুপঁ কী বলছে তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। তবে আগেও দেখেছি, এ রকম সময় দুপঁ আপন মনে কথা বলতে থাকে। এখনো তাই করছে সেÑ যদিও আমাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন নিজের সঙ্গে মনোলগ চলছে তার।  ‘এ বিষয়ে আমরা এখন নিশ্চিতÑ’ বলে চললো দুপঁ, ‘সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে যে দুটো কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তা মা-মেয়ের নয়। এবার মেথড অব এলিমিনেশন ব্যবহার করা যাক। মা মেয়েকে হত্যা করে তারপর নিজে আত্মহত্যা করেছেনÑ এই সম্ভাবনা আমরা নাকচ করে দিতে পারি। কেননা জবানবন্দি থেকে জানা যায় মা-মেয়ের সম্পর্ক ভালো ছিল। এ ছাড়াও নাকচ করার বড় একটা কারণÑ মেয়েকে চিমনি দিয়ে ওভাবে ঠেসে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া মাদাম এসপানায়ার শক্তিতে কুলোবে না। 

ডিলান টমাসের কবিতা

ডিলান টমাসের কবিতা

ডিলান টমাস বিশ শতাব্দীর একজন খ্যাতনামা কবি ও সাংবাদিক। ১৯১৪ সালের ২৭ অক্টোবর ওয়েলসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন গ্রামার স্কুলের শিক্ষক, মা ছিলেন কৃষকের মেয়ে। কবির শৈশব কাটে ওয়েলসে। অল্প বয়সেই তিনি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনার বিশাল কাজ সমাধা করেন। স্কুলে তিনি ভালো করেননি কারণ স্কুলে তার মন বসেনি। ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন সাউথ ওয়েলস ইভেনিং পোস্টে। পশ্চিমের কবিতায় টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ বি ইয়েটসের পর স্মরণীয় নাম ডিলান টমাস।  ১৯৩৪ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘১৮টি কবিতা’ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ইংরেজিভাষী পাঠকের কাছে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। ১৯৩৬ সালে টোয়েন্টি ফাইভ পোয়েমস নামে প্রকাশিত হয় ডিলান টমাসের ২৫টি কবিতার বই। ১৯৪৭ সালে কবি ডিলান টমাসের সোসাইটি অফ অথরস একটা ভ্রমণ বৃত্তি দেয়। তখন তিনি তার পরিবার নিয়ে ইতালিতে যান এবং ফ্লোরেন্সে থাকাকালীন তিনি ইন কান্ট্রি স্লিপ এবং আদার পোয়েমস (১৯৫২) লেখেন, যার মধ্যে রয়েছে তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা, ‘উড় হড়ঃ মড় মবহঃষব রহঃড় ঃযধঃ মড়ড়ফ হরমযঃ.’ কবি ডিলান টমাসের কবিতার বিষয় নস্টালজিয়া, জীবন, মৃত্যু ও যুদ্ধ বিরোধিতা।

বাংলা কবিতায় ইউরোপীয় কাব্যানুষঙ্গ

বাংলা কবিতায় ইউরোপীয় কাব্যানুষঙ্গ

বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি পাশ্চাত্য, রাশিয়ান, ফরাসি প্রভৃতি ভাষার সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। অনেকের মধ্যেই এ রূপান্তর চেষ্টা বিদ্যমান ছিল। এ প্রসঙ্গে টি. এস. ইলিয়টের ‘দ্য মিউজিক অব পোয়েট্রি’ গ্রন্থের ‘ঋড়ৎসং যধাব ঃড় নব নৎড়শবহ ধহফ ৎবসধফব’ কথাটি গ্রহণযোগ্য। বোদলেয়ার রচিত একটি গদ্যগ্রন্থ ‘খবং ঋষবঁৎং ফঁ গধষ’ এ আধুনিক কবিতার ধরন যৌক্তিকভাবে চিহ্নিত হয়েছে। বাংলার কবিগণ নিজস্ব ভাষা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ লক্ষ্য রেখে রাশিয়ান বাস্তববাদ, ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদ, মার্কসবাদী তত্ত্ব, ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষণকে তাঁদের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ঠাঁই দিয়েছেন। ফলে রূপান্তরিত কবিতা নতুনমাত্রা লাভ করে সাবলীল হয়ে পাঠকচিত্তকে জয় করেছে। বাংলা কবিতা অনূদিত হয়ে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে না পৌঁছালেও, বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটাতে বাংলার কবিরা পিছিয়ে ছিলেন না। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলাভাষা ও কবিতায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রয়োগ করেন। তাঁর এ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলা কাব্য সাহিত্যে আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে। অনুরূপভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহুমাত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া বাংলা কবিতায় আধুনিকতার ঘ্রাণ ছড়িয়ে দেয়।